নিউজ ডেস্কঃ শাহ্ মুহাম্মদ ফরহাদ অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির এক কিংবদন্তীর নাম। ১৯৯০ এর দশক থেকে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির অনেক নতুন আগতরাই তার কাছ থেকে অনেক পরামর্শ ও প্রশাসনিক সহায়তা পেয়েছেন।
মরহুম শাহ্ মুহাম্মদ ফরহাদ সাহেবে ১৮ ই নভেম্বর ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮০ সনের ২১শে নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আসেন। মহান আল্লাহতায়ালার ডাকে ২০১৯ ভিয়েনায় তিনি ভিয়েনার মুসলিম কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হন।অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটিতে তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ফরহাদ ভাই নামে খ্যাত ছিলেন।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কলেজ রোডে এক সময়ের জন প্রতিনিধি মিনু ভাই হচ্ছেন আমাদের শাহ মুহাম্মদ ফরহাদ ভাই। ফরহাদ ভাইয়ের ডাক নাম ছিলো মিনু। দুই অগ্রজ ভাইয়ের পর বোন হবে আসায় নামা রাখা হয়েছিল মিনু। তাই তার জন্মের পর পরিবারের সবাই তাকে মিনু বলেই ডাকতেন।
ময়মনসিংহ জেলা শহরের কলেজ রোডের জনদরদী সমাজসেবক এবং ওয়ার্ড কমিশনার মিনু ভাই দেশে থাকতেও জনসেবায় কাজ করে গিয়েছেন। কলেজ রোড এলাকার প্রতিটি মানূষ এখনও শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করছেন। উল্লেখ্য, অস্ট্রিয়াতে বাংলাদেশ কমিউনিটির সবচেয়ে পুরোনো সংগঠন বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সাবেক চারবারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন তিনি।
১৯৮৪ সালে আফ্রো এশিয়ার হলে শাহ্ মুহাম্মদ ফরহাদ ভাইয়ের উদ্যেগে প্রথমে অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতার অন্যতম সংগঠক ছিলেন আমাদের সবার প্রিয় ফরহাদ ভাই। নবীন কিংবা প্রবীন সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ভিয়েনায় নব্বইয়ের দশকে আগত নতুন প্রবাসী বাংলাদেশীদের অধিকাংশই কোন না কোনভাবে ফরহাদ ভাইয়ের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রাণ পুরুষ শাহ্ মুহাম্মদ ফরহাদ সাহেব ২০১৯ সালের ১০ ই মে (৫ম রোজা) ঠাণ্ডা জনিত শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভিয়েনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স হয়েছিল ৭১ বৎসর।
শাহ্ মোহাম্মদ ফরহাদ সাহেব মৃত্যুর সময় রেখে গেছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফরহাদ ও একমাত্র মেয়ে ফারজানা ফরহাদ। মেয়ে ফারজানা ফরহাদ দীর্ঘদিন যাবৎ অষ্ট্রিয়া সরকারের অনুমোদিত একজন দো-ভাষী হিসাবে কর্মরত আছেন। তাছাড়াও তিনি দোভাষীর কাজের সাথে সাথে শিক্ষকতা এবং তাঁর বাবার মতোই বিভিন্ন জনসেবা মূলক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
মরহুম ফরহাদ সাহেব শিক্ষা জীবনে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছিলেন। তার বাবা ময়মনসিংহ শহরের একজন প্রভাবশালী উকিল ছিলেন। মরহুম ফরহাদ সাহেব তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন।
ফরহাদ সাহেবের বড় ভাই বাংলাদেশ এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। মেজ ভাই বাংলাদেশ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের(প্ল্যানিং কমিশন) সচিব ছিলেন। একমাত্র ছোট বোন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং গণিত বিভাগের একজন শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন। ফরহাদ সাহেবের বড় ভাই মরহুম বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন।
মরহুম শাহ্ মোহাম্মদ ফরহাদ অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটিতে প্রায় ৪০ বৎসর বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজ করে গেছেন। অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির পুরানো লোকের মধ্যে খুব কম লোকই পাওয়া যাবে,যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁর সাহায্য পান নি। তিনি এই দীর্ঘ সময়ে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির লোকজনদের সাধারণত প্রশাসনিক কাজেই সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে গেছেন।
অস্ট্রিয়া ও বাংলাদেশ থেকে যৌথভাবে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা ইউরো বাংলা টাইমসের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহ্ মুহাম্মদ ফরহাদ সাহেবের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আজ তার তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে আমরা ইউরো বাংলা টাইমসের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস