নড়াইলে লালন সাধককে মারধর ও বাদ্যযন্ত্র ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগে মানববন্ধন

নড়াইল থেকে ফরহাদ খানঃ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রামের লালন সাধক হারেজ ফকিরকে (৭০) মারধর করে হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, বাঁশিসহ বিভিন্ন মালপত্র ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নড়াইল প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি মলয় কুন্ডুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন-নড়াইল পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি আসলাম খাঁন লুলু, মাহবুব-ই-রসুল অরুণ, সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিটু ও শামীমূল ইসলাম টুলু, মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক প্রভাষক প্রশান্ত সরকার, চিত্রা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ইমান আলী মিলন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন শীতলসহ অনেকে।

বক্তারা বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির ওপর আঘাত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা এ ধরণের ঘটনা আর দেখতে চাই না।

গত ৩১ আগস্ট থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে হারেজ জানান, ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে স্থানীয় ভক্তদের নিয়ে গান পরিবেশন করছিলেন তিনি। এ সময় পুরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মনি মিয়ার বড় ভাই আলী মিয়া, মিন্টু শেখসহ তার লোকজন হারেজ ফকিরকে মারধর করে বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন মালপত্র ভাংচুর করে।

তবে অভিযোগ দেয়ার দু’দিন পর গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে থানায় এসে হারেজ ফকির তার আত্মীয় আলী মিয়া ও মিন্টু শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। হারেজ ফকির পুলিশকে জানিয়েছেন, তুচ্ছ ঘটনায় ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে তার আত্মীয় আলী মিয়া ও মিন্টু শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্থ বাদ্যযন্ত্রগুলো শনিবারের মধ্যে তারা হারেজ ফকিরকে কিনে দিবেন।
হারেজ জানান, তারা একে-অপরের আত্মীয়। আলী মিয়ার ফুফাতো বোন বিয়ে করেন তিনি (হারেজ)।

অভিযুক্ত আলী মিয়া বলেন, হারেজ ফকির গান-বাজনার আড়ালে গাঁজা সেবন ও বেচাকেনা করে আসছে। এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। তাকে বিভিন্ন সময় নিষেধ করা সত্তে¡ও মাদক বেচাকেনা বন্ধ হয়নি। তিনি হারেজ ফকিরের বাদ্যযন্ত্র ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত নন। আর হারেজ তাদের আত্মীয়।

কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) আমিরুল ইসলাম মনি মিয়া বলেন, হারেজকে মাদক বেচাকেনা ও সেবন করতে অনেকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু, হারেজ নিষেধ শোনেননি। আর তাকে মারধর ও বাদ্যযন্ত্র ভাংচুরের সঙ্গে তার ভাই জড়িত নন বলে দাবি করেন ইউপি চেয়ারম্যান।

এদিকে মাদক বেচাকেনাসহ গাঁজা সেবনের বিষয়টি অস্বীকার করেন হারেজ ফকির।

কালিয়া থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম বলেন, ভুক্তভোগী হারেজ ফকির এবং অভিযুক্ত আলী মিয়া ও মিন্টু শেখ একে-অপরের আত্মীয়। হারেজ ফকির তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পরে নিজ ইচ্ছায় প্রত্যাহার করেছেন। গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে থানায় এসে হারেজ ফকির তার আত্মীয় আলী মিয়া ও মিন্টু শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। হারেজ ফকির পুলিশকে জানিয়েছেন, তুচ্ছ ঘটনায় ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে তার আত্মীয় আলী মিয়া ও মিন্টু শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্থ বাদ্যযন্ত্রগুলো শনিবারের মধ্যে তারা হারেজ ফকিরকে কিনে দিবেন মর্মে পুলিশকে জানিয়েছে।

আর হারেজ ফকিরের বিরুদ্ধে গাঁজা সেবনসহ মাদকের বেচাকেনা প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা তাসমীম আলম বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নড়াইল/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »