জার্মানির সংসদে পাস হওয়া অভিবাসন বিষয়ক প্রস্তাব

জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে ৷ সিডিইউর উত্থাপিত এই প্রস্তাবনায় দেশটিতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে

ইউরোপ ডেস্কঃ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, সংসদে পাশ হওয়া এই প্রস্তাবনা অভিবাসী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কিংবা শরণার্থীদের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে ?

সিডিইউর প্রধান ফ্রিড্রিশ ম্যার্ৎস গত ২৮ জানুয়ারি সংসদে প্রস্তাবটি পেশ করেন এবং ২৯ জানুয়ারি এটি সংসদে পাশ হয়৷ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ৩৪৮টি এবং বিপক্ষে ৩৪৫টি৷ মূলত কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির সমর্থন থাকায় পাশ হয় প্রস্তাবটি ৷

জার্মানির সংসদের প্রস্তাবনা পাশ হওয়ার মানে হলো এই যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে৷ এমন প্রস্তবনা বাস্তবায়নে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ সাধারণত কোনো আইন পাশের সময়ে সংসদে এমন প্রস্তাবনা তোলা হয়৷ পাশ হলে, এই প্রস্তাবনা ওই আইনের পরামর্শক হিসেবে কাজ করে ৷

সিডিইউর এই প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে বলা যায়, জার্মান সংসদে ‘ইনফ্লাক্স লিমিটেশন অ্যাক্ট‘ নামের আইনের খসড়া উত্থাপনের আগে এটি পাশ হয়েছে ৷

সিডিইউ/সিএসইউ প্রস্তাবিত ‘ইনফ্লাক্স লিমিটেশন অ্যাক্ট’ শুক্রবার দেশটির সংসদে উত্থাপনের কথা রয়েছে৷ আইনটি মূলত অভিবাসনকে বিশেষ করে পারিবারিক পুনর্মিলনের বিষয়য়ে সংশোধনী আনার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে ৷

সাংসদদের অনেকেই সিডিইউর এই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করছে৷ তারা বলছে, এমন প্রস্তাবনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক ৷

প্রস্তাবনায় কী আছে? প্রস্তাবনায় অনিয়মিত পথে জর্মানিতে প্রবেশ ঠেকাতে, জার্মানিতে অবস্থানরত আশ্রয়প্রাথীদের মধ্যে যাদের আশ্রয়আবেদন বাতিল হয়েছে তাদের এবং প্রত্যাবাসন বিষয়ে পাঁচটি ধারা রয়েছে ৷

এগুলো সীমাস্তে স্থায়ী নজরদারি আরোপ, অনিয়মিত পথে জার্মানিতে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের আশ্রয়আবেদন বাতিল করা, যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে তাদেরকে প্রত্যাবাসনের আগে আটক করা, প্রত্যাবাসেনর আদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশে যেন ফেরত পাঠানো যায় সেজন্য সবগুলো প্রদেশকে অধিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অপরাধের সাথে যুক্ত বা যারা ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান ওই সকল বিদেশিদের বেলায় আইন প্রক্রিয়া আরো কঠোর করা ৷

সম্প্রতি জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ এরমধ্যে রয়েছে জলিংগেন, মানহাইম, মাগডেবুর্গ এবং আশাফেনবুর্গের হামলার ঘটনা৷ এসব হামলায় বিদেশিদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷ এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশটির রাজনীতিতে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷

এই পরিস্থিতি ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে সামনে রেখেই অভিবাসন বিষয়ে সংসদে প্রস্তাব উঠিয়েছে সিডিইউ ৷
প্রসঙ্গত, নির্বাচন বিষয়ক জনমত জরিপে এই দলটি প্রথম অবস্থানে রয়েছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সিডিইউর নেতৃত্বে জার্মানির পরবর্তী সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে ৷

প্রস্তাবনার ফলে অভিবাসী, শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের উপর কী প্রভাব পড়বে ? জার্মানির বিধি অনুযায়ী, এই ধরনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ এমন প্রস্তাবনাকে ভবিষ্যতে নতুন আইন প্রণয়নের ইচ্ছার প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে ৷

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নির্বাচনে জয় লাভ করে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে আসলে এই প্রস্তাবনাটি সিডিইউকে জোটের সাথে আলোচনায় সুবিধা দিতে পারে৷ জোট সরকারে নিজেদের অবস্থান সংখ্যালঘু হলেও এটিকে তারা আইনে রুপান্তরের প্রস্তাব করতে পারবে, এমনকি জোটসঙ্গীরা এর বিরোধিতা করলেও ৷

এমন পরিস্থিতিতে তারা কট্টরপন্থি দল এফডিপি কিংবা এফডিপির উপরও নির্ভর করতে হতে পারে৷ যদিও বিষয়টি নির্ভর করবে এফডিপি নিয়ম অনুযায়ী শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট পেয়ে সংসদে প্রবেশ করতে পারছে কি না৷ আবার আইন হিসেবে প্রস্তাবনাটিকে পাশ করা না গেলেও সংসদে বিশদ আলোচনার ইস্যু হিসেবে এটি উপস্থাপিত হতে পারে ৷

উল্লেখ্য, সিডিইউর প্রস্তাবনাটি পাশ হতে কট্টর ডানপন্থি এএফডির সমর্থন প্রয়োজন হয়েছিল ৷ বিষয়টি জার্মান রাজনীতিতে এক নতুন প্রেক্ষাপটের জন্ম দিয়েছে কেননা অতীতে জার্মান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এএফডির সাথে কাজ না করার বিষয়ে এক ধরনের মতৈক্য ছিল৷ আর তাই এএফডির সমর্থন নিয়ে প্রস্তাবনায় পাশের বিষয়টি অনেক সমালোচনার জন্ম দেয় ৷

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »