আগামী দিন ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ইউরো বাংলা টাইমসের শুভেচ্ছা

কবির আহমেদ, ভিয়েনা, অষ্ট্রিয়াঃ দীর্ঘ ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে আত্মসমর্পণ করলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘ  ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ জন সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

ভারতের নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে পরাজিত হয়েছিল বলে ভারতও এই দিনটি একটি বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। এই যুদ্ধে ভারতেরও কয়েক হাজার সৈন্য নিহত হন।প্রায় ৩ কোটি বাঙ্গালী ভারতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লাখ বাঙ্গালী প্রাণ হারায় এবং প্রায় ২ লাখ বাঙ্গালী নারী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সম্ভ্রম হারান।

এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বংশোদ্ভূত বাংলাদেশীরা দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালন করে থাকে।১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে।জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন।কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির প্রধান রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী।এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য গত বছর ২০২০ সালে এই সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছিল।

তবে এইবার যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২১ উদ্যাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।কর্মসূচির মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রত্যুষে বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহকে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করবেন।দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।

আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভূগর্ভস্থ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও বিজয় দিবস উদযাপনের এক বিরাট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে  জানানো হয়েছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর ভোরে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির উদ্যোগে পুস্পার্ঘ অর্পণ করতে সকাল ৭-৩০ টায় দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা থেকে রওয়ানা দেবেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা দলের পক্ষ মহান শহিদদের উদ্দেশ্যে পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন।

 

আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর শেরেবাংলা নগরে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার,বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা,সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে পুস্পার্ঘ অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে।মাজারে বিএনপি মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।এইদিন ভোরে দেশব্যাপী বিএনপির কার্যালয়গুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে স্থানীয় সুবিধাজনক সময়ে দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে ইউরো বাংলা টাইমসের পক্ষথেকে সকল পাঠক, সংবাদকর্মী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ইবিটাইমস/এম আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »