নেহামার পুতিনের ফোনালাপে যুদ্ধবন্দী বিনিময় নিয়ে আলোচনা !

অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারের সাথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৪৫ মিনিটের ফোনালাপ হয়েছে

ইউরোপ ডেস্কঃ আজ শুক্রবার (২৭মে) বিকালে অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার(ÖVP) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার দীর্ঘ ৪৫ মিনিটের ফোনালাপের কথা জানান।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার আজ ভিয়েনা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান,তার সাথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রায় ৪৫ মিনিট ফোনালাপ হয়েছে। চ্যান্সেলর নেহামার বলেন,তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের প্রস্তাব দিলে প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে যুদ্ধবন্দীদের বিনিময় করা যেতে পারে।

চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার জানান,বর্তমানে পূর্ব ইউক্রেনে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়াও উভয় পক্ষেরই যুদ্ধবন্দীর ঘটনাও ঘটছে। চ্যান্সেলর সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান অস্ট্রিয়া রাজনৈতিকভাবে যে কোন সময়ে রাশিয়া ও
ইউক্রেন যুদ্ধে যুদ্ধবন্দীদের বিনিময়ে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত আছে।

চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার ফোনালাপের পর সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে,ইউক্রেন বন্দর থেকে খাদ্যবাহী রপ্তানি জাহাজে কোন সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না রাশিয়া। অবশ্য নেহামার পূর্বেই ইউক্রেন বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া মানুষ ও পশুদের খাদ্য বহনকারী জাহাজের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিকট অনুরোধ করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে,রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর ইইউ দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারই গত মাসে মস্কোতে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করেছেন। রাশিয়ার সাথে অস্ট্রিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য সহ নানামুখী বহুবিধ যৌথ প্রকল্প রয়েছে।

অস্ট্রিয়ার তার দেশের শতকরা প্রায় ৮৩ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে থাকে। অস্ট্রিয়ান সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী অস্ট্রিয়া গ্যাস সহ অন্যান্য জ্বালানির জন্য রাশিয়াকে প্রতিদিন সাত মিলিয়ন ইউরো প্রদান করে থাকে।

এপিএ আরও জানায়, অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল বলেন,ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অস্ট্রিয়া মানবতার বা মানবিক সাহায্যের দিক থেকে একটি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, অস্ট্রিয়ার অতীতের যুদ্ধের ভয়ানক অভিজ্ঞতা আছে। যে কারণে আমরা গুরুতর আহত বেসামরিক, নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষদের যত্ন নিতে এবং চিকিৎসা সেবায় অস্ট্রিয়ার সাধ্যমত সবকিছুই করছে।

এখানে উল্লেখ্য যে,পোল্যান্ডের পর অস্ট্রিয়াই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ যেখানে বর্তমানে কয়েক লক্ষাধিক ইউক্রেনীয় শরণার্থী বসবাস করছে। অস্ট্রিয়া সরকার ইউক্রেনীয়দের জন্য শ্রম বাজার উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে এবং ইউক্রেন থেকে আগত শরণার্থী শিশুদের জন্য বিশেষ স্কুলের ব্যবস্থা করেছে।

চ্যান্সেলর তার বক্তব্যে আরও বলেন,ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্ব খাদ্যের বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন থেকে পশুর খাদ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পশুজাত দ্রব্যমূল্যের দাম শতকরা প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে মাসে দুইবার ইউক্রেন থেকে রেলপথে পশু খাদ্য আসছে।

চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন,”রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। উদাহরণস্বরূপ সার এবং বীজের জন্য ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে চুক্তি মোতাবেক রপ্তানির পরিবহন ও সরবরাহের পথ নিরাপদ এবং নিশ্চিত করা। তিনি বলেন এই নিশ্চিয়তা ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষ থেকেই নিশ্চিত হতে হবে, তাহলেই বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতির পরিণতি ভোগ করতে হবে না এবং বিশ্ব শান্তির অস্থিতিশীলতা হ্রাস পাবে।

নেহামার আরও জানান,ইউক্রেনে মিলিয়ন মিলিয়ন টন গম এবং অন্যান্য খাদ্য শস্য আটকে আছে। এগুলো ইউক্রেনের বাহিরে বিভিন্ন দেশে চুক্তি মোতাবেক সরবরাহ করা গেলে খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন কমে আসবে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »