রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

ব্রিটেনের দীর্ঘতম সময় রাজত্বকারী, রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার

বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার থেকে ১১ সেপ্টেম্বর রবিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তিন দিনের শোক পালন করা হবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এ উপলক্ষে ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।”

এর আগে, বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে, ৭০ বছর রাজত্ব করার পর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ (৯৬) বালমোরাল ক্যাসেলে মারা গেছেন।

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথেে মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের নব নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাসকে সমবেদনা জানিয়ে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি লিখেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, “চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, আমি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে, আপনার প্রতি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনার মাধ্যমে মহান রাণী এলিজাবেথ দ্য সেকেন্ডের আকস্মিক মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সহানুভূতি ও সমবেদনা জানাচ্ছি।”

চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেছেন, “আমাদের আন্তরিক ভাবনা ও প্রার্থনা শোকাহত রাজপরিবারের সদস্য ও যুক্তরাজ্যের শোকাহত জনগণের সঙ্গে রয়েছে এবং আমরা মহান রাণীর বিদেহী আত্মার চির শান্তি ও মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি।”

শেখ হাসিনা তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, মহান রাণী শুধুমাত্র ২৫০ কোটি কমনওয়েলথ জনগণের স্তম্ভ ও শক্তিই ছিলেন না; বরং তিনি করুণা, মর্যাদা, প্রজ্ঞা ও সেবার প্রতীক ছিলেন।

বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “বিশ্বের সমসাময়িক ইতিহাসে তিনি কিংবদন্তী এবং দীর্ঘ সময় রাজত্বকারী রাজা হিসেবে মহান রাণী কর্তব্য, সেবা ও ত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের কাছে তার উৎসর্গের একটি অতুলনীয় উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, “মহান রাণী আমাদের নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণা, সাহস ও শক্তির এক অসাধারণ উৎস হয়ে থাকবেন। যুক্তরাজ্যে মহান রাণী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা এবং অটোয়া ও কিংস্টনে দুই কমনওয়েলথ সরকার প্রধানের বৈঠক চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি লন্ডনে ২০১৮ সালের সিএইওবিএম-এ আমাদের শেষ ব্যক্তিগত আলাপচারিতার প্রশংসা করি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মহান রাণীর অভিনন্দনের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ বার্তাটি ছিল; আমরা বন্ধুত্ব ও স্নেহের বন্ধন ভাগ করি, যা আমাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে এবং পঞ্চাশ বছর আগের মতো এটি আজও গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে বলেন, “তার দুঃখজনক মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকেই হারালাম না, একজন প্রকৃত অভিভাবককেও হারালাম।”

সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার জন্য, রাজপরিবারের সদস্য ও যুক্তরাজ্যের জনগণ, রাজ্য এবং কমনওয়েলথের সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »