১ম পর্ব
ড. মোঃ ফজলুর রহমান: ১। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। আমাদের জাতীয় জীবনে ৭ই মার্চ সোনার অক্ষরে লেখা একটি অনন্য সাধারণ দিন বটে। বিগত ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানী স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর ভ্রুকুটি এবং রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিশ্বের বৃহত্তম জনসভায় উপস্থিত ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে তৎকালীন রমনা রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে অত্যন্ত প্রাঞ্জল, সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় প্রচণ্ড রকমের তেজোদীপ্ত এবং বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাই বাঙালি জাতির জীবনে এই দিনটি চির অম্লান, চির ভাস্বর
এবং চিরস্মরণীয়।
২। বিজাতীয় শাসন-শোষণের কবলে হাজার বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং নিস্পেষিত বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। বহু ধরনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং অপরিমেয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশমাতৃকার মুক্তি তথা সুমহান স্বাধীনতা আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। জাতি- ধর্ম-বর্ণ এবং গোত্র নির্বিশেষে আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই জানেন, মানেন এবং স্বীকার করেন আমাদের এই রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধ কোন দৈব-দুর্বিপাক কিংবা কোন আকস্মিক ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি। এরই পাশাপাশি আমাদের পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতাও খুব সহজে কিংবা হঠাৎ করেই অর্জিত হয়নি। এই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতিকে যুগের পর যুগ ধরে অবর্ণনীয় জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন এবং নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। তারও পরে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন ও সংগ্রাম করার পাশাপাশি দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে হয়েছে। সবশেষে চরম আত্মত্যাগ এবং অনেক বেশি পরিমাণে মূল্য ও দিতে হয়েছে।
৩। এমতাবস্থায় একথা ঐতিহাসিকভাবেই সত্য যে, কারও কোন দয়া দাক্ষিণ্য কিংবা কারও সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা অথবা কোন আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করিনি। বরং অনেক চড়া দামে খরিদ করে নিয়েছি। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পুরো বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস ধরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে হয়েছে। বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে শহীদ হতে হয়েছে। এরই পাশাপাশি দুই লক্ষাধিক মা বোনকে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, দেশের স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতিকে যতটা চড়া মূল্য দিতে হয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোন দেশ কিংবা জাতিকে ততটা আত্মত্যাগ করতে হয়নি কিংবা মূল্য ও দিতে হয়নি। তাই পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ও জাতির তুলনায় আমাদের কাছে আমাদের স্বাধীনতার মূল্য এবং গুরুত্ব অনেক বেশি।
৪। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ১৯৪৮ সাল থেকেই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য বাঙালি জাতি জীবনপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা এবং দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে এই ভাষাকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এহেন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাই বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দী। পরবর্তীকালে এই ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সনে ঢাকার
রাজপথ শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন ফরিদপুর জেলখানায় বন্দী ছিলেন। রেডিও এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি এই সংবাদ জানতে পারেন। ফলে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর এহেন অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে কারান্তরালে থাকাবস্থায়ই তিনি প্রতিবাদমুখর হন এবং অনশন করেন। পরে এক সময় এই অনশন ভঙ্গ করেন এবং কারাগার থেকে মুক্ত হন।
৫। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভভাবে আবারও দেশবাসীর বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপৃত হন। এই সময়ে তিনি দলের প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদেরকে সংগঠিত করতে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর এহেন প্রচেষ্টা ও তৎপরতায় তিনি ব্যাপকভাবে সাড়া পান এবং অনেকটা সফল ও হন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে উপরোক্ত ১৯৫২ সনেই চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীনের রাজধানী পিকিং (বর্তমান নাম বেইজিং) -এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে আতাউর রহমান খান এবং তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধু ও চীন সফর করেন। ১৯৫২ সনের ২রা অক্টোবর থেকে ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১০ দিন ধরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর এই সফরের মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত হন, ঠিক তেমনই দেশ ও জাতির সার্বিক মুক্তি তথা স্বাধিকারের প্রশ্নে অনাগত ভবিষ্যতে তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্যের ব্যাপারেও তিনি নতুনভাবে দীক্ষা লাভ করেন।
৬। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত চীন সফরের সময়ে বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল মাত্র সাড়ে বত্রিশ বছর। কিন্তু এহেন অল্প বয়সে ভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতাকে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত শৈল্পিক এবং নান্দনিক ভাষায় তাঁর রচিত “আমার দেখা নয়াচীন” গ্রন্থে বেশ প্রাঞ্জল এবং হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বর্ণনা করেছেন। ফলে উক্ত বইটি বেশ সুখপাঠ্য বই হিসেবে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে এবং পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছে। এরই পাশাপাশি তাঁর বইয়ে এহেন বাঙ্ময় এবং প্রাণবন্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে তাঁর নিজের অফুরন্ত দেশপ্রেম, দেশের জনগণের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ এবং অনাগত ভবিষ্যতে এক অগ্রগামী ও দূরদর্শী রাজনৈতিক বোদ্ধার পরিচয়কে অনিবার্য এবং অবশ্যম্ভাবী করে তুলে। অনেক তরুণ বয়সে এহেন মর্যাদাপূর্ণ সফরে গিয়েও চীনের নাগরিকদের নিত্যদিনের জীবন সংগ্রাম, মাতৃভাষার প্রতি চীনাদের অকৃত্রিম দরদ এবং তাদের অতুলনীয় দেশপ্রেম দেখে বঙ্গবন্ধু বিস্ময়াভিভূত হন। যা তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।
৭। অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সে রাজনীতির মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও চীন সফরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি উপরোল্লিখিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্তসমূহের আলোকে দূরদর্শী মুজিব অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, দেশের আপামর জনসাধারণের অকুণ্ঠ
সমর্থন এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া কোন আন্দোলন কিংবা সংগ্রাম অথবা কোন বিপ্লব তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা এবং কোন বৃহত্তর যুদ্ধে জয়ী হওয়া ও সম্ভব নয়। তাঁর এহেন হৃদয় নিঃসৃত উপলব্ধি থেকেই তিনি পরবর্তীকালে দেশের গরিব দুঃখী মেহনতি জনসাধারণের সাথে আরও অধিক পরিমাণে ঘনিষ্ঠ এবং সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত হন। তদুপরি জনগণের সার্বিক মুক্তি এবং কল্যাণের লক্ষ্যে নিজেকে সমর্পণ করার দীক্ষা লাভ করেন। এরই পাশাপাশি হাজার বছর ধরে শোষিত- বঞ্চিত এবং নিপীড়িত জাতির অধিকার ফিরে পাওয়ার নিমিত্তে নিজেকে জনতার কাতারে এনে শামিল করেন। যা তিনি সারা জীবন ধরে ধারণ করেছেন এবং মনে প্রাণে লালন করেছেন। এহেন ধারণার আলোকেই তিনি দেশের গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় নিয়ে সারা জীবন ধরে ব্যাপৃত থেকেছেন। দেশের আপামর জনসাধারণের
সামগ্রিক কল্যাণের জন্যই তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে অকাতরে বিসর্জন দিয়েছেন।
৮। অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, কোন দেশকে স্বাধীন করতে হলে সবকিছুর আগে দেশের আপামর জনসাধারণকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে তাদেরকে অবশ্যই জাগিয়ে
তুলতে হবে। এরই পাশাপাশি স্বাধীনতার দাবিতে তাদেরকে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করতে হবে এবং উদ্দীপ্ত করতে হবে। তদুপরি দেশকে এবং দেশের জনগণকে সম্যকভাবে প্রস্তুত করার মাধ্যমে স্বাধীনতার দাবিকে অবশ্যম্ভাবী এবং অপরিহার্য করে তুলতে
হবে। তিনি খুব ভাল করেই জানতেন দেশের মানুষ যখন পুরোপুরিভাবে জেগে উঠবে এবং স্বাধীনতার দাবি ও গুরুত্ব সম্যকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে তখন তারা নিজেরাই স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হবে এবং রাজপথে নেমে আসবে। জীবন ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি জানতেন যে, পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং রবার্ট ক্লাইভের সৈন্যদের মধ্যে যখন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতেছিল তখন যুদ্ধক্ষেত্র সংলগ্ন ভাগীরথী নদীর অপর তীরের কৃষকেরা ধানক্ষেতে কাজ করতেছিল। তারা ছিল নিরুদ্বিগ্ন এবং ভাবলেশহীন। তারা তখনো জানতো না পলাশীর প্রান্তরে ঠিক কি হচ্ছে। তাদের কাছে
সেটা ছিল রাজায় রাজায় যুদ্ধ। নবাব কিংবা ক্লাইভ কারও পক্ষেই জনতার কোন সম্পৃক্ততা ছিলনা। জনতার সম্পৃক্ততা থাকলে ফলাফল অন্য রকম হতে পারতো। কিন্তু কেউই সেদিকে নজর দেননি কিংবা এ বিষয়টিকে কেউ বিবেচনায় ও নেননি।
৯। আমাদের জাতীয় জীবনে বছরের বিভিন্ন মাসের বিভিন্ন তারিখ সমূহকে গভীর আগ্রহ নিয়ে এবং বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে বিভিন্ন ধরনের স্মৃতিবহ ঘটনাবলী আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে স্মরণ করে থাকি এবং তা পালন ও করে থাকি। এই সমস্ত দিনগুলির মধ্যে গুরুত্ব, মাহাত্ম্য এবং তাৎপর্যের দিক দিয়ে ৭ই মার্চ সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যমণ্ডিত বটে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি লগ্নে আন্দোলন ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ জাতির পিতা শেখ মুজিব তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। এই সুদূরপ্রসারী ভাষণের মাধ্যমে তিনি দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যকে সামনে রেখে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং এই যুদ্ধের রূপরেখা সবিস্তারে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা সম্বলিত
ভাষণের প্রতিটি বাক্য শেষে ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস এবং মুহুর্মুহু করতালি। স্বাধীনতাকামী প্রতিটি বাঙালি সেদিন তা হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি দিয়ে এবং গভীরতম মমত্ববোধের সাথে অনুধাবন করেছেন।
১০। বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত ইতিহাস সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তারা নিশ্চয়ই জানেন বাঙালিদের সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানীরা কখনো কোন উচ্চ ধারণা পোষণ করতো না। কোন ক্ষেত্রে কোন একজন
বাঙালির সাফল্য কিংবা শ্রেষ্ঠত্বকে তারা কখনো মেনে নিতে পারতো না। উপরন্তু প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঙালিকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা ছিল তাদের মজ্জাগত বদ অভ্যাস। বাঙালিদের প্রতি এহেন তুচ্ছ তাচ্ছিল্যমূলক মনোভাব ও আচরণ এবং বৈষম্যমূলক
অবমূল্যায়ন বঙ্গবন্ধু কখনো মেনে নিতে পারেননি। তাই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর এহেন শোষণ-বঞ্চনা এবং দমন-নিপীড়নমূলক আচার-আচরণের প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত বিরোধী দলসমূহের কনভেনশনে “বাঙালিদের মুক্তি সনদ” হিসেবে খ্যাত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে তা বিষয়সূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রস্তাব করেন। কিন্তু উক্ত সভার সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ৬ দফা নিয়ে কোন প্রকার আলোচনা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং অস্বীকৃতি জানান। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, উক্ত কনভেনশনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাড়া
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য দলসমূহের বাঙালি নেতারাও বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে সমর্থন করেননি। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু উক্ত সম্মেলন বর্জন করেন এবং পরের দিন লাহোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর উপরোক্ত ৬ দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ড. মোঃ ফজলুর রহমান,সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবঃ), লেখক ও কলামিস্ট
(চলবে)
বি /ইবিটাইমস/এম আর