মহাকালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু

৭ম পর্ব                   

 ড. মোঃ ফজলুর রহমানঃ ৬১। উপরোল্লিখিত নানামুখী ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আরও ভয়াবহতম এবং অত্যন্ত দুরূহতম
সমস্যা হলো অস্ত্র সমর্পণে অনিচ্ছুক বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত গুপ্ত হত্যা। এদের কেউবা ছিলেন স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী পাকিস্তানপন্থী রাজাকার, আবার কেউবা তৎকালীন চীনপন্থী নকশাল, কেউবা হক-তোয়াহা-আলাউদ্দিন- মতিন- সিরাজ শিকদার -প্রমুখদের অনুসারী সর্বহারা গ্রুপ। আবার কেউবা স্বদেশ প্রেমিক অথচ সমাজ বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধা। কেউবা মুক্তিযোদ্ধা থেকে ডাকাত। এদের সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সন্তুষ্ট করা সদ্য দায়িত্ব গ্রহণকারী নতুন সরকারের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। তাছাড়া এদেরকে শক্ত হাতে দমন করাও সম্ভব ছিল না। এরই পাশাপাশি সদ্য স্বাধীন দেশে পুলিশ দুর্বল, সেনা বাহিনী দুর্বল, সিভিল প্রশাসন দুর্বল, তদুপরি অব্যাহত ছিল শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের নানামুখী ষড়যন্ত্র। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সংবেদনশীল মনের, অত্যন্ত দয়ালু এবং খুবই হৃদয়বান মানুষ। কড়া হাতে শাসন করা তাঁর স্বভাবে ছিল না। তাই তিনি কঠোর ও হতে পারেননি। আর এই সুযোগটি পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়েছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি এবং বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট উগ্র বাম সমর্থক গোষ্ঠী।

৬২। দেশের স্বাধীনতা বিরোধী এবং উগ্রপন্থী সর্বহারা পার্টির সদস্যদের উপরোক্ত অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে অরাজক এবং নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করা ছাড়াও তাদের প্রকাশ্য আহবান ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করা। এরই পাশাপাশি “সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে শ্রেণীহীন ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ গঠন করার লক্ষ্যে আরেক স্লোগানধারী সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির ক্যাডাররা ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯৭৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ৪,৯২৫ টি গুপ্ত হত্যা করেছিল। ৬০ টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি লুট করে জনজীবনকে অস্থির করে তুলেছিল। ১৯৭২-৭৩ সালের এই সময়টাতে পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ এবং পিডিপি সহ বেশিরভাগ পাকিস্তানী অনুচর রাজনৈতিক দলগুলো গোপনে জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রেসক্রিপশনে ‘মুসলিম বাংলা’ কায়েমের জন্য তাদের সকল শক্তি নিয়ে তৎপরতা চালিয়েছিল। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ঐ সময়ে মাওলানা ভাসানী এদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। এককালের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও বাম রাজনীতিক মাওলানা সাহেব হয়ে গেলেন সন্ত্রাসের গুরু ও পাকিস্তান কায়েমের নেতা। তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন ‘বাংলাদেশকে আমি ভিয়েতনামে পরিণত করব।’ সেই সময়টিতে তিনি খুবই দায়িত্বহীনের মতো অনেক আচরণ করেছিলেন। তিনি হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলে বসলেন- ‘জয় বাংলা এবং আওয়ামী লীগ তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না। তোমাদের ভাগ্য বিহারীদের মতোই হবে’ [দ্রঃ বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব- ৩, মোস্তফা জব্বার; ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ; দৈনিক জনকণ্ঠ, ০৩-০৫-২০২১]।”

৬৩। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এবং এক নদী রক্ত পেরিয়ে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশের পুনর্গঠনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিসমূহের ইস্পাত কঠিন ঐক্য এবং তৎসহ সহনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ দেশবাসী আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু এর বিপরীতে কিছু বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট নেতাকর্মীদের দুর্দমনীয় লোভ লালসা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যাপক দুর্নীতির কারণে দেশবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাদের এহেন নৈতিকতা বিবর্জিত অপকর্মসমূহের কারণে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি, উগ্র বামপন্থী এবং সর্বহারা পার্টির সদস্যরা একে একে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে হত্যা করে। এছাড়া খাদ্য ও পাটের গুদামে আগুন, খাদ্য দ্রব্য বহনকারী ট্রেন-ট্রাক ধ্বংস, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি লুট, সার কারখানায় নাশকতা, সন্দ্বীপ চ্যানেলে গম ভর্তি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া সহ নাশকতামূলক বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম সমূহের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত হন এবং দিশেহারা হয়ে পড়েন। উপরন্তু মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং মেজর (অবঃ) জলিল ও আ স ম আবদুর রব এবং শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত জাসদ -এর অত্যন্ত লাগামহীন, বেপরোয়া এবং
ক্রমবর্ধমান আস্ফালনের পাশাপাশি ঐ সময়ের অনেক বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের অতি মাত্রায় দায়িত্বহীন আচরণ এবং প্রতিনিয়ত অস্ত্রের জোরে সরকার উৎখাতের হুমকি মোকাবেলা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু অনেকটা বেসামাল এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একই কারণে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

৬৪। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিগণ জানেন, ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার দিনটি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনটি বছরের প্রতিটি দিনই বঙ্গবন্ধুকে এমন চরম বৈরী এবং
দুঃসহনীয় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। সচেতন দেশবাসীর নিশ্চয়ই স্মরণ রয়েছে যে ঐ সময়ে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন সহ সর্বমোট ৩১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৩০৭ জন সদস্যই আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। তাই ক্ষমতার লোভে কিংবা মোহে নয়, বরং ঐ সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি দেশের অস্বাভাবিক, অরাজক এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশকে পুনরায় সুশৃঙ্খল ধারায় ফিরিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু নিতান্ত বাধ্য হয়েই তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লব তথা বাকশাল কর্মসূচী ঘোষণা করেন। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি এই কর্মসূচী ছিল বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য একটি সুচিন্তিত এবং সুপরিকল্পিত বৈপ্লবিক কর্মসূচী। তাই এই কর্মসূচী ঘোষণার পর দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে যায়।

৬৫। পরবর্তীকালে এই কর্মসূচীর আওতায় দেশ পর্যায়ক্রমে অনেকটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, এহেন জনবান্ধব এবং যুগান্তকারী কর্মসূচী বাস্তবায়নের পূর্বেই দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ক্রীড়নক হিসেবে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁকে হত্যার পর দেশের সামগ্রিক রাজনীতির হাল হকিকত এবং গতি প্রকৃতি পুরোপুরিভাবে ওলটপালট হয়ে যায়। পরবর্তীকালে খুবই ঠাণ্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে দেশকে পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। লাখো শহীদের রক্তস্নাত সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শের আলোকে প্রণীত সংবিধান থেকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রকে বিসর্জন দেয়া হয়। আবহমান কাল ধরে প্রচলিত আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়। এরই পাশাপাশি সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।

৬৬। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত চারটি আদর্শ তথা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে ১৯৭২ সনের ১৬ই জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সভায় প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন- “… আমি জানি আমার মতো আপনারাও চারটি আদর্শ সমর্থন করেন। এই চারটি আদর্শের ভিত্তিতে আমরা দেশকে বাঁচাতে চাই। আমরা সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চাই। আমরা নতুন প্রচেষ্টা নিয়েছি। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। … বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আমার আন্দোলন। এই জাতীয়তাবাদ না থাকলে আমাদের স্বাধীনতার অস্তিত্ব নষ্ট হবে। ধর্মনিরপেক্ষতাও আমার আদর্শ। এখানে
সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নাই … ।” [দ্রঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মারক গ্রন্থ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৪৬৫]।

৬৭। উপরোল্লিখিত একই ব্যাপারে ১৯৭২ সালের ১৯শে আগস্ট ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন-
“… আমার দেশে একদল লোক সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জীবনভর আমি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। রক্ত দিয়েছে একটা আদর্শের জন্য। জাতীয়তাবাদ, যা’ তোমরা বিশ্বাস করো, এটা হলো- আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার সভ্যতা এবং বাংলার ইতিহাসই বাংলার জাতীয়তাবাদ। আমি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তোমরাও তা’ করো। শোষণহীন সমাজ, সুষম বণ্টন, সম্পদের মালিক জনগণ, তোমরা তা বিশ্বাস করো। এই লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য কোন শর্ট-কাট রাস্তা নাই। আস্তে আস্তে যেতে হবে।” [দ্রঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মারক গ্রন্থ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৪৯৯]।

৬৮। দেশের শিক্ষিত এবং সচেতন ব্যক্তিবর্গ নিশ্চয়ই জানেন, বঙ্গবন্ধু সরকার গঠনের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এক এক করে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করতে থাকে। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর
যোগদানের প্রশ্নে পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত শর্ত পাকিস্তান মেনে নিতে এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করতে বাধ্য হয়। এরই ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু উক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন এবং ইসলামী
সম্মেলন সংস্থায় ৩২ তম সদস্য হন। তারও পরে এক এক করে কমনওয়েলথ এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় সদস্য হলো বাংলাদেশ। এরই পাশাপাশি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই সময়ের চীন সরকার কর্তৃক দুই দুইবার ভেটো দেয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আমলে ১৯৭৪ সনের ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৩৬ তম দেশ হিসেবে জাতি সংঘের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। এমতাবস্থায় ঐ বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯ তম অধিবেশনে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষাকে বিশ্ব সভায় অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যান।

৬৯। আমরা সবাই জানি ১৯৭২ সনের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তারিখ থেকে ১৯৭৫ – এর ১৫ই আগস্টের ভোর রাত পর্যন্ত মোট ১৩১৪ দিনের মধ্যে ১৩১২ দিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন ছিলেন। স্বীকৃত মতেই দেশে বিদেশী সৈন্য অবস্থান করা সত্ত্বেও ৫৭ টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় পৃথিবীর ১২৬ টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। পরে ১৯৭২ সালের ১০ই অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্ব শান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পদক ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম মুখর জীবনের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম এবং তাঁর অসাধারণ মেধা ও প্রজ্ঞার প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তদুপরি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল প্রথম বৈশ্বিক তথা আন্তর্জাতিক সম্মান।

৭০। উপরোল্লিখিত পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর জাতির পিতা বলেছিলেন- “এ সম্মান কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের। জুলিও কুরি শান্তিপদক সমগ্র বাঙালি জাতির।” পরবর্তীকালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের দু’দিন ব্যাপী সম্মেলনের শেষদিন অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ২৩শে মে বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপরোক্ত সংস্থার তৎকালীন
মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। পদক প্রদান কালে মহাসচিব বলেন- “শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন। আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধু ও বটেন।” দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর এই পদক প্রাপ্তি ও অর্জন তাঁর সমসাময়িক কালের দেশী বিদেশী অনেকেই সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এই পদক তাদের কাছে ছিল চোখের বালি এবং অনেক বেশি ঈর্ষণীয় বিষয়।

ড. মোঃ ফজলুর রহমান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবঃ), লেখক ও কলামিস্ট 

(চলবে)

বি রি /ইবিটাইমস/এম আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »