রাশিয়ার বোমাবর্ষণে ইউক্রেনে প্রাণ হারালেন ভারতের মেডিক্যাল ছাত্র

রাশিয়ার নিক্ষিপ্ত দূরপাল্লার বোমা বিস্ফোরণে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে
থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের জাতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার (১ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি একটি টুইট বার্তায় জানান, আমরা অত্যন্ত ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আজ সকালে ইউক্রেনের উত্তরের খারকিভ শহরে রাশিয়ার নিক্ষিপ্ত বোমা বিস্ফোরণের ফলে একজন ভারতীয় ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে।

এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পত্রিকা “আনন্দ বাজার” পত্রিকা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক টুইট ইউক্রেনের খারকভে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুবরণ শোকপ্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, উত্তর কর্নাটকের হাভেরি জেলার বাসিন্দা ওই মৃত ছাত্রের নাম নবীন শেখারাপ্পা জ্ঞানগউধর। তার বয়স মাত্র ২০ বছর। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ছিলেন নবীন। গতকাল বেলা একটার সামান্য পর তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই আচমকা বোমা পড়লে তিনি সহ ডজন খানেক সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিহত ছাত্রের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ইতিমধ্যেই রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করছেন। খারকিভ এবং ইউক্রেনের অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে যে সব ভারতীয় শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, তাদের নিরাপদে দেশে ফেরানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছে সরকারি ভাবে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতরাও একই চেষ্টা চালাচ্ছেন সর্বোচ্চ স্তরে।

এদিকে হাভেরি জেলার মুখ্যমন্ত্রী বোম্মানি নবীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নবীনের দেহ যাতে তাড়াতাড়ি দেশে আনা যায়, সে বিষয়েও তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় রাখছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। গতকাল মঙ্গলবার যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে ইউক্রেনের খারকিভ শহরে আক্রমণ তীব্রতর করেছে রাশিয়া। অভিযোগ, ক্লাস্টার বোমা ও ভ্যাকুয়াম বোমার মতো নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। সোমবারই বেলারুশে শান্তি বৈঠকে বসেছিলেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার দূত। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টা আলোচনার পরেও তারা কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। আগামী দিনে আবারও বৈঠক হবে কিনা, তাও এখনও স্পষ্ট নয়।

এই অবস্থায় খারকিভের জনবসতি অঞ্চলে কামান থেকে গোলাবর্ষণ করতে থাকে রুশ সেনা। যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১১ জন শিশু। এবার সেই তালিকায় নাম ঢুকে পড়ল কর্নাটকের নবীনেরও।

এদিকে ইউক্রেনে ভারতের উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন সেখানকার ভারতীয় শিক্ষার্থীরা সরকারকে তাঁদের প্রশ্ন, আপনারা কি আমাদের জীবিত অবস্থাতেই দেশে ফেরাবেন না কি মৃতদেহ নিয়ে যেতে চান!

গতকাল মঙ্গলবার খারকিভের রাস্তায় খাবার কিনতে বেরিয়ে রাশিয়ার বোমা বিস্ফোরণে নবীনের মৃত্যুর পরই খারকিভের আর এক ভারতীয় ছাত্রী পূজা প্রহরাজ টুইট করে ভারত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘গত ছ’দিনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে খারকিভের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কিছুই করা হয়নি। এর মধ্যেই আজ একজন ভারতীয় ছাত্র নিহত হলেন। কাল হয়তো আরও ১০০ জন মারা যাবেন। তারপর ১০০০।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নাম করে এরপর ওই ছাত্রী জানতে চান, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কি আমাদের মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান?’

সমগ্র ইউক্রেনে এখনও আটকে রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী। ভারতের এই ছাত্রছাত্রীদের আত্মীয়রা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন দিল্লিকে। জবাবে সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে জানানো হয়, পড়ুয়াদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আত্মীয়দের এই উদ্ধার কাজের প্রতি মূহূর্তের খবর দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। যদিও খারকিভের ওই ছাত্রীর দাবি, তাঁদের নিরাপত্তার সামান্য ব্যবস্থাও করেনি ইউক্রেনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস। বরং
আমরা ফোন করলেও তারা আমাদের ফোন পর্যন্ত ধরছেন না।

ইউক্রেনের খারকিভে আটকে থাকা ওই ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই দিনের পর দিন খেতে পাচ্ছেন না। মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয়— কোনও কিছুরই ব্যবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের স্থানীয় বাসিন্দারাও তাঁদের সাহায্য করতে চাইছেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছাত্রীরই পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দুই ভারতীয় ছাত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনের মানুষ তাঁদের উপর ক্ষিপ্ত,বিরক্ত ও সাহায্যে বিমুখ। কেন তাঁদের প্রতি এমন আচরণ? তার কারণ ওই ছাত্রীরা মুখে না বললেও অনুমেয়। কেন না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরোধী সংকল্প প্রস্তাবে রাষ্ট্রপুঞ্জে কোনও রকম মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে ভারত।

খারকিভের ওই ছাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘খারকিভে আমরা জানতে পারছি,রাজধানী কিয়েভে উদ্ধার কাজ চলছে। কিন্তু খারকিভের অবস্থা কিয়েভের থেকেও খারাপ। এখানে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা বর্ষণ চলছে। খারকিভে আমরা পাঁচ মিনিটের জন্যও আমাদের আশ্রয় স্থল থেকে বের হতে পারছি না। তার কারণ যে কোনও মুহূর্তে প্রাণ হারানোর ভয় রয়েছে এখানে।’

কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস/এম আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »