দেশে করোনার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরেও সরকার প্রধান চ্যান্সেলর শ্যালেনবার্গ টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য লকডাউনের সম্ভাবনা বাতিল করেছেন।
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ “কোভিড-১৯ পূর্বাভাস কনসোর্টিয়াম” আজ এক সতর্কতায় জানিয়েছেন যে, করোনার সংক্রমণের বিস্তার এইভাবেই বৃদ্ধি পেতে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই অস্ট্রিয়ায় করোনার জন্য নির্ধারিত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পূর্ণ হয়ে যাবে। তারা জানান, আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী ২৪ নভেম্বরের পর অস্ট্রিয়ায় করোনার আইসিইউ বেড পূর্ণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ এই সময়ে দেশের প্রায় ২,০০০ হাজার আইসিইউ বেডের শতকরা ৩৩ শতাংশ করোনার রোগী দ্বারা ভরে যাবে।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.ভল্ফগাং মুকস্টাইন (গ্রিনস) বিকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, অস্ট্রিয়ার পশ্চিমের দুই রাজ্য আপার অস্ট্রিয়া এবং সালজবুর্গের করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ায় তিনি উক্ত দুই রাজ্যের গভর্নরদের সাথে এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হবেন।
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক Kronen Zeitung জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার করোনার পূর্বাভাস কনসোর্টিয়াম কমিটির পরিসংখ্যান অনুসারে আপার অস্ট্রিয়ার(OÖ) নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলিতে সিস্টেম- সমালোচনামূলক ব্যবহার দুই সপ্তাহের মধ্যে শতকরা ৯৫ শতাংশ অতিক্রম করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।যা লোয়ার অস্ট্রিয়ায় (NÖ) শতকরা ৮৪ শতাংশ, সালজবুর্গ এবং ফোরালবার্গে শতকরা ৬৫ শতাংশ ভরে যাবে।দক্ষিণের রাজ্য ক্যারিন্থিয়া এবং ভিয়েনায় সম্ভাব্যতা সর্বনিম্ন যথাক্রমে শতকরা ৩৫ এবং ৪০ শতাংশ। সমগ্র অস্ট্রিয়ার ক্ষেত্রে, কোভিড-১৯ রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার ক্ষমতার সীমা আর পর্যাপ্ত না থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৬৫ শতাংশ।
সবচেয়ে খারাপ ক্ষেত্রে, নিবিড় পরিচর্যায় (I.C.U) ৯০০ টিরও বেশি কোভিড রোগীর বেড পূর্ণ হতে পারে।একটি কভারেজ পূর্বাভাসে, কনসোর্টিয়াম অনুমান করে যে দুই সপ্তাহের মধ্যে, সবচেয়ে খারাপ ক্ষেত্রে, ৯০০ টিরও বেশি কোভিড রোগী নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে থাকতে পারে। গণনা করা গড় হল ৭৪৮ নিবিড় পরিচর্যা রোগী। সর্বাধিক – যথা ২০০ শত পর্যন্ত – আপার অস্ট্রিয়াতে প্রত্যাশিত,তবে বুর্গেনল্যান্ডে খুব কম৷
কোভিড-১৯ পূর্বাভাস কনসোর্টিয়ামের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহ পর অস্ট্রিয়ার হাসপাতালের করোনার রোগীর সাধারণ ওয়ার্ডে ২,৫১২ থেকে ৪,০৬০ জন কোভিড রোগী ভর্তির সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে সমগ্র অস্ট্রিয়ায় সাধারণ লকডাউন আসছে এই রকম একটি ছড়িয়ে পরা গুজব সম্পর্কে অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান ও তার কার্যালয় চ্যান্সেলারি অফিস মন্তব্য করেছেন যে, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জোর দিচ্ছেন যে, দেশে লকডাউনের গুজবের কিছু নেই।
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ (ÖVP) আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রস্থান নিষেধাজ্ঞা সহ এক সাধারণ লকডাউনের গুজবের কথা অস্বীকার করেছেন। এপিএ এর অনুরোধে চ্যান্সেলার বলেন যে, এই অভিযোগগুলি “মিথ্যা এবং কোনও ভিত্তি ছাড়াই”।
তিনি আরও বলেন, অস্ট্রিয়ায় শুধুমাত্র টিকাবিহীনদের জন্য লকডাউন হবে। টিকা না দেওয়া লোকেদের জন্য এটি আলাদা দেখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে ৪০০ টিরও বেশি নিবিড় পরিচর্যা শয্যা দখল করা হয়েছে এবং সংখ্যাটি দ্রুত বাড়ছে। ৬০০ -এর I.C.U পৃষ্ঠের সাথে, করোনা ধাপে ধাপে পরিকল্পনার স্তর ৫ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। চূড়ান্ত পরিমাপ হিসাবে, এটি টিকাবিহীন লোকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ লকডাউন প্রদান করবে।
আজ অস্ট্রিয়ায় করোনার মহামারীর শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে ১১,৩৯৮ জন এবং করোনায় মৃত্যুবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে ২৩ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে ১,৫৮৭ জন।
অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে আজ আপার অস্ট্রিয়ায়(OÖ) -তে একদিনের নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩,৪২৪ জন, NÖ রাজ্যে ২,১৭৬ জন, Steiermark রাজ্যে ১,২২২ জন, Tirol রাজ্যে ৯৫১ জন, Salzburg রাজ্যে ৬৬২ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৫৮৮ জন, Kärnten রাজ্যে ৫৭৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ২১৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার ডোজ দেয়া হয়েছে ২৩,৫৩০ ডোজ এবং এই পর্যন্ত মোট টিকাদানের পরিমাণ ১,১৩,২৪,৯৬৯ ডোজ।অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৭ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৬ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৪,৭ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯,১১,১৭৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,৩৯৮ জন।করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৮,১৩,৯৮৭ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় সংখ্যা ৮৫,৬১১ জন।এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৪১৩ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,২৩৭ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস