ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট; পিরোজপুর: খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই উপজেলার মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা দু’টো বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলা। এ নিয়ে গত দু’দিন ধরে ওই দুই উপজেলার সীমানাবর্তীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছ। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে উভয় উপজেলা থেকে ওই সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকশত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নাজিরপুর উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) মো. আল মামুন জানান, নাজিরপুর সীমান্তবর্তী মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চরবানিয়ারী ও বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারসংলগ্ন চরবানিয়ারি ও উমাজুড়ি এলাকার সীমানা নির্ধারন নিয়ে দুই এলাকার মধ্যে ওই উত্তেজনা বিরাজ
করছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) ও আগের দিন বুধবার (০৮জুন) সকাল থেকে দুই পারের কয়েকশত লোকজন ওই এলাকার জমি দখলে দুই পারে অবস্থান করছেন। চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুরের লোকজনের দখল প্রতিরোধ করতে নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের লোকজন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন।
উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনয়িনের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম বিলু জানান, তার পিতা ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকা কালেই প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই ইউনিয়নের চরবানিয়ারী ও চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের উমাঝুড়ির মধ্যে সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে চিতলমারীর লোকজন একাধীকবার স্থানীয়দের (চরবানিয়ারী) বাড়িঘরে হামলা ও লুট-পাট করেছে। এতে এ পর্যন্ত অর্ধশত লোকজন নারী-পুরুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। এ সংঘর্ষ এড়াতে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে উভয় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিদের সমন্বয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ আল সাদীদ জানান, ‘বৈঠকে বাগেরহাটের চিলতলমারির লোকজনের দাবী
ছিলো ব্রিটিশ আমলে সেখান থেকে বয়ে যাওয়া বলেশ্বর নদীর অবস্থান অনুযায়ী তাদের উপজেলার সীমানা নির্ধারন হবে। কিন্তু এমন দাবী প্রত্যাহার করে
নাজিরপুরের লোকজনের দাবী ছিলো বর্তমানে নদীর অবস্থান অনুযায়ী সীমানা নির্ধারন করা। পরে উভয় বিভাগের শীর্ষ বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা ও
জনপ্রতিনিধিদের মতামতে ১৯৮০ সালে ওই এলাকা তেকে বয়ে যাওয়া বলেশ্বর নদীর গতিপথের মাঝামাঝি উভয় বিভাগের সীমানা নির্ধারনের সিদ্ধান্ত হয়’।
উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নম্বর চরবানিয়ারি ইউনিয়নের মেম্বার কমলেশ মন্ডল জানান, গত ২০০৫ সালে হঠাৎ করে চিতলমারি উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের লোকজন আমাদের (চরবানিয়ারী) এলাকায় হামলা করে। স্থানীয়দের বাড়ি-ঘর দখল ও লুট-পাট করে। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় এ হামলা ও সংঘর্ষ লেগেই আছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী সঞ্জয় বিশ্বাস জানান, গত প্রায় ৪০ বছর ধরে বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলার সন্তোষপুর ইউনয়িনের কিছু ভুমি দস্যুরা আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে। এমনকি বার বার আমাদের জমি দখল করে গরু-ছাগল ও জমিতে থাকা ফসল লুট-পাট করে নিয়েছে। আমাদের এলাকার নারীরা সম্ভ্রম রক্ষায় প্রায়ই নির্ঘুম রাত কাটান।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরো জানান, উভয় বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে চিতলমারী উপজেলার কিছু ভুমি দস্যুদের দখলে থাকা জমি নাজিরপুরকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় ওই চক্রটির ইন্দনে বর্তমানে সেখানে সমস্যা বিরাজ করছে।
এইচ এম লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস