অস্ট্রিয়ায় মান্কিপক্সের প্রথম রোগী শনাক্ত !

মান্কিপক্সের উপসর্গ নিয়ে ৩৫ বছর বয়স্ক একজন অস্ট্রিয়ান নাগরিক ভিয়েনার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের এক তথ্য বিবৃতিতে জানানো হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে অস্ট্রিয়ায় মান্কিপক্সে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছে। অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে ৩৫ বছর বয়স্ক লোকটি গতকাল রবিবার (২২ মে) ভিয়েনার ১০ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের একটি ক্লিনিকে মান্কিপক্সের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে, তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তার উপসর্গের মধ্যে হালকা জ্বর এবং মুখে অসংখ্য ব্রণ বা গুটিবসন্তের মত উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং সেগুলো ক্রমশ বড়
হচ্ছে।

এপিএ আরও জানান, প্রথমে সন্দেহভাজন হলেও পরে তার উপসর্গ মান্কিপক্সের বলেই নিশ্চিত হয়েছেন চিকিৎসকরা। পরে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এপিএ আরও জানান বিশেষ সংক্রামক রোগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ভিয়েনা স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক (Wigev) এর স্বাস্থ বিষয়ক মুখপাত্র নিনা ব্রেনার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মান্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে হালকা ক্ষত আছে এবং তিনি হালকা ফ্লু উপসর্গ আক্রান্ত আছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু জানিয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের বাহিরে এই পর্যন্ত ১০৮ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

মাংকিপক্স কি এবং এর ঝুঁকি কতটুকু?

আফ্রিকা থেকে ছড়ানো মাংকিপক্স নামে এক রোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, স্পেন, পর্তুগাল এবং ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়েছে বলে এসব দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে। রোগটি বর্তমানে মহামারীর আকারে ক্রমশ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এই রোগ ছড়ায় মাংকিপক্স নামে এক ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। তবে এর ক্ষতিকারক প্রভাব কম এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সংক্রমণের হারও কম। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে বলে বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।

আফ্রিকায় মাংকিপক্স এর একাধিক সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তারা বিস্মিত। রোগটি বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনার মতই সমগ্র ইউরোপে তথা বিশ্বে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে ভয়েস অফ আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, গুটিবসন্তের সাথে সম্পর্কিত রোগটি মধ্য বা পশ্চিম আফ্রিকার সাথে যোগাযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র এমন মানুষদের মধ্যেই এর আগে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে ব্রিটেন, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালী, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন এবং কানাডা নিজেদের দেশে সংক্রমণের খবর জানায়। আক্রান্তদের বেশিরভাগই তরুণ পুরুষ, যারা তার আগে আফ্রিকায় যাতায়াত করেননি।

আমেরিকান সোসাইটি অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন এর ড. ড্যানিয়েল বশ বলেন, “আরও সংক্রমিত এলাকা থাকতে পারে, তবে হাজার হাজার রোগী মাংকিপক্সে সংক্রমিত হওয়ার মত ঘটনা ঘটবে না। এটা সাধারণ মানুষের চিন্তিত হওয়ার মত কোন বিষয় না।”

এখনও পর্যন্ত সংক্রমণে কারও মৃত্যু হয়নি। সাধারণত, মাংকিপক্সের কারণে জ্বর দেখা দেয়, শরীর কাপুনি দেয়, ফুসকুড়ি উঠে এবং চেহারা বা যৌনাঙ্গে ক্ষত সৃষ্টি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমান করছে যে, রোগটি প্রতি ১০ জনে ১ জনের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে গুটিবসন্তের টিকা এই রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং এর জন্য কিছু সংক্রমণ-প্রতিরোধক ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে।

যৌন মিলনের কারণে রোগটি ছড়াচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সম্ভাব্য রোগীর খোঁজে ডাক্তার এবং নার্সদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে, তারা এও বলেছেন যে, জনসাধারণের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সুপারিশ করেছে যে, সকল সম্ভাব্য রোগীকে যেন আইসোলেশনে রাখা হয় এবং আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে যাতে গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

মাঙ্কিপক্সের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল রবিবার (২২ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা, মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের নজরদারি ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাঙ্কিপক্স নতুন কোনো রোগ নয়। অতীতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোর মানুষের মধ্যে এটি পাওয়া যেত। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশগুলোতে ভ্রমণ না করেও, ইউরোপীয় এবং আমেরিকার দেশগুলোতে মানুয়ের মধ্যে এটি শনাক্ত করা হয়েছে। যারা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, বা সংক্রামিত মানুষের কাছাকাছি এসেছেন, তাদের মাঙ্কিপক্সের সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা উচিত।

বাংলাদেশ সরকারের উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন রোগী বা উপসর্গযুক্ত রোগীদের সরকারি হাসপাতাল বা সংক্রামক রোগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অর্থাৎ আইসোলেশনে রাখা উচিত।

কবির আহমেদ /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »