আগামী সোমবার থেকে অস্ট্রিয়ায় তিন সপ্তাহের লকডাউন শুরুর পূর্ব আজ শনিবার ভিয়েনার বিভিন্ন শপিংমলে হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন লকডাউনের পূর্বে আজ ভিয়েনার বিভিন্ন শপিংমলের আশে পাশে হাজার হাজার মানুষের জন্য যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তিন সপ্তাহের লকডাউনের পূর্বের শেষ দিন বলে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যে বিশেষ ছাড় দেয়।
সংবাদ সংস্থা আরও জানায় লোকজন দোকানগুলি আবার বন্ধ হয়ে যাবার আগে আজ দ্রুত কেনাকাটা সম্পন্ন করতে হাজার হাজারে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। নতুন করোনার লকডাউনের আগের শেষ কেনাকাটার দিন শনিবার অস্ট্রিয়ার অনেক লোক এটাই ভেবেছিল। দেশের শপিং স্ট্রিট ও সেন্টারে সকাল থেকেই জমজমাট ছিল। ভিয়েনার পশ্চিমে অহোফসেন্টারে, অন্যান্য জায়গার মধ্যে টিকাদান কেন্দ্র ইমফস্ট্রাসেও অনেক ভিড় ছিল।
তাছাড়াও ভিয়েনার ৬ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের মারিয়াহিলফার স্ট্রাসের বিভিন্ন শপিংমলে ও বিভিন্ন দোকানপাটে ছিল হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৯ টা নাগাদ যখন বেশির ভাগ দোকান খোলে, তখন মনে হল এই সময়ে অন্যান্য শনিবারের তুলনায় লোকজন আজ একটু বেশিই ছিল। করোনার সাধারণ নিয়মের মধ্যে শুধুমাত্র FFP2 মাস্ক ছাড়া আর কিছুই নিয়ম মানা হয় নি।
হেয়ারড্রেসিং সেলুনগুলিতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।লোকজনকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।ভিয়েনার ১৪ নাম্বার ডিস্ট্রিক্টের অহফসেন্টারে, গত কয়েক দিনের মতো শনিবারও করোনার প্রতিষেধক টিকাদান কেন্দ্র “ইমপ্ফস্ট্রাসের” সামনেও একটি দীর্ঘ লাইনে সারি ছিল৷ ভিয়েনা সিটিতে এখন কোন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই টিক দেয়া যায় এবং সম্প্রতি টিকাদান কর্মসূচি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু ভিয়েনা রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন ইইউর স্বীকৃত চারটি করোনা ভ্যাকসিনকে এই সপ্তাহ থেকে মাত্র চার মাস পর তৃতীয় ডোজ গ্রহণের অনুমতি দিচ্ছে, তাই অনেক লোয়ার অস্ট্রিয়ানরাও ভিয়েনায় এসে করোনার তৃতীয় ডোজ অত্যন্ত উৎসাহ সহকারে নিচ্ছেন।
মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের কারনে আজ যানজট কেবল আউহোফ সেন্টারেই ছিল না বরঞ্চ স্ট্যাডলাউ, বিজনেস পার্কে এবং অস্ট্রিয়ার বৃহত্তম শপিং সেন্টার, ভোসেনডর্ফের শপিং সিটি দক্ষিণের প্রবেশপথেও, দুপুরের খাবারের সময় যানজটের কারনে স্থবির হয়ে পড়েছিল।বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী আইছেনস্ট্যাডের খুচরা দোকানপাট গুলিতেও অনেক উপচে পড়া ভিড় ছিল পশ্চিম অস্ট্রিয়ায় সোমবার আসন্ন লকডাউনও শপিং সেন্টারগুলির একটি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির দিকে পরিচালিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফোরালবার্গের বৃহত্তম শপিং সেন্টার – ডর্নবার্নের মেসেপার্ক – শুরু থেকেই ভালভাবে উপস্থিত ছিল, ইনসব্রুকের ডিইজেডে দিনটি “একটি ভাল ফ্রিকোয়েন্সি সহ” শুরু হয়েছিল – বিকেলে আরও বৃদ্ধি প্রত্যাশিত ছিল৷ “আপনি অনুভব করতে পারেন যে সোমবার থেকে আবার লকডাউন হবে,” মেসেপার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বুরখার্ড ডনসার বলেছেন।
ডনসার এপিএর সাথে “খুব, খুব ভাল সফর, এটি একটি খুব শক্তিশালী দিন” এর সাথে কথা বলেছেন।দুপুরের মধ্যে পার্কিং স্পেস ৯৬ শতাংশ দখল করা হয়। তবুও, ম্যানেজার ধরে নিয়েছিলেন যে বিকেলে গ্রাহকদের সংখ্যা আরও বেশি হবে। শনিবার বিকেল সাধারণত কেনাকাটা করার সেরা সময়। সেখানে পর্যাপ্ত বিকল্প পার্কিং স্পেস উপলব্ধ ছিল, এটি প্রদর্শনী পার্কে দেখানো হয়েছিল।
রাজধানী ভিয়েনায় আজ শেষ দিনের কেনাকাটার জন্য মানুষ বেশী পরিমানে ঘর থেকে বের হওয়ায় গণপরিবহন যেমন মেট্রো,ট্রাম ও বাসেও ছিল প্রচন্ড ভিড়। শুধুমাত্র FFP2 মাস্ক ছাড়া আর কোন সুরক্ষা সহ নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা হয় নি।ফলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন আগামী দিনগুলিতে লকডাউনের মধ্যেও সংক্রমণের বিস্তারের সংখ্যার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১৫,২৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৮৭০ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৩,৩৭৭ জন, NÖ রাজ্যে ২,৪৪২ জন, Kärnten রাজ্যে ১,৭৬৪ জন, Salzburg রাজ্যে ১,৬০৬ জন, Tirol রাজ্যে ১,৫৮১ জন, Steiermark রাজ্যে ১,৫১৪ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৭৮৮ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৩৫৫ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১৭,১৭০ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৭৯ জন,যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৫,৯ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৪২,৫৭১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,৯৯৩ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৮,৮৬,১৩৬ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,৪৪,৪৪২ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন ৫২৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৮৮১ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস