ইউরোপ ডেস্কঃ আজ সোমবার ১৮ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ১৭ তম রোজার ইফতারের সময় : ১৯:৪৯ মিনিট। (Ifter in Vienna at 19:49 p.m)
আগামীকাল মঙ্গলবার ১৯ এপ্রিল ভিয়েনায় ১৮ তম রোজার সেহরির শেষ সময় : রাত ৪:২২ মিনিট।
ভিয়েনার সাথে অস্ট্রিয়ার অন্যান্য কয়েকটি ফেডারেল রাজ্যের প্রধান শহরের সময়ের পার্থক্য নিম্নে উল্লেখ করা হল,
* Innsbruck (Tirol) + 20 Min.
* Salzburg + 13 Min.
* Villach (Kärnten) + 10 Min.
* Linz (OÖ) + 08 Min.
*Klagenfurt (Kärnten) + 08 Min.
* Graz (Steiermark) + 4 Min.
* St. Pölten (NÖ) + 3 Min
রমজানের শেষ দশকের প্রস্তুতি:
দেখতে দেখতে রমজানের অর্ধেকের বেশি চলে গেল। সামনে আসছে মহিমান্বিত শেষ দশ দিন। অর্থাৎ শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত। আমাদের জন্য রয়েছে সবচেয়ে আকাঙ্খিত এবং ফজিলতপূর্ণ লাইলাতুল কদর। এই সময় নিজের আত্মার সমৃদ্ধির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময়। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, “নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে।”
কদর শব্দটির অর্থ হলো মূল্য, তাৎপর্য বা গুরুত্ব। এ রাতের অসীম গুরুত্বের জন্য এর নাম লাইলাতুল কদর। ইবনু রজব রা: বলেন, ‘নবীজী সা: শেষ দশ দিন এতটাই ইবাদতে মগ্ন থাকতেন পরিবারের সাথেও তার সম্পর্ক থাকত না।’
কদর কথাটির অন্য একটি অর্থ হলো ‘ভাগ্য’। এ রাতে আমাদের ভাগ্য লেখা হয়ে থাকে বলে এর নাম লাইলাতুল কদর। কদরের রাতে এক বছরের সব কিছু ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। আল্লাহ বলেন, ‘এটি হলো সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ে বিজ্ঞচিত ফয়সালা দেয়া হয়’।
[সূরা আদ-দোখান, আয়াত:৪]
আমাদের সব ফায়সালা যেহেতু নির্ধারিত হয়ে যায়, এরপর আমরা আমাদের ফয়সালার সুন্দর সমাপ্তির জন্য দোয়া করতে পারি। রাসূল সা: বলেন, ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য আপনি যে ফয়সালা করেছেন তার সুন্দর সমাপ্তি দিন’। [মুসনাদে আহমদ]
তাকদিরের সাথে দোয়ার সম্পর্ক অন্তর্নিহিত। কেউ যদি দোয়া করে দোয়ার কারণে হয়তো তার চাওয়া পূরণ হবে অথবা কোনো বিপদ দূর হবে। আমাদের প্রিয় নবী সা: এভাবে দোয়া করতেন, ‘আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বারাকাহ্ দিন। আমার তাকদিরে নির্ধারিত বিপদ দূরে সরিয়ে দিন। আপনিই তো সবকিছু নির্ধারণ করেন’। ʼতিরমিজি, নাসাই]
শবে কদর অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘কদরের রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম’- [সূরা আল কদর,আয়াত: ৩]
এ রাতের ইবাদত হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে আমরা কুরআন পড়লে অথবা তওবা করলে অথবা জিকির করলে তা যেন ৮৩ বছর ধরেই করে যাচ্ছি। এই সুযোগ কোনো বোধ সম্পন্ন মানুষ অবশ্যই হাতছাড়া করবে না। বরকতময় কদরের আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এ রাতে পৃথিবীতে যত পাথর কণা রয়েছে তার থেকেও বেশি সংখ্যক ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় এবং জিবরাইল আ:ও তাদের সাথে আসেন। কখনো ভেবে দেখেছেন, জিবরাইল আ: এই পৃথিবীতে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমন একটি বিশেষ সময় যখন তিনি দুনিয়াতে নেমে আসেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে’- [সূরা আল কদর,আয়াত:৪](এই আয়াতে আল্লাহ রুহ বলতে সন্মানিত ফেরেশতা প্রধান হযরত জিবরাঈল আঃ কে বুঝিয়েছেন।)
এ মহিমান্বিত রাত ঠিক কোনটি তার রাসূল সা:কে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাসূল সা:-এর কিছু লক্ষণ বলেছেন। যেমন- ‘লাইলাতুল কদর হবে পরিষ্কার আর স্বচ্ছ একটা রাত। মনে হবে যেন সে রাতে একটি উজ্জ্বল চাঁদ উঠেছে’। [আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ]
এখানে উজ্জ্বলতা চাঁদ থেকে আসবে না। ফেরেশতাদের দুনিয়াতে আসা যাওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা সে রাতে নূর দিয়ে দেবেন। হাদিসে আরো এসেছে, এটি হবে একটি শান্ত ও প্রশান্ত রাত। না ঠাণ্ডা না গরম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শান্তি ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’। [সূরা আল কদর,আয়াত:৫]
সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে যে, আমরা যদি লাইলাতুল কদরকে চিহ্নিত করতে নাও পারি, তার পরেও সে সেই রাতের পূর্ণ নেকি অর্জন করতে পারব। আত-তাবারি এবং ইবনুল আরাবি বলেন, ‘মানুষ যদি এ রাতকে চিহ্নিত করতে না পারে তবুও সে এ রাতে ইবাদতের সওয়াব লাভ করবে’।
লাইলাতুল কদরের জন্য একটি বিশেষ দোয়া আমাদের নবীজী সা: শিখিয়ে দিয়েছেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ নিশ্চয় আপনি পরম ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
এ রাতে আমরা বেশি বেশি ইসতেগফার করব। হতে পারে এ রাতের ইবাদতে আমাদের যে বিপুল সওয়াব অর্জিত হবে সেটাই আমাদের আখিরাতের সাফল্য এনে দেবে। এ সুবর্ণ সুযোগ নেয়ার জন্য আমাদের উচিত সব অলসতা ঝেড়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য বিনয়ের সাথে উঠে দাঁড়ানো। সালাত আদায়ের পাশাপাশি যে ইবাদতে আমাদের প্রশান্তি অনুভূত হয় সেই ইবাদতেই আমরা মশগুল হতে পারি।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস