জনদুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজন সেতুর

প্রায় ৫০ বছর ৪০ গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন খেয়া নৌকায় 

শেখ ইমন,ঝিনাইদহঃ দু’পাশে কমপক্ষে ৪০ গ্রামের মানুষের বসবাস। যাদের নিকটবর্তী শহর ও জেলা- উপজেলা শহরে যাওয়ার মাধ্যম কুমার নদে আড়–য়াকান্দি ঘাটের খেয়া পরাপার।

এলাকায় রয়েছে ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোমলমতি শিশুরাও এই আড়–য়াকান্দি ঘাটের খেয়া পার হয়ে কলেজ-বিদ্যালয়ে যায়। তবে সামান্য বর্ষা হলেই আর প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না।

ঘাটের ৬ কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো সেতু। অর্ধশত বছর কষ্ট করে ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার কুমার নদের দুই পাড়ের বাসিন্দারা চলাছল করছেন। তাদের একমাত্র ভরসা আড়–য়াকান্দি-বিষ্ণুদিয়া ঘাটের এই খেয়া নৌকা। অথচ দীর্ঘ বছর তারা এই ঘাটে একটি সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে এলজিইডি’র একটি পাঁকা সড়ক ফাজিলপুর বাজার হয়ে ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর বাজারে মিশেছে। এই সড়কটি কুমার নদ এর ধার ঘেষে চলে গেছে। এই নদের উপর শৈলকুপা উপজেলা শহরে দুইটি সেতু রয়েছে। আর ১২ কিলোমিটার দূরত্বে হাটফাজিলপুর রয়েছে আরেকটি সেতু। মাঝে আড়–য়াকান্দি ও বিষ্ণুদিয়া নামক স্থানে অর্ধশত বছর ধরে চলছে খেয়া নৌকায় পারাপার। সেখানে গিয়ে নৌকায় নদ এর দুই প্রান্তের লোকজনকে পারাপার হতে দেখা যায়। তবে কোনো যানবাহন এমনকি মটর সাইকেলও পার হতে দেখা যায়নি।

খেয়াঘাটে বসে কথা হয় আড়–য়াকান্দি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, যে স্থানে খেয়াঘাটটি রয়েছে তার দুই পাশের গ্রামগুলোতে হাজার
হাজার মানুষ বসবাস করেন। যারা বেশির ভাগ এই খেয়া দিয়ে চলাচল করেন। নদীর উত্তরে বিষ্ণুদিয়া, দামুকদিয়া, মাধবপুর, দোহা-নাগিরাট, শিতালী, দলিলপুর, কমলনগর, বগুড়া, লাঙ্গলবাঁধ, নন্দিরগাতি, ধাওড়া, ধলহরাচন্দ্র, বরিয়া, ছাঁইভাঙ্গা, কুশবাড়িয়াসহ বেশকিছু গ্রাম রয়েছে। আর দক্ষিণে রয়েছে আড়–য়াকান্দি, রয়েড়া, ভান্ডারীপাড়া, বকশীপুর, শেখড়া, গোপালপুর, বাগুটিয়া, নাকোইল, ফলিয়া, রঘুনন্দনপুর, আশুরহাট, নিত্যানন্দপুর, সাবাসপুর ও হাটফাজিলপুর। উভয় পাশের প্রায় ৪০ টি গ্রামের মানুষ এই খেয়া পার হয়ে থাকেন।

স্থানীয় জামির হোসেন জানান, এই খেয়া ঘাটকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আড়–য়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উমেদপুর বালিকা বিদ্যালয়, বাগুটিয়া জরিপ বিশ্বাস কলেজ ও বিষ্ণুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরো গড়ে উঠেছে সীমান্ত বাজার, নাগিরহাট বাজার, রয়েড়া বাজার, বকশিপুর বাজার ও শেখরা বাজার। এতো কিছুর পরও তাদের এলাকার মানুষের একটাই কষ্ট কুমার নদ এর উপর সেতু না থাকা। অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে তাদের ও তাদের ছেলে-মেয়েদের এই ঘাটে খেয়া পার হতে হয়। এতে নদ এর পানি বেড়ে গেলে প্রায়ই নৌকায় পানি উঠে যায়। এতে স্কুলগামি বাচ্চাদের কাপড় ভিজে যাওয়ার ভয়ে প্রায়ই স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। আবার পানি কমে আসলে নৌকা চলতে পারে না। তখন বাঁশের সাকো তৈরী করা হয়। যার উপর দিয়ে ঝুকি নিয়ে চলতে হয় শিশুদের।

বিষ্ণুদিয়া গ্রামের তুহিন রেজা জানান, তিনি শৈলকুপা শহরে যাবেন। নদ এর পাড়ে আধাঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঘাটে একটি মাত্র নৌকা। জনপ্রতি ৫ টাকা করে নেন মাঝি। নৌকার একটু বেশি যাত্রী না হলে ছাড়ের না। যে কারনে আধাঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। অথচ শৈলকুপা শহর যেতে তার সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। সুশান্ত বিশ্বাস স্ত্রী নিয়ে যাবেন মাগুরার আলমখালি। তাকেও বসে থাকতে হয়েছে নৌকার অপেক্ষায়।

খেয়া ঘাটের মাঝি দবির উদ্দিন জানান, শুধু আয়ের জন্য নয়, জনসাধারনকে পারাপার করতে পেশাটা ধরে রেখেছেন। সরকারি ভাবে এই খেয়া ঘাট বন্ধোবস্ত দেওয়া হয় না। এভাবে প্রতিদিন ৩/৪ শত টাকা আয় হয়, যা দিয়ে কোনরকমে সংসার চালান।

এলাকাবাসি জানান, সেতু না থাকায় পন্য পরিবহনেও তাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। বর্তমানে ১ মন কৃষি পন্য বাজারজাত করতে তাদের পরিবহন খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হয়। অনেকটা সড়ক ঘুরে আসতে হয়। অথচ সেতু হলে ওই মাল পরিবহনে খরচ হবে মাত্র ১০ টাকা।

এলাকাবাসি আরো জানান, তারা এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য ঘাটে একটি সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন। জনপ্রতিনিধিরা কথা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে এলজিইডি’র ঝিনাইদহ নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার উদ্দিন জানান, সেতু নির্মানের আপাতত কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে বিষয়টি খোজ
নিয়ে দেখবেন।

ঝিনাইদহ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »