পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের পুশব্যাকের পক্ষে আইন পাস

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ গত বৃহস্পতিবার পোল্যান্ডের জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়েছে, যার ফলে সীমান্ত থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানো সহজ হবে৷বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ও জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে এবং অভিবাসন সংক্রান্ত পোর্টাল ইনফোমাইগ্রেন্টস জানিয়েছেন, এই আইন পাশের ফলে পোল্যান্ডে অভিবাসীদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়া আরো কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া বেলারুশের সাথে দেশটির সীমান্তে দেওয়াল গড়ার পরিকল্পনাও পাস হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মোট ৩৫৩ মিলিয়ন ইউরো। উল্লেখ্য গত কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী, যাদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান থেকে আসা, বেলারুশ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া বা পোল্যান্ডের সীমান্তে ভিড় করেছেন।

সদ্য পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশী  নাগরিক অবৈধ উপায়ে পোলিশ সীমান্ত পেরোলে তাকে ফেরত পাঠানো যাবে। পাশাপাশি, আগামী তিন থেকে ছয় বছরের জন্য পোল্যান্ডে প্রবেশ করার অধিকারও হারাতে পারেন তিনি।

শুধু তাই নয়, পোলিশ কর্তৃপক্ষের অধিকার রয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি আশ্রয়ের আবেদনকে ‘অপরীক্ষিত’ রেখে দেবার। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশ করার পর যদি প্রমাণ করতে না পারেন যে, নিজের দেশে তিনি বিপন্ন ও পরাধীন বোধ করেন, সেক্ষেত্রে তার আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত না-ও হতে পারে।

এর আগে, পোলিশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ রয়েছে যে, তারা বেলারুশের সাথে থাকা সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের থামাচ্ছে ও আশ্রয়ের আবেদন করতে দিচ্ছে না।

যেভাবে সীমান্তে জরুরী  অবস্থা জারি করে অবস্থানরত অভিবাসনপ্রত্যাশীসহ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের কাজে ‘বাধা দিচ্ছে’ পোল্যান্ড, তার সমালোচনা করছে এই সংগঠনগুলি।

সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী এই আইন পাস হবার ঠিক দুদিন আগেই পোল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত ঘোষণা দিয়ে জানায় যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে দেশটির কয়েকটি চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক পোল্যান্ডের নিজস্ব সংবিধান। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ঘোষণার প্রভাব ইইউ-পোল্যান্ড সম্পর্কে পড়বে কিনা।

এদিকে সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ, বৃহস্পতিবার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে এক অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃতদেহ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই পর্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে,গত মাসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর (UNHCR) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম একটি বিবৃতিতে বলেন, সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ধারাবাহিক মৃত্যুর খবর ‘চিন্তার ও আশঙ্কাজনক’। পোল্যান্ডে থাকা ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্রিস্টিন গোয়ার পোলিশ কর্তৃপক্ষকে ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের নীতিমালা মনে করিয়ে দেন, যেখানে পোল্যান্ডের স্বাক্ষরও রয়েছে। তিনি বলেন,  “অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোনো সত্ত্বেও একজন আশ্রয় আবেদনকারীকে কোনো শাস্তি দেওয়া যাবে না।”

রয়টার্স আরও জানিয়েছেন বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পোল্যান্ড এবং বেলারুশ সীমান্তে আটকা পড়ে আছেন অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে আটকে থাকলেও কোন পক্ষই তাদের দায়িত্ব নিতে রাজী হচ্ছে না। এমতাবস্থায় গভীর জঙ্গলের মাঝে কোন প্রকার মানবিক সাহায্য ছাড়াই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন আটকে পড়া অভিবাসীরা।এই শরণার্থীদের মধ্যে কোন বাংলাদেশী আছে কিনা তা এখনও জানা যায় নি।

কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস

 

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »