পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুরিতে প্রবল তুষারপাতের মধ্যে আটকে পড়া ২১ জন পর্যটকের মৃত্যু

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানিয়েছে, পাকিস্তানের জনপ্রিয় পাহাড়ী রিসর্ট শহর মুরিতে ভারী তুষারপাতে যানজটে আটকা পড়ে গাড়ির মধ্যে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত এই শহরে এখনও হাজার হাজার পর্যটক অবস্থান করছেন।হাজার হাজার যানবাহন এখনও আটকে থাকায় সরকার মুরিকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা রাস্তা পরিষ্কার ও আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার কাজে তদারকি করছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ শনিবার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, একটি বিধ্বংসী শীতকালীন তুষার ঝড় মুরি শহরে আঘাত হানলে এই উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকাশিত  ভিডিওতে দেখা যায় মুরির পাহাড়ে পর্যটকদের বহনকারী গাড়ি সমূহ বরফের ভিতরে ডুবে যায়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মুরিতে বরফে আটকা পড়ে পর্যটকদের এই “মর্মান্তিক মৃত্যু”তে গভীর শোক প্রকাশ করে ঘটনা “তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই ধরনের ট্র্যাজেডি প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে শক্ত প্রবিধানের ঘোষনা দিয়েছেন।”

কর্তৃপক্ষের অনুমান সাম্প্রতিক দিনগুলিতে এক লাখেরও বেশি গাড়ি এই এলাকায় প্রবেশ করায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। হোটেলগুলোতে জায়গা না পেয়ে অনেকে তাদের গাড়িতে ঘুমাতে বাধ্য হয়।গতকাল শনিবারও বহু মানুষ যানবাহনে আটকা পড়ে।

শতাব্দীর রেকর্ড সংখ্যক তুষারপাতের ফলে স্থানীয়রাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্তমানে উপদ্রুত এলাকার তাপমাত্রা মাইনাস – ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।শুক্রবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ১.২ মিটারের (৪ ফুট) বেশি তুষারপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

মুরিতে বেড়াতে আসা একজন পর্যটক উসমান আব্বাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,এই আকস্মিক শতাব্দীর ভয়াবহ তুষারপাতের ফলে “কেবল পর্যটকরাই নয়, স্থানীয় জনগণও গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।”  “সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে গেছে এবং বেশির ভাগ এলাকায় পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে– এটি হিমায়িত বা তীব্র ঠান্ডার কারণে জলের পাইপগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

সংবাদ সংস্থার খবরে আরও বলা হয়েছে হাজার হাজার পর্যটক রিসোর্টে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় একটি ভারী তুষার ঝড় এলাকাটিতে আঘাত হানে।প্রচন্ড ঝড়ের ফলে পতিত গাছের নিচে আটকে পড়া গাড়িতে থাকা উক্ত লোকজন মৃত্যুবরণ করেন।

পাকিস্তান পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী পাঞ্জাব প্রদেশের এই মুরিতে বছরে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক আগমন করে থাকেন।

পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, শহরের আশেপাশের অঞ্চলটিকে “দুর্যোগ এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, পর্যটকদের দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের সিভিল ডিফেন্স এই পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। ছোট শহর মুরিতে ছুটিতে থাকা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে শীতকালীন অবকাশে থাকা একজন পুলিশ অফিসার তার স্ত্রী ও ছয় সন্তান সহ বরফের নীচে গাড়িতে আটকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।

উত্তর পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের পাহাড়ি জেলা মুরি পাকিস্তানের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র।এই জেলাটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী পাহাড়ি শহরে না যাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া পর্যটকদের মুক্ত করার চেষ্টা করার সময় স্থানীয়রা আটকে পড়া পর্যটকদের খাবার ও কম্বল দিয়ে সাহায্য করছেন। পাকিস্তানের  আবহাওয়াবিদরা রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ আরও ভারী তুষারপাতের পূর্বাভাস দিয়েছেন। নিহত পর্যটকদের মধ্যে কে কোন দেশের এখনও জানা যায় নি।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »