গত মাসে পশ্চিম আফ্রিকায় সমুদ্রে ডুবে প্রাণ হারানো ৪৪ জনের মধ্যে চার পাকিস্তানির মরদেহ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মরক্কো থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে চারজনের মরদেহ ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে আনা হয়৷ পরে পাঞ্জাবে নিজ নিজ ঠিকানায় তাদের দাফন করা হয় ৷
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়,গত ২ জানুয়ারি মৌরিতানিয়া থেকে প্রায় ৮০ জনকে নিয়ে একটি নৌকা সমুদ্রে যাত্রা করে ৷ এই পাকিস্তানিরা সেই নৌকায় ছিলেন ৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্পেনভিত্তিক এনজিও ওয়াকিং বর্ডার্সের তথ্য অনুযায়ী, মরক্কোর বন্দর ডাখলার কাছাকাছি স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার পথে নৌকাটি ডুবে যায় ৷
ওয়াকিং বর্ডার্স জানিয়েছে এই ঘটনায় অর্ধশত অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে যাদের ৪৪জনই পাকিস্তানি৷ পাকিস্তান সরকার এরই মধ্যে জীবিত উদ্ধার ২২জনকে নিজ দেশে ফিরিয়ে এনেছে ৷ ১৩ টি মরদেহ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে ৷ এর আগে জীবিত উদ্ধার ২২ জনকে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে ৷
নিহত একজনের ভাই মোহাম্মদ আদনান বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন মানবপাচারকারীরা অর্থ লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বে তার ভাইসহ অন্য অভিবাসীদের নির্যাতন করে এবং সমুদ্রে ফেলে দেয় ৷ আদনান জানান ভাইকে ইউরোপে পাঠাতে তার পরিবার স্থানীয় এক মানবপাচারকারীর সঙ্গে ৫০ লাখ রূপির (১৮ হাজার ডলার) চুক্তি করেছিল ৷ এর মধ্যে ৪০ লাখ রুপি (১৪ হাজার ডলার) তারা অগ্রিম দিয়েছেন ৷ বাকিটা পৌঁছানোর পর দেয়ার কথা ছিল ৷ এরমধ্যেই নৌকাডুবির খবর পান তারা ৷
বিমানবন্দরে কায়সার ইকবাল নামের একজনের লাশ গ্রহণের জন্য এসেছেন তার ভাই সমর ইকবাল৷ তিনি জানান, সবশেষ পাঠানো বার্তায় তার ভাই জানিয়েছিলেন তিনি নৌকায় উঠছেন ৷ এরপরই তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷
জীবিত উদ্ধার হওয়াদের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন নৌকাটি ডুবে যায়নি, বরং আফ্রিকান মানবপাচারকারীরা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদেরকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেয় ৷ তবে এ বিষয়ে সরকারি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি ৷
এই ঘটনার পর ১৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন ৷ দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানসহ বেশ কয়েকজন সরকারি অভিবাসন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য বরখাস্তের কথা জানিয়েছে পাকিস্তানের সরকার ৷
বিপজ্জনক আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর বিপুল অভিবাসী পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে স্পেনের ক্যনারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন ৷ ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় প্রতি বছর কয়েকশ পাকিস্তানি প্রাণ হারাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছে এপি ৷
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস