বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের সাথে বৈঠকের পর অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তবে প্রাদুর্ভাবের পূর্বে প্রস্তুতির জন্য আমাদের হাতে সময় আছে বলে জানান তিনি।
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে, বর্তমানে অস্ট্রিয়া সফররত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(WHO) ইউরোপীয় আঞ্চলিক পরিচালক ড. হ্যান্স হেনরি পি. ক্লুজের সাথে বৈঠকের পর তারা ভিয়েনায় সন্ধ্যায় এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এপিএ জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক ড.হ্যান্স অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.ভল্ফগাং মুকস্টাইনের (গ্রিনস) সাথে বৈশ্বিক মহামারী করোনার নতুন রূপ ওমিক্রোনের আন্তর্জাতিক অবস্থা এবং মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বর্তমান করণীয় বিষয়াদী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এপিএ জানায়,বৈঠকের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগাং মুকস্টাইন বলেন, আমরা করোনার নতুন রূপ ওমিক্রোন সংক্রমণের বিস্তারকে আমরা এখনই থামাতে পারবো না।তবে আমাদের হাতে যেহেতু সময় আছে নানান সতর্কতা ব্যবস্থা অবলম্বন করে এর প্রকোপের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান,অস্ট্রিয়ায় নব গঠিত করোনার যৌথ সমন্বয় কমিটি বা টাস্ক ফোর্স ইতিমধ্যেই তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে।আগামীকাল তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বৈঠকে বসছে এবং বৈঠকের পর এক আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার বর্তমান করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকস্টাইন করোনার প্রতিষেধক টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোনিবেশ করেন। “আমরা ওমিক্রোনকে থামাতে সক্ষম হব না, তবে আমরা যতটা সম্ভব নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য সময় পেতে পারি,” বলেছেন মুকস্টাইন। তাই তিনি ক্রিসমাসের পূর্বে যাদের সময় হয়েছে,তাদের দ্রুত বুস্টার ডোজ নিতে বলেন। মুকস্টাইন জানান, অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত দেশের শতকরা ৭৩ শতাংশ মানুষ কমপক্ষে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে।
তিনি বিশেষজ্ঞদের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ওমিক্রোন করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে সুরক্ষা দিচ্ছে না তবে করোনার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ বেশ প্রতিরক্ষার কাজ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় আঞ্চলিক জোনের পরিচালক ক্লুজ তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোন বিশ্বব্যাপী এক নতুন নাটকীয়তার অবতারণা করেছে।ইউরোপের অনেক দেশ যখন করোনার কারনে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টায় রত ছিল, আর তখনই এই ওমিক্রোন সব কিছুই লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার জনগণের শতকরা ৭৩ শতাংশ নাগরিক কমপক্ষে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ পাওয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেন হু এর এই আঞ্চলিক পরিচালক।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, অস্ট্রিয়া এখন পর্যন্ত মহামারী ভালোভাবেই অতিক্রম করেছে।”তবে বিশ্বব্যাপী মহামারী ধারণ করার জন্য, আমাদের আরও ভ্যাকসিন দরকার।” আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।মুকস্টেইনের মতে, দেশগুলিকে “মি-ফার্স্ট মানসিকতা” থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
অস্ট্রিয়ার ফ্রি মেট্রো পত্রিকা Heute জানিয়েছে। আগামীকাল বুধবার অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারের চ্যান্সেলরি অফিসে ৯ টি রাজ্যের গভর্নরদের সাথে সরকার করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের ব্যাপারে আলোচনায় বসছে।বৈঠকে আরও থাকছেন নব গঠিত করোনার জাতীয় সমন্বয় কমিটি বা টাস্ক ফোর্স।
পত্রিকাটি আরও জানায়, অস্ট্রিয়ায় ওমিক্রোনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে সরকার দেশে জানুয়ারীতে পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২,৫২৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪১ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩৪৫ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে Salzburg রাজ্যে ৬২১ জন, OÖ রাজ্যে ৩৩৮ জন,Tirol রাজ্যে ৩৩২ জন, NÖ রাজ্যে ২৫৩ জন, Steiermark রাজ্যে ২৪১ জন, Vorarlberg রাজ্যে ২০৮ জন, Kärnten রাজ্যে ১৩৩ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৫৭ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৭,১৩০ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬২,৩২,০৫৫ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৯,৬ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৫৩,৯৬১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৫৩৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১৩,০১,৪৫৯ জন।বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৮,৯৬৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৪৭৭ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৭০৫ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস