ভোলার লালমোহনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস

জাহিদুল ইসলাম দুলাল, লালমোহন, (ভোলা) প্রতিনিধিঃ ভোলার লালমোহন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শীত ঋতুর ঐহিত্য খেজুরের রস।ইট ভাটার প্রভাব, পুরাতন খেজুর গাছ না থাকা, নতুন খেজুর গাছ রোপন না করা, খেজুরের রসের জন্য (গাছী) গাছ কাটার লোক না থাকা, শীতে গাছ কাটার পর রস চুরি করে নিয়ে যাওয়া, বন বিভাগের খেজুর গাছ সম্পর্কে উদাসীন হওয়া ইত্যাদি কারণে খেজুরের রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লালমোহনবাসী।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লালমোহন উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক আবুল বাশার খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়ার সম্পর্কে বলেন, পুঁজিবাদের প্রভাবে যত্রতত্র ইটভাটার অনুমোদন দেয়া এবং ইটভাটার ধোঁয়ায় ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ হওয়ার কারণে খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও রক্ষানাবেক্ষণের অভাবে খেজুরগাছ ক্রমশঃ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আগে খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে গুড়,পাটালী তৈরী, পিঠা, পুলি পিঠা, পায়েস তৈরী করা হতো।এসব এখন কেবল স্মৃতি।

দেবীরচর এলাকার শিক্ষক আল এমরান বলেন, শীত মৌসুমে আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল খেজুরের রসের পায়েশ ও গুড় খাওয়া।  ইটভাটার জ্বলানী হিসাবে ব্যবহার করায় পুরাতন সব খেজুরগাছ বিলুপ্তি হয়েছে অনেক আগেই, নতুন যে গাছগুলো ছিল তাও অপরিপক্ক গাছি দ্বারা খেজুর গাছ কাটার কারণে গাছগুলো মরে গেছে। খেজুর গাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।

ডাওরী বাজার এলাকার নূরমোহাম্মদ মাস্টার বলেন, আগে গ্রামের বাড়ীর আনাচে কানাছে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে, এখানে সেখানে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। শীতের আগমনে অর্থাৎ হেমন্ত ঋতুর শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের গাছিরা প্রতিযোগিতা শুরু করে দিত খেজুর গাছ কাটার। কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ এবং ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত চলত রস সংগ্রহের অভিযান।  তবে পুরো পৌষ ও  মাঘ মাসে ভরপুর রস পাওয়া যেত। অথচ এখন পৌষ মাস চলছে কিন্তু আগের সেই গাছিরাও নেই, খেজুর গাছ কাটার লোকও যেন নেই।পুরো লালমোহনে বর্তমানে খেজুরের রস যেন দুষ্প্রাপ্য বস্তু।

লালমোহন বাংলাবাজার এলাকার হোসেন গাছী ও মঙ্গলসিকদার এলাকার নেয়ামত উল্যাহর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, খেজুর গাছ কাটা ও রস সংগ্রহ করা অনেক পরিশ্রমের বিষয়।এক সময় এই এলাকায় হাজার হাজার খেজুর গাছ ছিল।শীত আসলে (আমদের) গাছীদের মধ্যে খেজুর গাছ কাটার একরকম প্রতিযোগীতা চলত।এখন মানুষ এত পরিশ্রম করে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে চায় না।এর চেয়ে কম পরিশ্রম করে অন্য কাজ করলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যায়।তাই এই পেশা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।পাশাপাশি যারা এখনও দু’একজন খেজুর গাছ কাটে তারা পর্যাপ্ত গাছ না থাকা এবং রস চোরের সমস্যার কারণে তাও বন্ধ করে দিয়েছে।

লালমোহনের সচেতন মহল মনে করেন, এই অঞ্চলের বিলুপ্তিপ্রায় খেজুরগাছের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত আন্তরিক সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাবে গ্রামীণ ঐতিহ্য খেজুর গাছ ও রস।

ভোলা/ইবিটাইমস    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »