বাংলাদেশের সময়ের সাথে মিল রেখে রাত ১২ টা ১ মিনিটে (ভিয়েনার সময় সন্ধ্যা ৭ টা ১ মিনিট) বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির কার্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন বিভিন্ন সংগঠন
ইউরোপ ডেস্কঃ “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি।। ছেলে হারা শত মায়ের
অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।। আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।।”
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচয়িতায় এবং আলতাফ মাহমুদের সুর করা মহান ভাষা আন্দোলনের এই ঐতিহাসিক গানের মূর্চ্ছনায় বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির কার্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্প স্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে অমর একুশে উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। অবশ্য বৈশ্বিক মহামারী করোনার বিধিনিষেধ মোতাবেক সর্বোচ্চ ৫০ জনের অনুমতি থাকলেও উপস্থিতি কিছু বেশীই ছিল।
বাংলাদেশের সময়ের সাথে মিল রেখে রাত ১২ টা ১ মিনিটে বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মামুন হাসানের নেতৃত্বে সমিতির নেতৃবৃন্দ প্রথমে শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন।
তারপর ধারাবাহিকভাবে শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অস্ট্রিয়া বিএনপি,নারায়ণগঞ্জ অস্ট্রিয়া এসোসিয়েশন, অস্ট্রিয়া কুমিল্লা সমিতি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সমিতি অস্ট্রিয়া, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমিতি,বিক্রমপুর সমিতি অস্ট্রিয়া, বাংলা ক্লাব অস্ট্রিয়া, মুন্সিগঞ্জ জেলা অস্ট্রিয়া সমিতি, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি,অস্ট্রিয়া দোহার সমিতি এবং বাংলা হিন্দু কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রিয়া।
তাছাড়াও আরও অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে। শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ সহ অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আরেফিন রানা।
শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণের পর বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মামুন হাসানের সঞ্চালনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান ভাষা আন্দোলনের উপর এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
আলোচনার শুরুতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মামুন হাসানের অনুরোধে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন নেয়ামত। তারপর ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণ এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মামুন হাসান তারপর উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে ধারাবাহিকভাবে আহবান করেন।
মহান মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের উপর প্রথমে বক্তব্য রাখেন বাংলা ক্লাব অস্ট্রিয়ার মোহাম্মদ রুবেল,তারপর ক্রমান্বয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমিতির মামুন আনসারি,তাকি নাজিব, নারায়ণগঞ্জ অস্ট্রিয়া সমিতির মেজবাহুল আরিফ বাবু,অস্ট্রিয়া কুমিল্লা সমিতির তাহের সরকার, বিক্রমপুর সমিতির শাওন, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির পক্ষে সাইফ আহমেদ চৌধুরী এবং মোঃ আবুল কাশেম।
তাছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন মুন্সিগঞ্জ জেলা সমিতির জুয়েল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অস্ট্রিয়া বিএনপির শাহীন ভূঁইয়া,কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার এবং এহসান উল্লাহ আলমগীর। সভাপতির শেষ বক্তব্যের পূর্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সন্মানিত সদস্য হেলাল উদ্দিন মিয়া।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের আলোচনায় সকলেই ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের বীরত্বের ইতিহাস এবং রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। অনেক বক্তা শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন,তাদের এই আত্মত্যাগের জন্যই আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ভাষা।
একজন বক্তা তার বক্তব্যে বলেন,পৃথিবীর ইতিহাসে আমরাই একমাত্র জাতি,যারা নিজের মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য অকুতোভয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছি। অস্ট্রিয়া কুমিল্লা সমিতির সন্মানিত সদস্য তাহের সরকার বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির বর্তমান কার্যকরী কমিটির নিকট ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশ কমিউনিটির জন্য অতি দ্রুত একটি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন হাসান জানান সমিতি খুব শীঘ্রই সমিতির কার্যালয়ে একটি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সমাপনী বক্তব্য রাখেন আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহান ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। তাছাড়াও অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের এই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুন্দর ও সাফল্য মন্ডিত করায় সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের শেষে বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতি উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে রাতের খাবারের আপ্যায়ন করেন।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস