অস্ট্রিয়ান ফেডারেল চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার বুলগেরিয়া-তুর্কি সীমান্ত পরিদর্শনের জন্য বুলগেরিয়া পৌঁছেছেন
ব্যুরো চীফ, অস্ট্রিয়াঃ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার বুলগেরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী প্লোভডিভ বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাদেরকে স্বাগত জানান বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেউ। পরে চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারকে বুলগেরিয়ান সামরিক বাহিনী কর্তৃক গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানায়, বুলগেরিয়া সফরের পূর্বে চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাহ্যিক সীমান্ত সুরক্ষার আহবান জানিয়েছেন। তিনি ইইউ নেতৃবৃন্দকে ইইউর বহিরাগত সীমান্ত রক্ষায় আরও সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে, গ্রীক মডেলের উপর ভিত্তি করে বুলগেরিয়ার দিকে একটি শক্ত সীমান্ত বেড়ার জন্য ইইউ তহবিল গঠনের আহবান জানান।
এপিএ আরও জানায়, এখন অবধি ইইউ কমিশন ইইউর বাহিরের সীমান্তে দেয়াল, বেড়া এবং কাঁটাতারের জন্য অর্থ দিতে অস্বীকার করে আসছে। এখানে উল্লেখ্য যে, অবৈধ অভিবাসনের কারণে অস্ট্রিয়া ডিসেম্বরে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার শেনজেন যোগদানে ভেটো দেয়। সফরের আগে দেয়া বিবৃতিতে চ্যান্সেলর নেহামার জোর দিয়ে বলেন যে, অস্ট্রিয়ার শেনজেন ভেটো “পরিস্থিতির মৌলিক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত” কার্যকর থাকবে।
অস্ট্রিয়ার অভিযোগ করে আসছে অবৈধ অভিবাসীরা তুরস্ক থেকে বুলগেরিয়া হয়ে অস্ট্রিয়ায় আসে। অস্ট্রিয়া যুক্তি দেয় যে ২০২২ সালে অস্ট্রিয়ায় এক লাখেরও বেশি অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী অস্ট্রিয়ায় আগত অবৈধ অভিবাসীদের শতকরা প্রায় ৪০ শতাংশ তুরস্ক থেকে বুলগেরিয়া হয়ে অস্ট্রিয়ায় এসেছে।
এই অবৈধ অভিবাসীরা প্রধানত আফগানিস্তান, সিরিয়া, মরক্কো, মিশর এবং সোমালিয়া থেকে আগত। বুলগেরিয়ান অভিবাসন গবেষক তিহোমির বেজলভ এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা ঘনিষ্ঠভাবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উচ্চ সংখ্যক অরিপোর্ট করা মামলার উল্লেখ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বুলগেরিয়া পৌঁছার পর অভ্যর্থনা শেষে চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্নার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রপতি রুমেন রাদেউ এবং বুলগেরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান দেমারদঝিয়েভের সাথে একত্রে হেলিকপ্টারে করে সীমান্তে যান। পূর্ব পরিকল্পিত কর্মসূচি অনুযায়ী তারা বুলগেরিয়া-তুরষ্ক সীমান্তবর্তী এলচোও শহরের কাছে সীমান্ত পুলিশের আঞ্চলিক সমন্বয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
সীমান্ত পরিদর্শন শেষে সোফিয়া ফেরত যাওয়ার পর অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার এবং বুলগেরিয়ার সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী গালাব ডোনেভের মধ্যে একটি বৈঠকেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে,বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ ভিয়েনায় এই মাসের শুরুতেই একটি নববর্ষের কনসার্টে আসলে চ্যান্সেলর নেহামার বুলগেরিয়া সফরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই সফরে চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্নারের সাথে অস্ট্রিয়ান ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিসের চোরাচালান বিরোধী প্রধান জেরাল্ড ট্যাজগারনও রয়েছেন।
জেরাল্ড ট্যাজগারন আগাম ব্যাখ্যা করেছেন যে, পূর্ববর্তী সীমান্ত বেড়া, বুলগেরিয়ান কর্তৃপক্ষ দ্বারা একটি “প্রযুক্তিগত বাধা” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, বেশিরভাগ অংশের জন্য এক সারিতে ১৫৫ কিলোমিটার ছিল এবং অপরাধী চোরাকারবারীদের জন্য একটি গুরুতর বাধা তৈরি করেনি। মাত্র ৮০ কিলোমিটার দুটি সারিতে ছিল। চোরাকারবারিরা ক্রমাগত বিদ্যমান সীমান্ত বেড়ার দুর্বল পয়েন্টগুলোকে কাজে লাগাবে। তুরস্ক থেকে বুলগেরিয়ায় অভিবাসনের চাপ এখনও অনেক বেশি, তাই চোরাচালান মোকাবেলায় “প্রযুক্তিগত বাধা” সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ট্যাজগারন বলেছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস