আব্দুস সালাম আরিফ,পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালী সহ দক্ষিণ উপকলীয় এলাকায় নানা প্রতিকূলতায় কমছে তেল জাতীয় ফসলেও উৎপাদন। গত এক দশকে এই জেলায় সড়িষা এবং তিল ফসলের চাষাবাদ কমেছে অশংকাজন ভাবে, তবে সাম্প্রতিক সময় জেলায় সূর্যমুখী এবং চিনা বাদামের উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে। তবে এলাকা ভেদে কৃষকের মাঠে আবারও কিভাবে তেল জাতীয় ফসল গুলো ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করার কথা জানালেন কৃষিমন্ত্রী।
একটা সময় ছিল যখন কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনীয় ভোজ্য তেল নিজেরাই উৎপাদন করতো। আর এ জন্য চাষ হতো সড়িষা, তিল, বাদাম, সূর্যমুখী। এ ছাড়া সড়কের পাশে কিংবা জমির আইলে লাগানো ভেরেন্ডা(ভেড়ন) থেকেও কৃষক পরিবার গুলো তেল সংগ্রহ করতো। তবে গত কয়েক দশকে বাজারে সয়াবিন এবং পাম ওয়েল সহজলভ্য হওয়ায় এসব ফসলের চাষাবাদ আশংকাজনক ভাবে কমেছে। ফলে শহর থেকে প্রত্যান্ত গ্রামেও এখন আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেলের উপর নির্ভর করতে হয়।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার বহালগাছিয়া এলাকার কৃষক হজরত আলী বলেন, ‘আগে আমরা সব গিরস্ত বাড়ির লোকজনে সড়িষা চাষ করতাম। এ ছাড়া তিল দিয়াও তেল করাতাম। কিন্তু এখন আর কেউ চাষ করে না।
বাজার দিয়া সবাই সয়াবিন তেল কিন্না খায়। তয় সরকার সহযোগীতা করলে আবার সড়িষা, তিল, সূর্যমুখী চাষ করমু। এহন তেলের যে দাম, তা তোর আর কিন্না খাওয়ার উপায় নাই।’
একই এলাকার কৃষাণী আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘এক সময় তো আমরা ভেড়ন(ভেরেন্ডা) বাইট্টা তরকারি রানতাম। হেতে আর কোন তেল দেয়া লাগদে না। হের পর হাইচা শাক, লাল শাক সহ বিভিন্ন তরিতরকারির রানতাম ভেড়ন(ভেরেন্ডার) তেল দিয়া। এহন তো আর কেউ ভেড়ন লাগায় না, আর তেলও বাইর করে না।’
জানা যায়, জলবায়ু বিরুপ প্রভাব কিংবা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে পটুয়াখালী জেলায় দিন দিন কমছে সড়িষা এবং তিল ফসলের চাষাবাদ। দেড়িতে আমান ধান কর্তন, সেচের সুবিধা না থাকা, উচ্চ ফলনশীল বীজের সংকট সহ সার ও কিটনাশকের উচ্চ মূল্যের কারনে এসব ফসল চাষাবাদে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, পটুয়াখালী জেলায় গত বছর ৩৪৭ হেক্টর জমিতে সড়িষা আবাদ হলেও এ বছর আবাদ হয়েছে ২২৪ হেক্টর জমিতে, আর গত বছর ৩৭২ হেক্টর জমিতে তিল আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১০৯ হেক্টর জমিতে। তবে সরকারী সহযোগীতা খাকায় সূর্যমুখী এবং চিনা বাদামের ফলন বাড়ছে। গত বছর পটুয়াখালী জেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হলেও এবার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে আর গত বছর ৪৪০০ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষ হলেও এবার হয়েছে ৫৭৮৩ হেক্টর জমিতে।
সম্প্রতি পটুয়াখালী সহ দক্ষিন এলাকায় সফরে এসে এই এলাকার মাটি উপযোগী তেল ফসলের চাষাবাদ বাড়ানোর কথা জানালেন কৃষি মন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক। এ জন্য চরের উর্বর বালি মাটিতে চিনা বাদাম চাষের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।
পটুয়াখালী /ইবিটাইমস