অস্ট্রিয়ায় করোনার নতুন সংক্রমণের বিস্তার অব্যাহত

করোনার নতুন প্রাদুর্ভাবের ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে

ব্যুরো চীফ, অস্ট্রিয়াঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনা বিশ্বের অনেক দেশে ভুলে গেলেও অস্ট্রিয়ায় তা আবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অস্ট্রিয়ার করোনার টাস্ক ফোর্স গেকো,করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন সহ দেশের বিশেষজ্ঞ সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম OE24 এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে,করোনার নতুন প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক আকারে বৃদ্ধির ফলে বাধ্যতামূলক মাস্ক সহ অন্যান্য বিধিনিষেধের ব্যাপারে সরকারের কোয়ালিশন ও দেশের সামাজিক অংশীদারদের মধ্যে প্রচণ্ড মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

দেশের অংশীদাররা সুপারমার্কেট সহ ব্যবসা-বানিজ্যে বাধ্যতামূলক FFP2 বা N মাস্ক পড়ার বিরোধীতা করছে। তাছাড়াও কোয়ালিশন সরকারের উভয় দলের ভিতরেও বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া নিয়ে প্রচণ্ড বাক-বিতণ্ডা চলছে। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণী Johannes Rauch ইতিমধ্যেই দেশে শীঘ্রই বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়ার নিয়ম ফেরত আসার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে রাজধানী ভিয়েনার গণপরিবহন ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যতীত আর কোথাও মাস্ক পড়ার বাধ্যকতা
নাই।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ দেশের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে অস্ট্রিয়ায় করোনার নতুন প্রাদুর্ভাবের ফলে আগামী দিনগুলিতে হাসপাতালের ওপর আরও প্রচণ্ড চাপ বাড়াবে। চলমান অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ হাসপাতালের রোগীদের জন্য আরও বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাসের শেষ নাগাদ কোভিড হাসপাতালের রোগীদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অস্ট্রিয়ার হাসপাতালের করোনার সাধারণ ওয়ার্ডে ৩,৯০০ জন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমান করোনা তরঙ্গের ফলে হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অক্টোবরের শেষের দিকে একটি প্রাথমিক শিখরে পৌঁছানো যেতে পারে।

অস্ট্রিয়ার কোভিড পূর্বাভাস কনসোর্টিয়াম অনুমান করছে যে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে (২৬ অক্টোবর) হাসপাতালের সাধারণ করোনা ইউনিটে রোগীদের সংখ্যা ২,৩৬০ জন থেকে ৩,৯০০ জন ভর্তি থাকার সম্ভাবনা আছে। আর অস্ট্রিয়ার হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) করোনার রোগীর সংখ্যা ১৩০ জন থেকে ২০০ জন হতে পারে।

অস্ট্রিয়ার হাসপাতালগুলিতে সার্স-কোভিড-২ -এর সাথে সম্পর্কিত অপরিকল্পিত স্বাস্থ্য কর্মীদের ঘাটতি আগের সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে। নতুন প্রাদুর্ভাবের ফলে হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অস্ট্রিয়ায় শীত বাড়ার সাথে সাথেই করোনার সংক্রমণের এই নতুন প্রাদুর্ভাবের বিস্তার লাভ করেছে। তবে বর্তমানে সমস্ত বয়সের ক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণের বিস্তারের সংখ্যার সমতলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ইতিমধ্যে করোনার সংক্রমণের বিস্তার উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। “স্বতন্ত্র ফেডারেল রাজ্যে, কেস সংখ্যা হ্রাসের দিকে একটি অস্থায়ী প্রবণতা বিপরীত হতে পারে ইতিমধ্যেই ঘটেছে,” পূর্বাভাস বলে।

যাইহোক, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে মৌসুমী শীতের প্রভাব পুরোপুরি সেট হয়ে গেলে সংক্রমণের চাপ আবার বাড়বে। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যা কতটা বাড়বে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। কোভিড প্রগনোসিস কনসোর্টিয়াম উল্লেখ করেছে যে সন্দেহভাজন সংখ্যার অরিপোর্ট করা মামলা এবং জনসংখ্যার হ্রাস পাচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে কোনও ডেটা নেই।

অস্ট্রিয়ায় বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পূর্বের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়,শীত প্রধান মধ্য ইউরোপের আল্পস পর্বতমালার এই দেশে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার মানুষ ঠাণ্ডা জনিত ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করে। এদিকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার ফ্রি মেট্রো পত্রিকা Heute গতকাল তাদের এক প্রকাশনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে,অস্ট্রিয়া যারা করোনার তৃতীয়া বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেনি,তাদের করোনার গ্রিন পাসের মেয়াদ আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৭,৮৪৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,১৯২ জন।

অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৩,৮৪০ জন,NÖ রাজ্যে ৩,২৬৮ জন,Steiermark রাজ্যে ২,৭৯৯ জন,Tirol রাজ্যে ১,৩৬৬ জন,Kärnten রাজ্যে ১,২৮০ জন,Salzburg রাজ্যে ৯৩৫ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৬৯৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৪৭৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫২,৯২,১২৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ২০,৮৮০ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫১,২৭,০৭১ জন। অস্ট্রিয়াতে বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,৪৪,১৭৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১৩০ জন এবং হাসপাতালের করোনার সাধারণ ইউনিটে ভর্তি আছেন ২,৪৬৩ জন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »