অস্ট্রিয়ায় রাত পোহালেই ঈদ

বিভিন্ন মসজিদে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজের সময়সূচী

ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ায় প্রথম ও প্রধান ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে ভিয়েনার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক সেন্টার মসজিদে।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, আগামীকাল শনিবার (৯ জুলাই) অস্ট্রিয়ায় যথাযথ ধর্মীয় ভাব ও গাম্ভীর্য্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইনশাআল্লাহ। অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ মুসলিম কমিউনিটি সহ অন্যান্য দেশের মুসলিম কমিউনিটি ঈদুল আজহা উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

● ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক সেন্টার মসজিদঃ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহার প্রথম জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে ভিয়েনার দানিউব (Danube) নদীর তীরে অবস্থিত ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক সেন্টারের মসজিদে। এই মসজিদে দুইটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

■ প্রথম জামায়াত সকাল ৬ টায় (খুতবা আরবীতে)
■ দ্বিতীয় জামায়ত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭: ৩০ মিনিটে (খুতবা জার্মানি ভাষায়)।

অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন মসজিদেও পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের একাধিক জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

● বায়তুল মোকারম মসজিদ, ভিয়েনা।

বায়তুল মোকারম মসজিদ ভিয়েনায় ঈদুল আজহার
দুইটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

■ প্রথম জামায়াতঃ সকাল ৮:০০ টায়,
■ দ্বিতীয় জামায়াতঃ সকাল ৯:৩০ মিনিটে।

● ভিয়েনার ১০ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের বায়তুল মামুর মসজিদে আগামীকাল ঈদুল আযহার নামাজের দুইটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

■ প্রথম জামায়াতঃ সকাল ৮:০০ টায়,
■ দ্বিতীয় জামায়াতঃ সকাল ৯:৩০ মিনিটে।

● ভিয়েনার ২০ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের বায়তুল মামুর মসজিদে ভিয়েনা ২০ এ পবিত্র ঈদুল আযহার দুইটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

■ প্রথম জামায়াতঃ সকাল ৮:০০ টায় এবং
■ দ্বিতীয় জামায়াতঃ সকাল ৯:০০ টায়।

● নূরে মদিনা মসজিদ, ভিয়েনা ২০

ভিয়েনার ২০ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের নূরে মদিনা মসজিদে আগামীকাল ইনশাআল্লাহ পবিত্র ঈদুল আজহার একটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

■ নূরে মদিনা মসজিদ ভিয়েনা ঈদুল আজহার
নামাজ সকাল ৯ টায়।

● বায়তুল মোকারম Wr.Neustadt

ভিয়েনার পাশের রাজ্য Niederösterreich (NÖ) রাজ্যের Wiener Neustadt শহরের বাংলাদেশ কমিউনিটির “বাইতুল মোকাররম – নয়েস্টাট” মসজিদে পবিত্র ঈদুল আযহার একটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।

■ “বাইতুল মোকাররম – নয়েস্টাট”
ঈদুল আযহার নামাজ সকাল ৭:৩০ মিনিট।

ঈদ উল আযহা বা ঈদুল আজহা বা ঈদ উল আধহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। সাধারণত প্রচলিত কথনে এই উৎসবটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত একটি আরবি বাক্যাংশ। এর শাব্দিক অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফযরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকায়াত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে ও অব্যবহিত পরে স্ব-স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করে থাকেন।

ঈদুল আযহার ইতিহাসঃ আরবি عيد ঈদ শব্দটির অর্থ “উৎসব,” “উদযাপন,” “ভোজের দিন,” বা “ছুটির দিন”। ًأضحى আদহা শব্দটির অর্থ “বলিদান”, ‘”ত্যাগ”। ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে স্বপ্নযোগে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেন: “ তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর।”হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কুবানির জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। আর নবী ও রাসূলদের স্বপ্নও কোনো কল্পনা প্রসূত ঘটনা নয় বরং তা ‘ওহি’ বা আল্লাহর প্রত্যাদেশ। তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইলকে বললেন, ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি? সে (হজরত ইসমাইল আঃ) বলল, ‘হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’
(সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)

৯৯ বছরের বৃদ্ধ হজরত ইবরাহিম তার প্রাণপ্রিয় পুত্রকে আত্মনিবেদনে আল্লাহ তাআলা যে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছিলেন। আর তিনিও মিনা প্রান্তরে প্রাণাধিক সন্তানকে কোরবানির যে নির্দেশ পালন করেছিলেন। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাঁর মন মানসিকতা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে গিয়েছিল। যা আজও মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ এ তিন দিনের যে কোনো একদিন আল্লাহর রাস্তায় কোরবানির মাধ্যমে পালন করে থাকেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানোর জন্য কুরবানি নয় বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার তাওফিক দান করুন। কুরবানির মাধ্যমে নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়,আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহীম আঃ স্বপ্নে আল্লাহর আদেশ পেয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম এবার ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিসহ আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ সময় শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করা থেকে বিরত করার জন্য ইব্রাহীম ও তার পরিবারকে প্রলুব্ধ করেছিল, এবং ইব্রাহীম শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। শয়তানকে তার প্রত্যাখ্যানের কথা স্মরণে হজ্জের সময় শয়তানের অবস্থানের চিহ্ন স্বরূপ নির্মিত ৩টি স্তম্ভে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

যখন ইব্রাহীম (আ.) আরাফাত পর্বতের উপর তার পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তার পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তার পুত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি। ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালন করার দ্বারা কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এটি ছিল ছয় সংখ্যক পরীক্ষা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.) কে তার খলিল (বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ করেন।

এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি উদযাপন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আযহার কুরবানি চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সর্বোচ্চ ৭০ দিন হতে পারে।

ইউরো বাংলা টাইমসের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের সকল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সকল সহকর্মীকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস /এম আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »