করোনার পরিবর্তিত রূপ সুপার ভাইরাস ওমিক্রোনে আক্রান্ত হয়ে এখনও কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় নি – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু'(WHO)
ইউরোপ ডেস্কঃ ভিয়েনার স্বাস্থ্য প্রশাসন আজ ভিয়েনায় আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার নতুন রূপান্তর বা মিউট্যান্ট B.1.1.529 বা ওমিক্রোন ভাইরাসের শনাক্তের কথা প্রথমবারের মত স্বীকার করেছে।বর্তমানে আরও আট জনকে সন্দেহভাজন হিসাবে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ভিয়েনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে অস্ট্রিয়ায় এসেছেন।
ভিয়েনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা Wiener Zeitung জানান,ওমিক্রোন ভাইরাসও এখন ভিয়েনায় এসে গেছে। ফেডারেল রাজধানীতে একটি নিশ্চিত ওমিক্রোনে সংক্রমন নিশ্চিত করা হয়েছে এবং আরও আট জনের শরীরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব বা উপস্থিতি আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ভিয়েনার স্বাস্থ্য পরিষেবার ম্যাজিস্ট্রেট অফিস এমএ ১৫ (MA 15)- এর মুখপাত্র সোনিয়া ফিচট পত্রিকাটিকে জানিয়েছেন আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন রোগীরা সকলেই দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন এবং দেশে ফেরার পথে মোজাম্বিক বা জিম্বাবুয়েতে যাত্রাবিরতি করেছিলেন।
মুখপাত্র সোনিয়ার মতে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগের হালকা উপসর্গ রয়েছে এবং তারা বিশেষ ব্যবস্থার কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তাদের বিশেষ পিসিআর পরীক্ষাগুলি বর্তমানে ওমিক্রোন (B.1.1.529) করোনা ভেরিয়েন্ট কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য ক্রমানুসারে করা হচ্ছে। অস্ট্রিয়ার খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা AGES বর্তমানে ওমিক্রোন আক্রান্ত ও সন্দেহভাজনদের তাদের হেফাজতে রেখেছেন। ভিয়েনা ম্যাজিস্ট্রেট ১৫ এর মুখপাত্র সোনিয়া ফিচট দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসাদের অবিলম্বে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা “হু” এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোন যদিও অতি দ্রুত সংক্রামক ও ভয়ানক তথাপি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত কোথাও মৃত্যুবরণের খবর পাওয়া যায় নি।ভাইরাসটি ইতিমধ্যেই পৃথিবীর প্রায় ২৩ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টের কারণে মৃত্যুর রিপোর্ট এখনও দেখেনি। “হু” আরও জানায় ওমিক্রোন ভাইরাসের দ্বারা সৃষ্ট রোগের সংক্রমণ যোগ্যতা এবং তীব্রতার সম্পূর্ণ চিত্র পেতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য গত নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার এই পরিবর্তিত ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আজ শুক্রবার বলেছে যে তারা কোভিড -১৯ এর এই নতুন ওমিক্রোন রূপের সাথে সম্পর্কিত মৃত্যুর কোনও রিপোর্ট দেখেনি। তারা আরও বলেছে যে, এটি উদ্বেগের ভিন্নতা সম্পর্কে প্রমাণ সংগ্রহ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমগ্র বিশ্বকে বার বার এই ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তারের রোধে সাবধানতা অবলম্বন করতে সতর্কতা দিচ্ছে।
তবে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশ নতুন রূপের সাথে সংক্রমণ নিবন্ধন করা সত্ত্বেও, জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে এখনও কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখনও ওমিক্রোন-সম্পর্কিত মৃত্যুর রিপোর্ট দেখিনি।” “আমরা সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করছি, এবং আমরা এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরও অনেক প্রমাণ পাবো বলে আশা করছি।
আজ অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণ গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।তবে করোনায় মৃত্যুবরণের সংখ্যা ও হাসপাতালের উপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৬,৭৩৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৮ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৯১৫ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ ১,৩৯১ জন, NÖ রাজ্যের ১,২৭৫ জন, Kärnten রাজ্যে ৮০৪ জন, Tirol রাজ্যে ৭৭৫ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৬০৩ জন, Steiermark রাজ্যে ৪৪৯ জন, Salzburg রাজ্যে ৩৭৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১৫২ জন নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৯,৮৩৯ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬০,০৭,০৮০ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৭,৩ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৮৫,৯৮২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১২,৬৯৩ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১০,৫০,০৫১ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,২৩,২৩৮ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৬৪৩ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩,১৮০ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস