ভোলায় বাড়ছে ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ার, মাসে আক্রান্ত চার শতাধিক

ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলায়  প্রতিদিন ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ার রোগে আক্রান্ত হয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। তবে  ডেঙ্গুর তুলনায় নিউমোনিয়ার প্রকোপ তুলনামূলক কয়েকগুন বেশী।

ভোলা সদর হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে রোগীদের জন্য নেই আলাদা ইউনিট। শয্যা সংকট থাকায় একটি বেডে গড়ে ২-৩জন রোগীকে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে অনেকটা চিন্তিত রোগীর স্বজনরা।ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট ও উন্নত চিকিৎসা সেবার দাবী স্বজনদের।

জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ জানায়, গত এক মাসে জেলায় ৩৮৫ জন শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৩ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসাধীন আছেন ২ জন। অন্যদিকে নিউমোনিয়া আক্রান্ত আছেন ১৮ জন।
এদিকে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট রাখা হয়নি। অন্য সাধারন রোগীদের সাথেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে।   এতে অন্য রোগীদের ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।  তবে কি কারনে ডেঙ্গু ছড়িয়ে তা সঠিক কারন জানা নেই কারো চিকিৎসকরা বলছেন রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ ঝুঁকিতে নেই। সবাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন।

অন্যদিকে  গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন এবং গরমের প্রভাবে বেড়েছে শিশুদের নিউমোনিয়া। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে।

ভোলা সদর হাসপাতালে কথা হয় রোগীর স্বজন জিয়া উদ্দিন সাথে। তিনি বলেন, এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। যদিও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান  নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। তবে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট রাখার নিয়ম থাকলেও  ভোলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য আদালা ইউনিট নেই, এতে রোগীর সাথে স্বজন এবং অন্য রোগীদের ডেঙ্গু ছড়িয়ে পরার ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা আশা করবো বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখবেন।

আরেক রোগীর বোন মরিয়ম বলেন, প্রথমে রোগীর জ্বর হয়েছে। এরপর ডাক্তার পরামর্শে পরীক্ষা করলে তার ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। এ রোগটি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।

ভোলা  হাসপাতালের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর স্বজনরা। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও হাসপাতালের ভেতর এবং বাইরের চারপাশের পরিবেশ অস্বাস্থকর, নোংরা। এতে রোগীদের ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি।

ভোলা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে,  সেখানে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েই চলছে। একটি বেডে গড়ে ২-৩ জন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।হঠাৎ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ায় আতংকিত রোগীর স্বজনরা।

রোগীর স্বজন সালাউদ্দিন ও সেলিম বলেন, হঠাৎ করে শিশুরা ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর, স্বাসকষ্ট ও নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত একজন নার্স জানান, হাসপেতালে প্রতিদিন যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের বেশিরভাগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। তাদেরকে প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি।

ভোলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা: রাসেল আহমেদ ভূইয়া বলেন, ঢাকার সাথে নৌ পথে ভোলার কানেকটিং রয়েছে, যাতায়াতের সময় লঞ্চের পরিবেশ বা অন্য কোন কারনে ডেঙ্গু ছড়াতে  পারে। এছাড়াও বাসার জমে থাকা পানি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বা অসচেতনতার কারন  থেকেও  ছড়াতে পাররে। তবে আমরা রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি।

অন্যদিকের আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শিশুদের নিউমোনিঢা ছড়িয়ে পড়েছে যা বিগত সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি।  অভিভাবকদের আরও যত্নবান হতে হবে।  তাছাড়া আমরা চিকিৎসক-নার্সরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

মনজুর রহমান/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »