সন্তানকে বাঁচাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চাইলেন বাবা

ইউসুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধুচন্দা হলরোডের বাসিন্দা রিপন চন্দ্র শীল। বিগত ৩০ বছর ধরে পৌর শহরের একটি স্যালুনে নরসুন্দর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সেখান থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জনে কোনো রকমে চলে তার সংসার। রিপন চন্দ্র শীলের সংসারে রয়েছে স্ত্রীসহ এক ছেলে, এক মেয়ে। তবে হঠাৎ করেই একমাত্র ছেলের অসুস্থতায় সব যেন এলোমেলো হয়ে যায় রিপনের। ১৬ বছর বয়সী সন্তান নিরব চন্দ্র সিংহ এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল।
তবে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন রিপন চন্দ্র শীল। ছেলের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে ধার-দেনা আর মানুষের সহযোগিতায় ব্যয় হয়ে গেছে লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয় বহণ করতে গিয়ে এখন রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রিপন।
তিনি জানান, গত ৯ মার্চ হঠাৎ করে আমার ছেলের প্রচন্ড মাথা ব্যথা, জ্বর ও বমি শুরু হয়। এরপর তাকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তখন ছেলের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে বাসায় নিয়ে যাই। তবে একদিনের মাথায় আবারও আগের সমস্যা দেখা দেয়। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যাই। সেখানে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ছেলেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর ব্রেইন স্ট্রোকের পাশাপাশি ধরা পড়েছে টিবি রোগও। বর্তমানে আমার ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭ তলার ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের মেডিসিন বিভাগের ৬ নম্বর রুমের ৩১ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছে।
রিপন আরও বলেন, কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করে সংসার চালাই। বর্তমানে ছেলের এমন অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। নিজেরও কোনো সঞ্চয় নেই। প্রথম থেকেই মানুষের থেকে ধার-দেনা আর সহযোগিতা নিয়ে ছেলের চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর পারছি না। ছেলেটা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো। তবে ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাসের কারণে তা আর হলো না। তার সহপাঠীরা নিয়মিত পরীক্ষা দিলেও আমার একমাত্র ছেলেটা এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এই ছেলেকে নিয়ে বহু স্বপ্ন ছিল আমার। তবে তার অসুস্থতার কারণে এখন সব স্বপ্নই ভেঙে যাচ্ছে। ছেলেকে সুস্থ্য করতে দরকার আরও টাকা। চিকিৎসক বলেছেন আমার ছেলেকে সুস্থ্য করে তুলতে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা করাতে হবে। ইতোমধ্যে মানুষের থেকে অনেক ধার-দেনা করে ফেলেছি। বাকি চিকিৎসা কিভাবে করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই ছেলেকে ঢাকায় হাসপাতালে রেখে এলাকায় এসে বাজারের বিভিন্ন দোকানদার ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা তুলছি। এতে আমাকে স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী, শিক্ষার্থী ও তরুণ-যুবকরা সহযোগিতা করছেন। তারা মিলেই গত কয়েকদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ছেলের সুস্থতার জন্য সহযোগিতা তুলছি। জানি না এতে কতটুকু কী হবে। তবে আমি চাই সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় আমার একমাত্র ছেলে আবারও সুস্থ হয়ে নিয়মিত পড়ালেখা করবে। এজন্য আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৩০৬৯৯৮১৪৫ (বিকাশ-নগদ) এই নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করছি।

স্বেচ্ছাসেবী রাহাত হাসান রুমি ও মো. জুনায়েদ বলেন, রিপন চন্দ্র শীল সত্যিই অনেক অসহায়। তার একমাত্র ছেলে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন। ছেলের চিকিৎসা ব্যয় বহণ করতে গিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। তাই আমরা কয়েকজন মিলে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পথচারীদের কাছ থেকে সহযোগিতা তোলার চেষ্টা করছি। এতে করে কিছুটা হলেও তার উপকার হবে। তবে তার মেধাবী ছেলের দ্রুত সুস্থতার জন্য সকলকে মানবিক দিক বিবেচনা করে নিজ নিজ স্থান থেকে অসহায় রিপন চন্দ্র শীলকে আর্থিক অনুদান প্রদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা চাই রিপন চন্দ্র শীলের ছেলেটা সুস্থ্য হয়ে আবারও সুন্দরভাবে পড়ালেখা করুক।

রিপন চন্দ্র শীলকে সহযোগিতার বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ জানান, ওই ব্যক্তি তার ছেলের অসুস্থতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করলে তাকে সহযোগিতা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »