‘ফের রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর ঝুঁকি আছে’ – বললেন বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী
বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে বিবিসি জানায় এর আগে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই প্রথম তাঁর চিকিৎসকদের তরফ থেকে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হলো।
রবিবার ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তবে যে হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন, বেসরকারি সেই হাসপাতালের কোন চিকিৎসক সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।
ফের রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর ঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান চিকিৎসক। লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ৷ তার অবস্থা স্থিতিশীল, তবে ফের রক্তক্ষরণ হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী৷
গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান৷ সংবাদ সম্মেলনে আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও উপস্থিত ছিলেন৷
ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রে এই পর্যন্ত দুইবার রক্তক্ষরণ হয়েছে৷ তারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টায় তা বন্ধ করেছেন৷ কিন্তু তারা এই রক্তক্ষরণের পয়েন্ট নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এখানে তা নির্ণয় সম্ভব নয়৷ আর সেটা নির্ণয় এবং স্থায়ীভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধের যে পদ্ধতি, তা বাংলাদেশে কেন এই উপমহাদেশেই নেই৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির কিছু হাসপাতালে এই সুবিধা রয়েছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার নতুন করে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা আছে৷ সেই আশঙ্কা পর্যায়ক্রমে আরো বাড়বে৷ ফের রক্তক্ষরণ হলে তার মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে৷’’ ডা. ফখরুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেয়ার কথা বলছি৷ এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল আছে৷ তবে যদি এখনই বিদেশে নেয়া না হয় তাহলে হয়তো তার অবস্থা বিদেশে নেয়ার মতো নাও থাকতে পারে৷ তাকে মুভমেন্ট করানো অসম্ভব হয়ে যেতে পারে৷’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘চার মাস আগে যদি তিনি বিদেশে যেতে পারতেন তাহলে এই লাইফ থ্রেটেনিং ব্লিডিংটা ওনাকে ফেস করতে হতো না৷ আমরা এই ব্যাপারটাকে ভয় পেয়েই বারবার বলছিলাম যে একটা সময় আসবে…সে কারণেই আমরা বলেছি যে ওনার পয়েন্টটা টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে যেটা বাংলাদেশে কেন আশেপাশেও সম্ভব না৷’’
বাংলাদেশে ওইসব দেশ থেকে চিকিৎসক বা চিকিৎসা সুবিধা আনা সম্ভব কিনা, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা সম্ভব নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রে কারো এই সমস্যা হলে তাকে হেলিকপ্টারে করে সেই সেন্টারে নেয়া হয়৷ তাহলে বুঝতেই পারছেন সেটা এখানে নিয়ে আসা কিভাবে সম্ভব৷’’
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার আরেকজন চিকিৎসক অধ্যাপক শামসুল আরেফিন উন্নত বিশ্বে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন৷আরো ছিলেন অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম মোহসীন, অধ্যাপক ডা. নুরুদ্দিন৷ ডা. ফখরুদ্দিন বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৫.৫-এ নেমে গিয়েছিলো৷এখন সেটা ৭-৮ এর মধ্যে আছে৷ একই সঙ্গে তার হার্ট ও কিডনির সমস্যা আছে৷ তার পুরনো আরো কিছু শারীরিক জটিলতা আছে৷’’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েই বেশি মনোযোগী ছিলাম৷তাই এতদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হইনি৷তবে আমরা খালেদা জিয়ার পরিবারকে আপডেট ও করণীয় সম্পর্কে যথাসময়ে জানিয়েছি৷আর অনেক কিছু প্রকাশ্যে বলা ঠিকও না৷’’
আজকের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে গতকালই খালেদা জিয়ার অনুমতি নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ডা. ফখরুদ্দিন জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন৷ সেখানে তাদের সহকর্মীরাও আছেন৷
প্রসঙ্গত, গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেদিন রাত থেকে খালেদা জিয়াকে সিসিইউ বা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে৷ হাসপাতালটিতে তিনি যার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন, সেই চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার বা ওই হাসপাতালের অন্য কোনো চিকিৎসক রোববারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না৷
এখানে উল্লেখ্য যে,দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন৷
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় জানা যায়,জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ পরে আপিলে খালেদার কারাদণ্ডের মেয়াদও বেড়ে ১০ বছর হয়৷ সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে এই মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস