ভারতে পাচার হওয়া কিশোরী সাত বছর পর মায়ের কাছে ফিরে আসছে

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ভারতে পাচার হওয়া চম্পা আক্তার রহিমা(১৯) নামের কিশোরী সাত বছর পর তার মা ফাতেমা বেগমের কাছে ফিরে এসেছে। ভারতের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সোমবার ঝালকাঠির নারী ও শিশু নিযার্তন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে হাজির করা হলে আদালত মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে চম্পাকে মায়ের জিম্মায় দিয়েছে।

১২ বছর বয়সে এই শিশু কন্যাকে খুলনায় একটি বাসায় কাজের প্রলোভন দিয়ে একটি মানব পাচারকারী চক্র ২০১৫ সালের ৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বসত বাড়িতে একাকী পেয়ে তুলে নিয়ে যায় এবং চম্পাকে বেনাপোল বর্ডার থেকে পাচার করে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে কৃষনাগিরি জেলার একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়।

পাচারকারী চক্রের হাসিনা, গরিব এই পরিবারের মাকে কাজের মেয়ে হিসেবে দিতে রাজি করাতে ব্যার্থ হয়ে কৌশল করে চম্পাকে তুলে নিয়ে যয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মানব পাচার রোধে বেসরকারী সংস্থা জাস্টিস এন্ড কেয়ার পতিতালয় থেকে ভারতের পুলিশের সহায়তায় চম্পাকে উদ্ধার করে ব্যাঙ্গালুরুর স্বাকশাতারা শেল্টার হোমে রাখে এবং কৃষনাগিরি জেলার হুডকো থানায় ৭১২/২০১৫ মামলা দায়ের হয়। ভারতের বিচার সম্পন্ন হওয়ার পরে জাস্টিস এন্ড কেয়ারের সংগঠনের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশে আনা হয়।

গত ৫ মার্চ স্থল বন্দর বেনাপোলে ভারতীয় এই সেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশের সংগঠনের কাছে হস্তান্তর করেন। এই সংগঠনের হিসাব মতে চম্পাকে পতিতালয়ে ৬ মাস অন্ধকার জীবনের যন্ত্রণা কাটানের মধ্যেই তাকে আইনগতভাবে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। দীর্ঘদিন ব্যাঙ্গালুরুতে থাকায় সে বাংলা ভাষা প্রায় ভুলে গেছে এবং ইংরেজি ও তামিল ভাষা আয়ত্ব করে ফেলেছে।

এই পাচারকারী চক্রটি হচ্ছে খুলনার খালিশপুর থানার সেনহাটির মুমিন হাওলাদারের স্ত্রী মোসাম্মৎ হাসিনা বেগম এবং একই এলাকার কবির হোসেনের স্ত্রী ঝুমুর আক্তার ও ঝালকাঠির বাসন্ডা গ্রামের ইন্দ্রোজিৎ শিকদারের স্ত্রী মিনতি শিকদার। আসামীদের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী মিনতি শিকদারকে ঝালকাঠিতে মানব পাচারের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে অন্য আসামীরা গ্রেফতার হয়নি।

চম্পাকে অপহরনের পর তার মা ফাতেমা বেগম কমলি ঝালকাঠি থানায় অভিযোগ করতে এলে থানা পুলিশের প্রশ্নের জবাব দিতে না পারায় তার অভিযোগ নেয়া হয়নি। পরবর্তিতে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর ঝালকাঠির মানব পাচার অপরাধ ট্রাইবুনাল আদালতে ফাতেমা বেগম কমলি নালিশি অভিযোগ দায়ের করলে আদালতের তৎকালিন বিচারক মোঃ শফিকুল করিম ঝালকাঠি থানার অফিসার ইনচার্জকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গন্য করে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশের প্রেক্ষিতে ঝালকাঠি থানায় উল্লিখিত তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ পরিদর্শক অগর্যানাইজড ক্রাইম, সিআইডি ঢাকা মোঃ রেজাউল করিম ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করে।

বাধন রায় /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »