মঠবাড়িয়ায় বিউটিশিয়ানকে হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট; পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শাম্মী আক্তার (৪০) নামের এক বিউটি পার্লারের মালিককে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১০ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় কেএম লতীফ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে। নিহত শাম্মী আক্তারের ছেলে লতীফ ইনস্টিটিউশনের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার সহপাঠীদের উদ্যোগে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের কয়েক শত  শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, দশম শ্রেণির ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল
বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বলে, তাদের সহপাঠীর মায়ের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে তারা এ প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। তারা আয়শা খানমকে বিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি জানায়।

এদিকে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (০৯ আগস্ট) রাতে পিরোজপুর পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান আজ দুপুরে জেন্নাত আলীর প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করা
হয়েছে, তা তিনি বলেননি।

গত সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শাম্মী আক্তারের (৪০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে শাম্মী আক্তারের ছেলে (১৭)
বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় হত্যা মামলা করে। এরপর পুলিশ শাম্মীর স্বামী শেখ সিরাজুল সালেকিন (৩৩) ও শাম্মীর ভাইয়ের স্ত্রী আয়শা
খানমকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। আয়শা খানম লতীফ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক।

মঙ্গলবার রাতে শেখ সিরাজুল সালেকিন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কেএম লতীফ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, শিক্ষক আয়শা খানমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ডাকা হয়েছে।

শাম্মীর বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ছোট রাজাপুর গ্রামে। তিনি মঠবাড়িয়া শহরের কে এম লতীফ সুপার মার্কেটের শাম্মী বিউটি পারলারের মালিক ছিলেন।

থানা-পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার থানা পাড়া মহল্লায় একটি ভাড়া বাড়িতে শাম্মী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন। ১৩ বছর আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে শাম্মীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাঁদের দুই ছেলে রয়েছে। দুই বছর আগে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের ব্যবসায়ী শেখ সিরাজুল সালেকিনের সঙ্গে শাম্মী আক্তারের বিয়ে হয়। সিরাজুল ঢাকায় ব্যবসা করেন। সিরাজুল মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া করতেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সিরাজুল ও শাম্মীর বিবাহবার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষে সিরাজুল ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসেন। ওই রাতে
বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়শা খানম ওই বাড়িতে যান। রাতে তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন। শাম্মী গভীর রাতে সিরাজুল ও আয়শাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে শাম্মী ও সিরাজুলের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে সিরাজুল ক্ষিপ্ত হয়ে শাম্মীর মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

শাম্মীর ছেলে ও মামলার বাদী অভিযোগে করে বলে, ঘটনার দিন সে বাড়িতে ছিল না। তার বড় ভাইও একটি মামলায় কারাগারে আছেন। হত্যার দায় এড়াতে পরের দিন সকালে সিরাজুল ও আয়শা তার মায়ের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাঁরা হত্যার ঘটনাকে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

ঘটনার পর সিরাজুল সালেকিন ও আয়শা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে যান। পরে হত্যা মামলায় তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

স্থানীয় লোকজন বলেন, মঙ্গলবার সকালে সিরাজুল সালেকিনকে নিয়ে এসআই জেন্নাত আলী শাম্মীর ভাড়া বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মামলার বিভিন্ন আলামত জব্দ করেন। এ সময় সেখানে কয়েক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। জেন্নাত এ সময় সিরাজুলকে নানা প্রশ্ন করেন। উপস্থিত সাংবাদিকেরা বিষয়টি ভিডিও করে। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে জেন্নাতকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হতে পারে।

মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (০৯ আগস্ট) দুপুরে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আসামিদের
আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ওই দিন রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদিক আহমেদের কাছে আসামি শেখ সিরাজুল সালেকিন ১৬৪ ধারার
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬ আগস্ট আসামিদের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি হবে। আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনিও জানেন। জেন্নাতকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত ভিন্ন কারণে করা হয়েছ।

এইচ এম লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »