অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে সাইফুদ্দিন সর্দার করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার ২৮ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০০৪) সাইফুদ্দিন সর্দার (৫০) করোনার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভিয়েনার জেনারেল হাসপাতাল AKH-তে গত রবিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন।
তিনি ভিয়েনায় ৯০ এর দশকের দিকে আসেন এবং সে সময় অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন ফুটবল টিমের হয়ে ফুটবল খেলেন। তারপর ২০০৪ সালে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।সে সময় তার সাথে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির কিংবদন্তি ও জনসেবক মরহুম শাহ্ মোহাম্মদ ফরহাদ।আজ সেই সময়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একই কবরাস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন।
এদিকে গতকাল ভিয়েনায় অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ মরহুম সাইফুদ্দিন সর্দারের নামাজে জানাজা এবং দাফন-কাফন বিষয়ে অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির ইমাম সাহেবগণ সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এক জুম ভার্চুয়াল মিটিংয়ে মিলিত হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
সদ্য প্রয়াত সাইফুদ্দিন সর্দারের পিতা মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর পূর্বে এবং তার উপার্জনক্ষম ছোট ভাই মৃত্যুবরণ করেন ২০১৮ সালে।মৃত্যুবরণের সময় তিনি রেখে গেছেন তার মা, ছোট এক ভাই ও অবিবাহিত বোন।গতকালের জুম মিটিংয়ে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটি মরহুম সাইফুদ্দিন সর্দার ভাইয়ের দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ সহ দেশে তার পরিবারকে এককালীন অর্থ সহযোগিতা করতে সকলেই একমত হন।
অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ কমিউনিটি প্রায় ৫,০০০ হাজার মানুষের একটি ছোট কমিউনিটি।গত প্রায় দুই যুগ ধরে বেক্সিটের পূর্ব পর্যন্ত কয়েক শতাধিক বাংলাদেশী পরিবার অস্ট্রিয়া থেকে বৃটেনে যেয়ে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছেন।ফলে অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটি বড় হওয়ার পরিবর্তে ছোটই রয়ে গেছে।
সদ্য প্রয়াত মরহুম সাইফুদ্দিন সর্দারের ২০০৮ সালেই দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেলে ভিয়েনায় অপারেশনের মাধ্যমে তার শরীরে নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল এবং তিনি অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন।তবে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসের এই চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে তিনি প্রায় মাস খানেক পূর্বে আক্রান্ত শনাক্ত হন।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে চলমান করোনার এই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে সবচেয়ে বেশী মৃত্যুবরণ করেছেন যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে।
এর আগে গত বছরের ৬ নভেম্বরে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির এ কে এম শওকত আলী করোনা ভাইরাসের কোভিড-১৯ -এ আক্রান্ত হয়ে ভিয়েনায় প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে মৃত্যুবরণ করেন।অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রায় দুই শতাধিক মানুষ এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আজ বুধবার বাদ জোহর করোনার বিধিনিষেধ ও ইসলামের রীতিনীতি মেনে যথাযথ মর্যাদায় ভিয়েনার মুসলিম কবরাস্থানে সমাহিত করা হয়েছে মরহুম সাইফুদ্দিন সর্দারকে।দেশ থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে তার মা, ছোট ভাই এবং বোন তাকে দাফন করার দৃশ্য সরাসরি অবলোকন করেন। তার নামাজে জানাজা পড়ান অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সিনিয়র ইমাম ড.ফারুক আল মাদানী।তার নামাজে জানাজায় সরকার ঘোষিত ৫০ জনের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় দুই জামায়াত পড়তে হয়েছে।তাকে চির নিদ্রায় সমাহিত করার পর ইমাম ফারুক আল মাদানী সকলকে নিয়ে পুনরায় আল্লাহর দরবারে তার পরকালের চির শান্তির জন্য দোয়া করেন।
এদিকে আজ পুনরায় অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১০,৩৬৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬১ জন। আজ রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৪৭৫ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ২,১৯৪ জন, Steiermark রাজ্যে ১,৬৭৮ জন, NÖ রাজ্যে ১,৪১২ জন,Tirol রাজ্যে ৯৭১ জন, Kärnten রাজ্যে ৮৪৮ জন, Salzburg রাজ্যে ৭৯৭ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১৮১ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
আজ অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ১০,৯১১ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৯,৭৮,২৩৭ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৬,৯ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৭০,৩৬২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১২,৫৫৩ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১০,২২,৬৬১ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,৩৫,১৪৮ জন।এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৬৪৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩,৩৭৬ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস