সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে ইউক্রেনে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশী প্রবাসীর বসবাস। পোল্যান্ড বাংলাদেশ দূতাবাস ইউক্রেনে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় সেখানকার দায়িত্বও পালন করছে
ইউরোপ ডেস্কঃ আজ শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, ‘পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্র বৈধ পাসপোর্টধারীরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাসপোর্ট প্রদর্শন করে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যাদের পাসপোর্ট নেই, তারা ট্রাভেল পাস নিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন। প্রত্যেক বাংলাদেশীকে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
ওয়ারশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি দল শনিবার সকালে পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের পথে রওনা হবে। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে ঢুকতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীদের তারা সহায়তা প্রদান করবেন।
ইউক্রেনের ভেতরে বিচ্ছিন্ন বোমা বিস্ফোরণ, পেট্রোল অপ্রতুলতা এবং পথিমধ্যে অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের কারণে এই মুহূর্তে ওই বর্ডারের দূরবর্তী এলাকায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সীমান্তের দিকে রওনা হতে হলে পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রওনা দিতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন,”যে সব বাংলাদেশী ইউক্রেন ছেড়ে পোল্যান্ডে আসবে তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকার চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করবে।” তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে সম্ভাব্য অপসারণের বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ক্যাব) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।
পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন ওয়ারশ থেকে এক ফোনালাপে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবিকে বলেন,ইউক্রেনে বসবাসরত আনুমানিক প্রায় দেড় হাজার প্রবাসীদের মধ্যে”প্রায় ৫০০ বাংলাদেশির সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগে আছে। আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে বলেছি”।
রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা আরও বলেন, “অনেকদিন যাবৎ আমরা জানার চেষ্টা করছি কতজন বাংলাদেশী ইউক্রেনে বসবাস করেন। কিন্তু কোনোমতেই সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না।” রাষ্ট্রদূত জানান, নানা সূত্রে তাদের কাছে যেসব খবরাখবর রয়েছে তাতে দেখা যায়, চার ক্যাটাগরির প্রায় হাজার দেড়েক বাংলাদেশী দেশটিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন ব্যবসায়ী, ছাত্র, চাকরিজীবী ও শ্রমিক। রাষ্ট্রদূত জানান- “কে, কোথায় আছে তা জানার জন্য চেষ্টা করছি। তাদের মধ্যে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে সেটাতেও আমরা যোগাযোগ রাখছি সারাক্ষণ।” এ পর্যন্ত ৫০০ বাংলাদেশীর সঙ্গে দূতাবাসের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন। তারা কেউই বের হয়ে আসতে পারেননি বা চাননি।
“বাকিদের সম্পর্কে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।” তিনি বলেন, “ভোরবেলা যখন রুশ বাহিনী হামলা চালাতে শুরু করে তখনই একজন বাংলাদেশী প্রবাসী ফোন করে জানান, ভয় আর আতঙ্কের কথা। তখন অবশ্য তিনি কাঁদছিলেন। পোল্যান্ডস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশীদের সতর্ক করা হয়। বলা হয়, পোল্যান্ড সরকার ১৫ দিনের জন্য শেনজেন ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে। যারা ইউক্রেন ছাড়তে চান তারা এই সুযোগ নিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশীরা এতে সাড়া দেননি। তাদের ভয় ১৫ দিনের ভিসা শেষ হয়ে গেলে তারা অবৈধ হয়ে যাবেন। এ কারণে খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশি ইউক্রেন ছেড়েছেন”।
এদিকে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে একজন বাংলাদেশী প্রবাসী ইউরো বাংলা টাইমসকে জানান, ভোরে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর থেকেই হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্তের দিকে ছুটে চলেছে। তিনি আরও জানান প্রায় দশ জনের বাংলাদেশীদের একটি দলের সাথে তিনিও পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস