স্পোর্টস ডেস্ক: অফ-স্পিনার নাহিদুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অষ্টম আসরে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মঙ্গলবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কুমিল্লা ৬৩ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালকে। তৃতীয় ম্যাচে এটি দ্বিতীয় হার বরিশালের।
প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৮ রান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এরপর নাহিদুলে বোলিং নৈপুন্যে ১৭ দশমিক ৩ ওভারে ৯৫ রানে গুটিয়ে যায় বরিশাল। মাত্র ৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া নাহিদ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার চেষ্টা করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যামেরুন ডেলপোর্ট ও মাহমুদুল হাসান জয়। সাকিবের করা প্রথম ওভার থেকে মাত্র ১ রান নেন তারা। তবে নাইম হাসানের দ্বিতীয় ওভার থেকে ১৫ রান তুলেন ডেলপোর্ট ও জয়। এরমধ্যে ১টি ছক্কা ও দু’টি চারে ১৪ রান নেন জয়। সাকিবের করা তৃতীয় ওভারে তিনটি চার মারেন ডেলপোর্ট। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেও বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছিলেন ডেলপোর্ট। নাইমের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে স্টাম্পড হলে ১৩ বলে ৪টি চারে ১৯ রানে থামে ডেলপোর্টের ইনিংস। ৩৩ রানে ভাঙ্গে কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি।
এরপর ফাফ ডু-প্লেসিসের মত অধিনায়ক ইমরুল কায়েসও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। ডু-প্লেসিসকে ৬ রানে সাকিব এবং ইমরুলকে ১৫ রানে শিকার করেন ব্রাভো। তবে এক প্রান্ত আগলে, দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন জয়। এতে দলের স্কোর শতরানের কোটা পেরিয়ে যায়। মাহমুদুল-মোমিনুলের জুটি ভাঙ্গতে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে সব বোলারকেই ব্যবহার করেন সাকিব। অবশেষে ১৬তম ওভারে ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি স্পিনার জ্যাক লিন্টট ভাঙ্গেন মাহমুদুল-মোমিনুল জুটি । ৩৫ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৮ রান করেন জয়। চতুর্থ উইকেটে মোমিনুকে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন তিনি।
সাকিবের করা ১৭তম ওভারে ব্যক্তিগত ১৭ রানে মোমিনুল আউটে দলের স্কোর দাঁড়ায় ১১৭তে। শেষ দিকে আফগানিস্তানের করিম জানাতের ঝড়ো ২৯ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৮ রান পায় কুমিল্লা। জানাত ১টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন। ব্রাভো ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৫৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতেই কুমিল্লার অফ-স্পিনার নাহিদের ঘুর্ণিতে পড়ে বরিশাল। প্রথম ওভারের শেষ বলে বরিশালের ওপেনার সৈকত আলিকে খালি হাতে বিদায় দেন নাহিদুল। ঐ ওভারটি মেডেন উইকেট ছিলো। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তিন নম্বরে সাকিব আল হাসানকে ১ রানে ফিরিয়ে দেন নাহিদ। এতে ৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে বরিশাল।
শুরুর ধাক্কা সামালে ওঠার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। হৃদয় ছিলেন মারমুখী। দ্রুত দলের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তিনি। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। আফগানিস্তানের জানাতের বলে বোল্ড হবার আগে ১৪ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ রান করেন হৃদয়। এরপর উইকেটে আসেন ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল। ১টি চারে ইনিংস শুরু করেন তিনি। উইকেটে সেট হবার আগেই ৭ রান করা গেইলকে থামান নাহিদ। ইনিংসের ১০তম ওভারেই নিজের বোলিং কোটা পূর্ণ করেন নাহিদ। ৪ ওভারে ১ মেডেন ৫ রানে ৩ উইকেট শিকার করে কুমিল্লার সেরা বোলার নাহিদ।
গেইলের আউটের পর ক্রিজে আসেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান । রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ২টি বাউন্ডারির পর বিদায় নিতে হয় নুরুলকেও। ১৪ বলে ১৭ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেট হিসেবে দলীয় ৬৭ রানে সোহানের আউটের পর পরের দিকে ব্যাটারদের দুই অংকে পা দিতে দেননি কুমিল্লার শহিদুল-তানভীর ও জানাত। এতে ৮৪ রানে নবম উইকেট হারিয়ে হারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বরিশাল।
সতীর্থদের যাওয়া আসার মধ্যেও অন্যপ্রান্ত আগলে রেখেছেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে জীবন পাওয়া শান্ত। সেই শান্তকে শেষ ব্যাটার হিসেবে ফিরিয়ে বরিশালের ইনিংস ৯৫ রানেই শেষ করেন ফিজ। ৪৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করেন শান্ত।
২টি করে উইকেট নিয়েছেন তুলেন শহিদুল-তানভীর ও জানাত। ১ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। বরিশালের গুরুত্বপুর্ন তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন নাহিদ।
এ ম্যাচ দিয়ে ঢাকার প্রথম পর্ব শেষ হলো এবারের বিপিএলের। আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হবে।
ডেস্ক/ইবিটাইমস/এমএইচ