ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার উদ্বাস্তু বা শরণার্থী প্রতিদিন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে আসছে
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী পোল্যান্ড,রুমানিয়া,
মোলদোভা ও স্লোভাকিয়া হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩,০০০ হাজার থেকে প্রায় ৭,০০০ হাজার শরণার্থী অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করছে। তবে এর মধ্যে সিংহভাগই অস্ট্রিয়ায় সামান্য যাত্রা বিরতি করে ইতালি,পর্তুগাল ও স্পেন চলে যাচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার বৃহত্তম ও প্রধান রেলস্টেশন এবং ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত ভিয়েনার প্রধান এই রেলস্টেশনে হেঁটে গেলেই চতুর্দিকে ইউক্রেন থেকে আগত শরণার্থীদের আনাগোনা চোখে পড়বে। চারপাশে মানুষের ভিড় রয়েছে, যাদের বয়স পেনশনভোগী থেকে শুরু করে মহিলা এবং বাচ্চাদের সংখ্যাই বেশী।
আগত শরণার্থীদের অনেক পরিবারের সাথে তাদের পালিত কুকুর বা অন্যান্য পোষা প্রাণীও আছে। আগত লোকজনদের নিজেদের লাগেজের স্তূপের কাছে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত এবং বিষন্ন অবস্থায় দেখা গেছে। নতুন আগতদের অধিকাংশই স্টেশনের চেয়ারে বসে আছে, ঝিমিয়ে পড়েছে। ছোট বাচ্চারা নরম খেলনা ধরে চারপাশে দৌড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মিশনারি ও মানবাধিকার সংস্থা কারিতাস অস্ট্রিয়া ভিয়েনার প্রধান রেলস্টেশনে বর্তমানে একটানা ২৪ ঘন্টার সেবা কার্যক্রম দিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য কারিতাস অস্ট্রিয়ার ৫০ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।কারিতাস অস্ট্রিয়ার কর্মচারী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের স্বতন্ত্র লাল টি-শার্ট পরে আগতদের সাথে কথা বলতে এবং শরণার্থীদের হাতে খাবার তুলে দিতে সর্বদা ব্যস্ত রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পানির বোতল, খাবার, স্ন্যাকস, প্রসাধন সামগ্রী এবং এমনকি কুকুর ও বিড়ালের খাবার পর্যাপ্ত সরবরাহ করছে তারা।
অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা স্টেশনের আশেপাশে মিলিত লোকদের কাছে FFP2 মাস্ক বিতরণ করতে দেখা গেছে। অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে, মারিয়া,যিনি একজন ইউক্রেনিয়ান, সাত বছর ধরে ভিয়েনায় বসবাস করছেন এবং কাজ করছেন। তিনি কারিতাস স্ট্যান্ডে সাহায্যকারী স্বেচ্ছাসেবকদের একজন। তিনি স্থানীয়দের বলেছিলেন যে সাহায্যের জন্য তার কাছে আসা বেশিরভাগ লোকেরা ইংরেজি বা জার্মান বলতে পারে না। তিনি সেখানে দোভাষীর কাজ করছেন।
এদিকে ভিয়েনার ২ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের মেট্রো লাইন U2 এর স্টেডিয়াম স্টেশনের কাছে ইউক্রেনীয় আগমন কেন্দ্রে (Ankunftszentrum Ukraine) শরণার্থীদের জন্য ফ্রি করোনা পরীক্ষা,মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং রাত্রী যাপনের জন্য বিছানার মতো পরিষেবা ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়াও যারা অস্ট্রিয়া থেকে ইউরোপের অন্য কোন দেশে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে,তাদের জন্য ট্রেন বা বিমান সংযোগ করতে সাহায্য করছে। তাছাড়াও এখানে জরুরী চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।
সমগ্র অস্ট্রিয়া জুড়ে, ফেডারেল এজেন্সি ফর কেয়ার অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস (বিবিইউ) ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত এবং ব্যবসার দ্বারা প্রদত্ত শরণার্থীদের জন্য ২৯,৫০০ টি থাকার জায়গা আলাদা করে রেখেছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জনকে জরুরী আবাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। অস্ট্রিয়ান ফেডারেল রেলওয়ে (ÖBB) ইতিমধ্যেই শরণার্থীদের নিরাপদে পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ভিয়েনায় আনতে বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে।
উল্লেখ্য যে, ÖBB ইউক্রেন শরণার্থীদের জন্য রেল ভ্রমণ ফ্রি ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়ার ফেডারেল সরকার ইউক্রেন থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য আপাতত এক বছরের কাজ করার অনুমতি দিয়েছে।
কারিতাস (Caritas) অস্ট্রিয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে যারা ইউক্রেন শরণার্থীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করত ইচ্ছুক তাদেরকে নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটে feiwillig@caritas-wien.at ইমেল করে প্রথমে নিবন্ধন করার পরামর্শ দিয়েছেন। রাশিয়ান বা ইউক্রেনীয় ভাষায় কথা বলতে পারে এমন স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
নিম্নে ভিয়েনার আরও কয়েকটি ইউক্রেন শরণার্থী শিবিরের ঠিকানা এবং তথ্য দেয়া হলঃ
মানবিক আগমন কেন্দ্র (Humanitäres Ankunftszentrum) “Sport- und Fun-Halle” ঠিকানা: Engerthstraße 267 – 269, 1020 Wien ২৪ ঘন্টা খোলা, সপ্তাহের সাত দিন। অস্ট্রিয়া সেন্টার ভিয়েনা।
ঠিকানা: Bruno-Kreisky-Platz 1, 1220 Wien, খোলার সময়: সোমবার থেকে শুক্রবার, সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা। (শেষ নিবন্ধন বিকাল ৪টা)। ওয়েব পোর্টাল where2help Wien অস্ট্রিয়ার রাজধানীতে উদ্বাস্তুদের সাথে বর্তমান স্বেচ্ছাসেবীর সব সুযোগ দেয়। fuereinand.at ওয়েবসাইটটি উদ্বাস্তুদের সাহায্যকারী সংস্থাগুলিকে দান করার এবং অন্য লোকেদের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয় যারা পার্থক্য করতে চায়।
আপনি যদি অস্ট্রিয়ায় আগত শরণার্থীদের জন্য বাসস্থানের সুযোগ দিতে চান,তারা নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটে nachbarschaftsquartier@bbu.gv.uk ইমেল করে নিবন্ধন করতে পারেন।
ভিয়েনায় শরণার্থীদের সাহায্য করার সাথে জড়িত দাতব্য সংস্থাগুলি হল:Train of Hope – Flüchtlingshilfe Wien Samariterbund Wien, Diakonie এবং Caritas Austria.
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস