বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই

নব নিযুক্ত বৃটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এক বিবৃতিতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। তবে রাণীর শেষকৃত্যের তারিখ সম্পর্কে এখনও কিছু জানানো হয় নি

ব্যুরো চীফ, অষ্ট্রিয়াঃ বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে,ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (৯৬) মৃত্যুবরণ করেছেন।এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে রানির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এক বিবৃতিতে প্রাসাদ থেকে জানানো হয়, রানির স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। এর পরপরই রানি এলিজাবেথকে দেখতে স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল প্রাসাদে ছুটতে শুরু করেন রাজপরিবারের সদস্যরা।

গত কয়েক মাস ধরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করেছিল। অসুস্থতার কারণে প্রথা ভেঙে গত মঙ্গলবার বামিংহাম প্যালেসে নয় বরং স্কটল্যান্ডে তার গ্রীষ্মকালীন বাসভবন ব্যালমোরাল ক্যাসেলে নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে দায়িত্ব প্রদান করেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

এলিজাবেথ লন্ডনের মেফেয়ারে ইয়র্কের ডিউক এবং ডাচেস (পরে রাজা জর্জ এবং রাণী এলিজাবেথ)-এর প্রথম সন্তান হিসেবে ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল
জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ১৯৩৬ সালে নিজের ভাই রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পরে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। আর সেই সময় থেকেই এলিজাবেথ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তিনি বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষিত হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্থলসেনাবাহিনীর নারী বিভাগ অগজিলিয়ারি টেরটোরিয়াল সার্ভিসে (Auxiliary Territorial Service) কর্মরত থেকে জনসাধারণের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন।

১৯৪৭ সালে তিনি গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে বিয়ে করেন। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চারটি সন্তান হয়: ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস; রাজকুমারী অ্যান; ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু; এবং ওয়েসেক্সের আর্ল যুবরাজ এডওয়ার্ড।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বাবা রাজা জর্জ মারা গেলে এলিজাবেথ কমনওয়েলথের প্রধান হন এবং সাতটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রেজিমেন্টের প্রধান হন। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং সিলন।

১৯৫৬ এবং ১৯৯২ সালের মধ্যে অঞ্চলগুলি স্বাধীনতা লাভ করার সাথে সাথে তার রাজ্যের সংখ্যা বিভিন্ন রকম হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং সিলন (শ্রীলঙ্কার নাম পরিবর্তন করা হয়) সহ রাজ্যগুলি প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে। তার অনেক ঐতিহাসিক পরিদর্শন এবং সভার মধ্যে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রে একটি রাষ্ট্রীয় সফর এবং পাঁচবার পোপের দর্শন বা সফর অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলিতে ১৯৫৩ সালে তার রাজ্যাভিযান এবং ১৯৭৭, ২০০২ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে তার রৌপ্য, স্বর্ণ এবং হীরক জয়ন্তী উদ্‌যাপন অন্তর্ভুক্ত। ২০১৭ সালে, তিনি নীলকান্তমণি জয়ন্তীতে পৌঁছানো প্রথম ব্রিটিশ রাজ্যশাসক হয়েছিলেন। তিনি সবচেয়ে দীর্ঘজীবী এবং সবচেয়ে দীর্ঘকাল ধরে শাসনকারী ব্রিটিশ রাজ্যশাসক।

তিনি বিশ্বের ইতিহাসের দীর্ঘতম শাসনকারী নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত রাজ্যশাসক ছিলেন। এলিজাবেথ মাঝে মধ্যে প্রজাতন্ত্রের অনুভূতি এবং রাজপরিবারের চাপে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিশেষত তার সন্তানদের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে ১৯৯২ সাল ছিল তার জন্য এক “ভয়াবহ বছর” (“অ্যানাস হরিবিলিস” Annus horribilis)। এরপর ১৯৯৭ সালে তার প্রাক্তন পুত্রবধূ ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েলসের মৃত্যুর পরেও তিনি সমালোচিত হন। যাই হোক যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর ছিল।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »