বাংলাদেশ ডেস্কঃ জাতীয় সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই। রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলো জানিয়েছে, তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুর–২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন। গত সপ্তাহে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলাতে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।তার স্বামী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩শে নভেম্বর তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দি ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বিপর্যয়ের মুখে পড় আওয়ামী লীগ। সেই সংকটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এর আগে ১৯৬৯ থেকে ৭৫ পর্যন্ত সাজেদা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সাজেদা চৌধুরী একাধিবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর সাজেদা চৌধুরীকে প্রথমবার জাতীয় সংসদের উপনেতা করা হয়। এরপর দশম সংসদেও তিনি উপনেতার দায়িত্ব পান।
রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা, ১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন।
তিনি ফরিদপুরের কৃষাণপুর ইউনিয়ন (ফরিদপুর-২; নগরকান্দা, সালতা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দশম সাধারণ নির্বাচনেও তিনি এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন।
দুর্নীতির অভিযোগ সম্পাদনা: ২০০৮ সালের ১০ই জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাজেদা চৌধুরী’র বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১.৩৮ মিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ দাখিল করে ১/১১ সরকার। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে ২০০৮ সালের ১৮ই নভেম্বর বাংলাদেশ হাইকোর্ট মামলাটি স্থগিত করেন, পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আবারও ওঠে। হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। ২০১০ সালের ২৯শে নভেম্বর হাইকোর্ট মামলায় চৌধুরীর বিরুদ্ধের অভিযোগ সুসংগঠিত না হওয়ায় মামলাটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেন।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস