অস্ট্রিয়ায় সোমবার ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ২০ দিনের করোনার সম্পূর্ণ লকডাউন

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে লকডাউনে আইন অমান্যকারীর সর্বোচ্চ জরিমানা € ৩০,০০০ হাজার ইউরো পর্যন্ত এবং  সর্বনিম্ন € ৯০ ইউরো।

ইউরোপ ডেস্কঃ আগামীকাল থেকে অস্ট্রিয়ায় ২৪ ঘন্টার কারফিউ বা প্রস্থান নিষেধাজ্ঞা সহ শুরু হচ্ছে সম্পূর্ণ লকডাউন।এক নজরে করোনার চতুর্থ লকডাউনে যে সমস্ত বিধিনিষেধ থাকছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল,

■ লকডাউন চলাকালীন সময়ে লাগাতার ২৪ ঘন্টার কারফিউ বা ঘর থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকবে।তবে নিম্ন বর্ণিত কাজে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে যেমন,

• পেশাদারী অর্থাৎ নিজের ডিউটি জন্য,/স্কুল/বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য, মৌলিক জিনিসপত্র আনার জন্য, ডাক্তারের কাছে যেতে/টিকাকরণ/পরীক্ষা করতে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে সাহায্য করার জন্য, পশুপাখির দেখাশোনা ইত্যাদির পাশাপাশি বিনোদনের বা মুক্ত বাতাসের জন্য একাকী বাহির যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।

অন্যান্য বিধিনিষেধের মধ্যে আরও থাকছে,

• ভিজিট এর ব্যাপারে বলা হয়েছে,নিকটাত্মীয় বা প্রিয়জন, তবে জীবনসঙ্গীকেও পরিদর্শন করা যেতে পারে – তবে শুধুমাত্র পৃথকভাবে।

• লকডাউন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন সুপারমার্কেট বা জনসমক্ষে ২ মিটারের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।

• গ্যাস্ট্রোনোমি এবং হোটেল: শুধুমাত্র টেক-অ্যাওয়ে অনুমোদিত।

• রেস্তোরাঁ ও খাবারের স্টল: শুধুমাত্র টেক-অ্যাওয়ে অনুমোদিত, তবে পানীয় শুধুমাত্র সিল করা বোতলে বিক্রি করার অনুমতি রয়েছে। খাবারের স্টলের ৫০ মিটারের মধ্যে খাবার এবং পানীয় পান করা যাবে না। ডেলিভারি পরিষেবা অনুমোদিত।

• মোটেল বা থাকার হোটেল বন্ধ করতে হবে। যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল তখন যে কেউ চেক ইন করা হয়েছিল তারা আপাতত থাকতে পারে। পেশাদার কারণে রাতারাতি থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

• বাণিজ্য: সুপারমার্কেট খোলা ও সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন বাজার(Markt) খোলা থাকবে,তবে কর্তৃপক্ষ সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করবে।

• হার্ডওয়্যারের দোকান বন্ধ: মৌলিক চাহিদা.  ব্যবসা বন্ধ, শুধুমাত্র মুদির দোকান (সুপারমার্কেট), ফার্মেসি, ওষুধের দোকান ইত্যাদি খোলা থাকবে।

• বাহিরে উন্মুক্ত বাজারে FFP2 মাস্ক পড়ে কেনাকাটা করা যাবে।

• যাদুঘর,লাইব্রেরী,চিড়িয়াখানা, আর্কেড এবং বিনোদন পার্ক, অন্দর খেলার মাঠ, নাচের স্কুল ইত্যাদি সবকিছু বন্ধ। সাংস্কৃতিক এলাকাও বন্ধ থাকবে যেমন,থিয়েটার ও সিনেমা হল।

• পেশাদার খেলাধুলা এবং প্রশিক্ষণ অনুমোদিত – তবে দর্শক ছাড়া।

• কাজ: চাকরিতে 3G নিয়ম – এবং FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক।

• বাড়ি থেকে কাজ করার (হোম অফিস) পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে – যাদের পক্ষে সম্ভব তাদের বাড়িতে থেকে অনলাইন অফিস করার জন্য বলা হয়েছে।

• হাসপাতাল: 2G নিয়ম এবং একটি PCR পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

• 2G +1হাসপাতাল (এবং নার্সিং হোম) শুধুমাত্র 2G প্রমাণ এবং একটি বৈধ PCR পরীক্ষা সহ পরিদর্শন করে। দিনে মাত্র দুই জনের অনুমতি আছে।

• FFP2 মাস্ক এখন প্রায় সর্বত্র বাধ্যতামূলক।এখন থেকে FFP2 মাস্ক ইনডোর (ব্যক্তিগত বাড়িগুলি ছাড়া), কর্মক্ষেত্রে (পার্টিশন স্ক্রিন না থাকলে), পাবলিক ট্রান্সপোর্টে এবং গাড়িতে (যদি বেশ কয়েকটি পরিবারের লোকজন পরিবহন করা হয়) সহ সর্বত্র FFP2 মাস্ক বাধ্যতামূলক।৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য  FFP2 মাস্ক প্রযোজ্য নয়।

● গ্রীন পাস: ভ্যাকসিনেশন শুধুমাত্র ৯ মাসের জন্য বৈধ। অর্থাৎ করোনার দ্বিতীয় বা সম্পূর্ণ ডোজ নেয়ার পরে প্রাপ্ত গ্রিন পাসের মেয়াদ মাত্র ৭(সাত) মাস।

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে লকডাউনে বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের শাস্তি বা অর্থ জরিমানা ৯০ ইউরো থেকে ৩০,০০০ হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে 3G নিয়ম লঙ্ঘন করা হলে, কর্মীদের €৫০০ ইউরো জরিমানা এবং নিয়োগকর্তার জরিমানা ৩,৬০০ ইউরো। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লকডাউন লঙ্ঘন করা হলে এটি বিশেষভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।তখন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ৩০,০০০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সীলগলা করা হতে পারে।

আজ রবিবার লকডাউনের আগের দিন অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১৪,০৪২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২২ জন। আজ রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৫৩৯ জন।

অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে আজ OÖ রাজ্যের ৩,৫১৭ জন,NÖ রাজ্যে ২,৬৫৬ জন,Tirol রাজ্যে১,৪৪৫ জন,Steiermark রাজ্যে ১,৩৭১ জন, Kärnten রাজ্যে১,২৮৯ জন,Salzburg রাজ্যে ১,১৪৩ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৭৯৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ২৮৮ জন নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১৩,০১৫ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫৮ লাখ৯১ হাজার ৯৩৫ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৬ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৫৬,৬১৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১২,০১৫ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৮,৯৫,১৫৪ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,৪৯,৪৪৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫২৮ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৯২৩ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »