হবিগঞ্জের বধ্যভূমিতে স্থাপিত নাম ফলকে ভূল; শহীদ পরিবারের ক্ষোভ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায় আছে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বধ্যভূমি সংস্কারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষুব্দ স্থানীয় বাসিন্দা এবং মুক্তিযোদ্ধারা। এরই মাঝে নতুন বিতর্ক জন্ম দিয়েছে বধ্যভূমির পাশে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থাপিত শহিদদের নামাঙ্কিত একটি ফলক। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমির পাশে ১১ জন শহিদ, তাদের পিতার নাম ও ঠিকানা সংবলিত একটি নামফলক উদ্বোধন করা হয়।এই নামফলক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চারজন শহিদ ও তাদের বাবার নামে রয়েছে ভূল।

সরেজমিনে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমির পাশে স্থাপিত নাম ফলকের প্রথমে থাকা রাজকুমার গোয়ালার পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে মৃত কুমার গোয়ালা অথচ উনার পরিবারের দাবি তার পিতার নাম মৃত জগদেও গোয়ালা, এছাড়াও তালিকার ৭ নম্বরে সুশীল বাউরীর স্থলে লিখা হয়েছে সুনিল বাউরী, ৯ ও ১০ নম্বরে রাজেন্দ্র রায় ও গৌর রায়ের পিতার নাম বেহারী রায়ের পরিবর্তে লিখে হয়েছে বেহারী বাউরী।

এ বিষয়ে শহিদ রাজকুমার গোয়ালার নাতি রনি গোয়ালা বলেন, আমার দাদার বাবার নাম মৃত জগদেও গোয়ালা উপজেলা প্রশাসন কোথায় মৃত কুমার গোয়ালা নাম পেয়েছে তা তারাই বলতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরতে সরকার নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। এমন সময় যদি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর থেকে এই ধরনের ভূল করে তাহলে মানুষ সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কোনধরনের যোগাযোগ না করে যারা এই কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমির সঠিক ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।

সরেজমিনে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি রেললাইন সংলগ্ন হওয়ায় রেললাইন অতিক্রম ব্যতীত সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক থেকে বধ্যভূমিতে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওই সড়কটি এখন সিএনজি অটোরিকশার দখলে রয়েছে।এ সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচলের কোনো পরিবেশ নেই।

বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা তার নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বধ্যভূমিতে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। শুধুমাত্র একটা সাইনবোর্ড ও কয়েকটা পাকা পিলারেই সীমাবদ্ধ এই বধ্যভূমি। ফলে, ১৯৭১-এ পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই রয়ে যাচ্ছে। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণসহ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, সুশীল সমাজ, ও শহীদ পরিবারের দাবি।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী লালচাঁন্দ চা বাগানের ১১ জনকে হত্যা তো করে এখানে কবর দিয়েছিলো। কোন ১১ জনকে এখানে হত্যা করা হয়েছিলো তা তৎক্ষালীন সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছি তারাই আমাদেরকে এই তালিকাটি দিয়েছেন। তালিকায় কোন নাম ভূল থাকলে আমরা খোঁজ নিয়ে তা সংশোধন করবো। এসময় তিনি আরও বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা এবং পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হবে। আশাকরি এই মাসের মধ্যেই কাজটি শুরু করতে পারবো।

মোতাব্বির হোসেন কাজল/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »