নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের ফলে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় আজ এক আদেশে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশে ২জি প্লাস (2G+) নিয়ম অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,আজ থেকেই যে কোন দেশ হতে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই কঠোররতার কারণ হিসাবে করোনা ভাইরাসের নতুন রূপ ওমিক্রোনের প্রাদুর্ভাব বলেই মনে করা হচ্ছে।
এপিএ আরও জানায়, আজ মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে, কেবলমাত্র বৈধ 2G প্রমাণ রয়েছে এমন ভ্রমণকারীদের অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে তবে ২জি এর সাথে এখন নতুন পিসিআর পরীক্ষার নেতিবাচক ফলাফল জুড়ে দেওয়া হয়েছে।অর্থাৎ যে করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছে বা করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছে, তারাই শুধুমাত্র অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন পিসিআর পরীক্ষার সনদ সহ।যদি পিসিআর পরীক্ষার নেতিবাচক ফলাফল সাথে না থাকে তাহলে কমপক্ষে পূর্বের মত ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িতে এসে বা মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।এপিএ আরও জানিয়েছে, ২ জি থাকলেও এখন থেকে একটি আপ-টু-ডেট পিসিআর পরীক্ষা বা থার্ড-পার্টি পরীক্ষা থাকতে হবে কোয়ারেন্টাইন এড়াতে। তবে শিশু ও গর্ভবতী মহিলা যাত্রীদের এই কঠোর নিয়ম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রিয়াতে প্রবেশের নতুন কঠোর নিয়ম: পিসিআর পরীক্ষা বা বুস্টার টিকা ছাড়াও টিকা দেওয়া বা পুনরুদ্ধার করা ব্যক্তিদের আগমনের পূর্বে অনলাইন নিবন্ধন সাপেক্ষে এবং একটি নেতিবাচক পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে। একটি পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে স্ব-বিচ্ছিন্নতা এড়ানো যেতে পারে, যা ৭২ ঘন্টার বেশি হওয়া উচিত নয়, বা করোনা বুস্টার টিকা দেওয়ার প্রমাণ সহ।সম্পূর্ণ টিকা বা করোনাভাইরাস সংক্রমণের (2G) বেঁচে থাকার বৈধ প্রমাণ ছাড়াই, অস্ট্রিয়ানদের পাশাপাশি EU এবং EEA নাগরিকদের প্রাক-ভ্রমণ ছাড়পত্র এবং দশ দিনের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।বিনামূল্যে পরীক্ষা শুধুমাত্র পঞ্চম দিন থেকে সম্ভব।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ব্যতিক্রম: গর্ভবতী মহিলা এবং যারা স্বাস্থ্যগত কারণে টিকা দেওয়া যায় না তাদের 2G সনাক্তকরণ এবং অতিরিক্ত পিসিআর পরীক্ষা বা বুস্টার টিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যতিক্রমের কারণ অবশ্যই একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে।
স্কুল-বয়সী শিশুদের প্রবেশ: স্কুল-বয়সী শিশুদের নিনজা পাস বা অনুরূপ পরীক্ষার সনদপত্র নিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হযেছে। নিয়মগুলি বারো বছরের কম বয়সী শিশুদেরও প্রভাবিত করবে না। আপনাকে শুধুমাত্র কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং আপনার সঙ্গীর সাথে প্রাক-ভ্রমণ ছাড়পত্রের জন্য নিবন্ধন করতে হবে যদি প্রাপ্ত বয়স্ককেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, সর্বশেষ প্রবিধান অনুসারে, একটি এগারো বছর বয়সী শিশুকে তাদের পিতামাতার সাথে দেশে প্রবেশ করার পরে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না, যারা হয় তৃতীয় বা দ্বিতীয় টিকাপ্রাপ্ত এবং নতুনভাবে পিসিআর-পরীক্ষিত।একটি ব্যতিক্রম যাত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।স্বাভাবিক 3G নিয়ম এখানে রয়ে গেছে।তাই লোকেদের টিকা দিতে হবে, পুনরুদ্ধার করতে হবে বা নেতিবাচক পরীক্ষা করতে হবে।
কঠোর এন্ট্রি প্রবিধানের পরিপূরক: কঠোর প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও, তিনটি অতিরিক্ত রাজ্যও ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট এলাকার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অ্যাঙ্গোলা, জাম্বিয়া এবং মালাউই থেকে সরাসরি ফ্লাইটের জন্য সমস্ত অস্ট্রিয়ান বিমানবন্দরে অবতরণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।এটি বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি (সোয়াজিল্যান্ড), লেসোথো, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এখনও অবধি গ্রেট ব্রিটেনের জন্য কোনও অবতরণ নিষেধাজ্ঞা নেই, যেখানে ওমিক্রোন ইতিমধ্যেই দেশের কিছু অংশে প্রভাবশালী করোনভাইরাস বৈকল্পিক এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ওভারলোড হওয়ার ভয় রয়েছে।এ কারণে লন্ডনকে ইতিমধ্যেই ভয়াবহ ওমিক্রোন উপদ্রুত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রেট ব্রিটেন থেকে অসংখ্য বিমান আজকাল অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক, সালজবার্গ এবং ভিয়েনা-শোয়েচ্যাট বিমানবন্দরে অবতরণ করছে।
নেদারল্যান্ডস থেকে ফ্লাইটের সমালোচনা: অস্ট্রিয়ার রক্ষণশীল ফ্রিডম পার্টি (FPÖ) এটির পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের ফ্লাইটগুলির সমালোচনা করেছে, যেখানে রোববার থেকে সেদেশে একটি নতুন লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।”যদি ওমিক্রোন ভেরিয়েন্ট সত্যিই বিপজ্জনক হয় যতটা সরকার জোর দেয়, তাহলে অবিলম্বে বিমানবন্দরগুলিতে অবতরণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত,” FPÖ স্বাস্থ্য মুখপাত্র গেরহার্ড কানিয়াক একটি সম্প্রচার কেন্দ্রে আজ একথা বলেছেন। “একজন ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, দুর্ভাগ্যবশত, এই কথাটি আমাদের ফেডারেল সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।” কানিয়াক অস্ট্রিয়ায় টিকাবিহীন লোকদের জন্য অব্যাহত লকডাউনেরও সমালোচনা করেছেন।
এদিকে অস্ট্রিয়ার বিপরীতে, জার্মানি সোমবার থেকে গ্রেট ব্রিটেনকে একটি ভাইরাস বৈকল্পিক এলাকা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করছে: এই কারণে, জার্মানিতে বৃটেন ফেরতদের দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যবাধকতা রয়েছে -এছাড়াও যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে এবং যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের জন্যও।
অন্যদিকে ইউরোপে করোনার ওমিক্রোনের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের ফলে ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইউরোপের কয়েকটি দেশে তার নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।দেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম বৃটেন,জার্মানি,ইতালি, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, মরক্কো, পর্তুগাল, কানাডা এবং তুরস্ক।ইসরাইলের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এই সমস্ত দেশ সমূহকে লাল জোন ঘোষণা করেছে।অবশ্য অস্ট্রিয়া ইসরাইলের লিস্টে এখনও কমলা জোনেই আছে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৭৯২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২৭৮ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৩৩৯ জন, Steiermark রাজ্যে ২৬৭ জন, Tirol রাজ্যে ২৬০ জন, OÖ রাজ্যে ২২০ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১৬২ জন, Kärnten রাজ্যে ১৪৮ জন, Salzburg রাজ্যে ৯৮ জন এবং Burgenland রাজ্যে ২০ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৩,৮৭৩ ডোজ এবং এই পর্যন্ত অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬২,১৭,৯০৭ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৯,৬ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৫১,৪৩৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৪৯৭ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছে মোট ১১,৯৬,২৯৫ জন। বর্তমানে অস্ট্রিয়াতে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪১,৬৪১ জন।এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৪৭৮ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৭৬১ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস