জাহিদ দুলাল , লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহনে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র ক্ষতির ভয়ে আধা-পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের পরামর্শে ফসল বাঁচাতে ধান কেটে ঘরে তুলে নিচ্ছেন তারা। বিগত বছরগুলোতে ঝড়ে কৃষককের বহু ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তাই এবছর আগেভাগেই ক্ষেত থেকে ধান কাটতে দেখা গেছে কৃষকদের। এবছর উপজেলায় বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা রঙ্গিন স্বপ্ন দেখলেও ঝড়ের পূর্বাভাসে সেই স্বপ্ন ধূসর হচ্ছে। গত রোববার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে ধানসহ সকল রবিশস্য ঘরে তুলতে নির্দেশ প্রদান করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সূত্রে জানা যায়, এ বছর লালমোহনে ১০ হাজার ৮শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস বলছে ইতোমধ্যে মাঠে ৯৫ শতাংশ ধান পেকেছে। তবে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে মাঠে এখনো ৪০ শতাংশ কাঁচা ধান রয়ে গেছে। এসব কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
উপজেলার ফুলবাগিচা এলাকার কৃষক ফজলু বলেন, ঝড় হবে এমন খবর পেয়ে ক্ষেতের ৫ গন্ডা জমির ধান কেটে নিয়েছি। ধানের ফলন ভালো, কিন্তু পুরোপুরি পাকেনি। আরেক কৃষক কামাল দেওয়ান জানান, ৭ গন্ডা জমির বোরো ধান ঘরে তোলার প্রস্ততি নিয়েছি। সোমবার বৃষ্টির ভিতরে ৬ জন দিনমজুর নিয়ে ধান কাটছি। এতে করে সামান্য ক্ষতি হলেও যদি ঝড় হয় তাতে এরচেয়েও অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পরবো। যার জন্যই আগেভাগেই ধান কেটে নিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএফএম শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা ঝড়ের আভাস পেয়ে কৃষকদের ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি। আগেভাগেই কাটলেও ৮০ ভাগ পেকেছে এমন ধান কাটলে কোনো ক্ষতি হবে না। পুরোপুরি পাকার অপেক্ষায় থাকলে ক্ষেতে ধান ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অন্যদিকে প্রচারকের অভাবে মৎস্য অফিসের ঝড়ের প্রচারণা ব্যাহত! জেলে পল্লীতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৎস্য অফিসের নির্ধারিত প্রচারক অসুস্থ্য থাকায় ঘূর্ণিঝড় অশনির বিষয়ে জেলে পল্লীতে প্রচারণা চালাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ভোলার লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রুহুল কুদ্দুস। সোমবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ কথা জানান। তার দাবী, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে জেলে পল্লীতে সর্তকতামূলক প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়নি একমাত্র প্রচারকের জন্য। মৎস্য অফিসের নির্ধারিত প্রচারকের বাহিরে অন্য কোনো প্রচারক নেই বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা। উপজেলা মৎস্য অফিসের এমন গাফলতিতে এখনও ঘূর্ণিঝড়ের খবর পায়নি লালমোহনের জেলেরা। তবে ঠিক কি পরিমান জেলে সাগরে রয়েছেন তাও জানেন না মৎস্য অফিস।
লালমোহনের জনপ্রিয় প্রচারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারাদিন কোনো প্রচারের কাজ ছিল না। আর মৎস্য অফিসের কোনো লোকও আমার সাথে প্রচারের বিষয়ে কথা বলেনি।
জানা যায়, লালমোহনে সাগরে মাছ শিকার করেন এমন জেলের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। কিছু জেলে ফিরলেও এখনও সাগরে রয়ে গেছেন অনেক জেলে। পরিবারের দাবী ওইসব জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। এনিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সাগরে থাকা জেলে পরিবারের সদস্যরা।
উপজেলার বাত্তিরখাল মৎস্য ঘাট এলাকার জেলে মো. মনির হোসেন জানান, সারাদিনে বিদ্যুৎ ছিল না। তাই টিভিতেও খবর দেখতে পারিনি। আবহাওয়ার কি অবস্থা তাও আমরা সঠিকভাবে জানি না। প্রতি বছর ঝড়ের সময় মৎস্য অফিস থেকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সর্তকতামূলক প্রচারণা করলেও এবছর মৎস্য অফিস থেকে কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি। এ এলাকার অনেক জেলে এখনও সাগরে রয়ে গেছেন।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব কুমার হাজরা বলেন, উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় প্রাথমিক স্তরের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আর মৎস্য অফিসকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে সকলকে জানিয়ে দেয়ার জন্য।
ভোলা /ইবিটাইমস