ঝালকাঠি প্রতিনিধি: দক্ষিন বাংলার বিশখালি-সুগন্ধা-গাবখান ও জীবনানন্দ দাশের অমর নদী ধানসিঁড়ি বিধৌত ঝালকাঠি জেলা। নদী খান শিরা উপশিরার মত জেলা জুড়ে রয়েছে। একসময়ের দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাত ঝালকাঠির জেলা জুড়েই উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের জন্য বিশাল বিশাল অবকাঠামো। অবহেলিত জেলার এখন শহরকে একরকম পিছনে ফেলেই গ্রাম অঞ্চলে তাক লাগানো উন্নয়ন মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এ জেলাটি শিল্প সাহিত্যের একসময়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এখানে জন্ম হয়েছে কবি কামিনি রায় ও শেরে বাংলা এ.কে.এম ফজলুল হকের। চারন কবি মুকুন্দ দাস ও প্রেম-প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাসের কাব্যিক স্রোতধারা উৎস ছিল এ জেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য। জন্ম হয়েছে জারী সম্রাট আব্দুল গনি বয়াতির সহ অসংখ্য গুনি জ্ঞানী ব্যক্তির কিন্তু সেই ধারা ম্লান হলেও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্য আয়ের পথে ধাবিত হওয়ার ভিসনকে- (২০৪১) সামনে রেখে তথ্য প্রযুক্তি হাত ধরে এগিয়ে চলছে ঝালকাঠি।
সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আওতায় গড়ে উঠছে কিছু মেগাসহ বহু উন্নয়ন প্রকল্প। জেলা উপজেলা এবং উপজেলা সদর থেকে অন্য জেলা এবং উপজেলার মধ্যবর্তী অংশে বড় বড় নদীর উপরে একাধিক ব্রিজ নির্মান করে সড়ক যোগাযোগের নেট ওয়ার্ক গড়ে উঠছে। সড়কগুলি প্রশস্তকরনের পাশাপাশি প্রতিটি সড়কেই ছোটবড় অসংখ্য ব্রিজ কালভাট নির্মান করা হয়েছে। একারনে শহরের চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে উন্নয়ন বাহ্যিত দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভিসন- ২০২১ এবং ২০৪১ এর টার্গেট অর্জনের জন্য পদ্মা সেতুর নির্মানকে ঘিরে দক্ষিন অঞ্চলের এই জেলা অর্থনৈতিক জোনের আওতায় এসেছে। যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপূর্ত কৃষিসহ অবকাঠামো গড়ে তোলা ও সংস্কার এবং শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য ঝালকাঠিতে বিসিক শিল্প নগরি স্থাপন করা হয়েছে। পেয়ারা ও শীতলপাটি জেলার ব্যান্ডিং পণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন তৎকালীন ছাত্রনেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এম.পি শেখ হাসিনার ভিসন বাস্তবায়নে এই জেলার প্রধান রুপকার। তার সাথে রয়েছেন ঝালকাঠি- ১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন এম.পির প্রচেষ্টাও। শুধুমাত্র বিগত ১০ বছরে জেলায় অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন খাতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩ হাজার ২১০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প।
৭১৭.৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় ৭ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ২টি প্রাচীন পৌরসভার মধ্যে ঝালকাঠির পৌরসভা ১৮৭৫ সালে ও নলছিটি পৌরসভা ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জেলার অন্য ৪টি উপজেলা হচ্ছে ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা। ব্রিটিশ আমলে ধান লবন ও পান সুপারিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল দক্ষিন অঞ্চলে ব্যবসায়িক বন্দর। বরিশাল বিভাগের জেল গুলির সাথে নৌ পথে ব্যবসা বণিজ্যের প্রধান মোকাম ছিল ঝালকাঠি। এই ঝালকাঠির সাথে পশ্চিম বাংলার কলকাতার ব্যবসা বাণিজ্যের আমদানি রপতানি থাকায় ঝালকাঠির নামাকরন হয়েছি দ্বিতীয় কলকাতা। কালের আবর্তে লবন শিল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠা ঝালকাঠি বন্দরের লবন শিল্পটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে ছিটকে পড়েছে। কিন্তু লবন শিল্পের জায়গায় গড়ে উঠেছে বড় বড় আটা-ময়দার মিল। শিল্পায়নের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরনে জেলা শহরতলির ঢাপড় নামক স্থানে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বিসিক শিল্প নগরী। ১১.৮ একর জায়গায় বিসিক শিল্প নগরীতে বিভিন্ন সাইজের ৭৯ টি প্লট নির্মান করা হয়েছে এবং ৪০টি প্লট বিক্রী হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত বিনিযোগ হয়েছে ২০ কোটি টাকা এবং ২৫০০ জন দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে। বিসিক শিল্প নগরীটি সড়ক ও নৌ পথের জন্য উপযোগী স্থানে হওয়ায় এখানে প্লট কিনতে ঢাকা থেকে ভাইয়া গ্রুপ অফ কোম্পানীর মত প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে এসেছে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিশখালি-গাবখান চ্যানেলের মহোনায় নৈসর্গিক পরিবেশ ও মনোরম সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ইকোপার্কের। মাটি ভরাট করে উন্নয়নের কাজ শেষ করার পরে প্রস্তাবিত ইকো পার্কের ৫০ একর জায়গার মালিকানা নিয়ে একটি ভূমি গ্রাসী চক্র আদালতে মামলা করে এর বাস্তবায়নের পথ বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। এই এলাকার বিনোদনপ্রিয় মানুষের চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে এবং মোহনা পাড়ে সরকারি খাস জমি ভূমি গ্রাসীদের থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক মিহির কান্তি মজুমদার এই ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে মাটি ভরাট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। এই প্রকল্পটি বিনোদন ও পর্যটনের জন্য একটি চমৎকার উদ্যোগ।
প্রতিনিয়ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পালটে দিচ্ছে ঝালকাঠি জেলাকে। জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়নে, বিশেষ করে গ্রামীন জনপদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রয়েছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশন অধিদপ্তরের। এই বিভাগে গত ১০ বছরে ৩৬৪ টি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ৭৩৮ কোটি ৮ লক্ষ টাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ছোট মাঝারি ও মেগা টাইপের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। গ্রামীন জনপদের সড়ক পাকাকরনসহ ৪৫টি বড় আকারের ৩ তলা বিশিষ্ট সাইক্লোন সেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মান করা হয়েছে। ১৪০টি অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মানসম্মত পাকা বাসস্থান নির্মান করা হয়েছে। গ্রামীন জনপদের হাট বাজার এলাকায় মহিলাদের জন্য বিপনণ কেন্দ্র, ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। ৩ তলা বিশিষ্ট উপজেলা কৃষক সেন্টার, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কৃষক সেবা কেন্দ্র ও ৬টি পুকুর খনন হয়েছে। গাবখান ব্রিজের পাদদেশে বিশাল ৬ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হোস্টেল ৩ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে এবং এই কমপ্লেক্সের প্রাচীর, আসবাবপত্র এবং বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনসহ আরো ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যায় করা হয়েছে। ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পোনা নদীর উপর ১৮৯ মিটার দীর্ঘ্য ব্রিজ এবং কালিজিরা নদীর আমিরাবাদ অংশে ১৭৬ মিটার দীর্ঘ্য ব্রীজ নির্মান হয়েছে। এছাড়াও ১০ মিটার থেকে ১০০ মিটার আয়তনের বিভিন্ন সড়কে ব্রিজ নির্মান করা হয়েছে। এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর উপরে কীর্তনখোলা ব্রীজের মতোই ঝালকাঠির নলছিটির মাটিভাঙা ও ভৈরবপাশা অংশে ৭৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং পটুয়াখালী পায়রা নদীর নলছিটি অংশে খয়রাবাদ নদীর উপর ১৩৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মানের মাটি পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এদুটি ব্রীজ নির্মান কাজ শেষ হলে ঝালকাঠির উন্নয়নে আরো একধাপ দৃশ্যমান উন্নয়ন ফুটে উঠবে। এদুুটি সেতু নির্মানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সেতু দুটি নির্মিত হলে ঝালকাঠির সাথে বরগুনা, বাউফলসহ দক্ষিন অঞ্চলে যোগাযোগের পথ সহজ হবে ও মানুষের সময়ও বাচবে।
ঝালকাঠি জেলার গণপূর্ত বিভাগের ২৮টি দৃশ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এজন্য ৪০০ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝালকাঠি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ৮ম তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মান করা হয়েছে। মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকা দৃষ্টি নন্দন এই ভবনটি দূর থেকেও মানুষ দেখতে পাচ্ছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যা থেকে বর্তমান হাসপাতালের পাশেই ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ৮ম তলা বিশিষ্ট ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা সদর ও রাজাপুর নলছিটি কাঠালিয়া উপজেলায় ১টি করে নির্মিত হচ্ছে মডেল মসজিদ। এছাড়াও ৫ তলা বিশিষ্ট সমাজসেবা ভবন, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, সার্কিট হাউজের সম্প্রসারণসহ গণপূর্ব বিভাগের ছোটবড় আরো অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে।
অনন্য বিভাগের সাথে সমান্তরাল ভাবে জেলায় ২৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস ও মাধ্যমিক এবং কলেজ ভবন নির্মান করা হয়েছে। ১৬৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২৫৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানের পরও আরো ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। ঝালকাঠি সরকরি কলেজে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ম তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন এবং একই ক্যাম্পাসে ৫ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস ও ৫ তলা বিশিষ্ট অনার্স ভবন নির্মান করা হয়েছে। ঝালকাঠি জেলার মধ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটিই হচ্ছে জেলার সর্বোচ্চ উচু ভবন। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গ্রাম অঞ্চলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা নিরুপন করে বহুতলা বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মান করা হচ্ছে। ঝালকাঠির আকলিমা-মোয়াজ্জেম বে-সরকারি মহাবিদ্যালয় ৫ম তালা বিশিষ্ট ২টি একাডেমিক নির্মান করে এর চাহিদা পূরন করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের আগামীর চাহিদা এবং পদ্মাসেতুর চালুুর পর এ জেলার আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্থকরনের কাজ হয়েছে এবং আরো হচ্ছে। এই সড়কগুলি শহর এলাকা ছেড়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীন জনপদের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়ায় গ্রামীন জনজীবনে উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে। নদী খাল বিলের জেলা হওয়ায় সড়ক বিভাগের আওতায় আঞ্চলিক সড়কগুলির উপর বড় আকারের একাধিক সেতু নির্মান করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে জেলার কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়ার হলতা নদীর উপরে আমুয়া সেতু, সুতালরী খারের উপরে সুতালরী ব্রীজ, হিমানন্দকাঠী সেতু এবং বাসন্ডা নদীর উপর নবগ্রাম সেতু ও কাঠালিয়ার সেন্টারের হাট ও কচুয়া সেতু নির্মান করা হয়েছে। এছাড়াও জালাবাড়ি সেতু নির্মান সমাপ্ত হয়েছে। সড়ক বিভাগ বিগত ১০ বছরে ৪৩৯ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় এই সকল বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এই ধরনের চাহিদা ভিত্তিক আরো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন।
ঝালকাঠি জেলার স্বাস্থ্য প্রকৌশন অধিদপ্তরের আওতায় ১২টি দৃশ্যমান প্রকল্প ১১৯ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে ঝালকাঠি শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কীর্তিপাশা নার্সিং কলেজ নির্মান করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৭ তালা বিশিষ্ট শিক্ষার্থীদের ছাত্র- ছাত্রী নিবাস, ৩ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন এবং একাধিক কোয়াটার নির্মান করা হয়েছে এই কমপ্লেক্সে। কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির পাশে বিশাল জায়গা জুড়ে এই কমপ্লেক্সটি নির্মান হওয়ায় কীর্তিপাশা ইউনিয়নের কীর্তিপাশা বাজার এখন উপ-শহরের মর্যাদা পেয়েছে। এই বিভাগেরই আওতায় গাবখান সেতুর পূর্ব অংশে ৩৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মেডিকেল এ্যাসিটেন্ট ট্রেনিং স্কুল নির্মান করা হয়েছে। এর নির্মান কাজ শেষ পর্যায়। এই কমপ্লেক্সে ৪ তালা ৫ তালা বিশিষ্ট একাধিক ভবন নির্মান করা হয়েছে। এই স্বাস্থ্য প্রকৌশন বিভাগের আওতায় শেখেরহাট, দপদপিয়া ও বিনয়কাঠিতে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মান করা হয়েছে। ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে ও ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ তালা বিশিষ্ট জেলা পরিবার পরিকল্পনা ভবন নির্মান প্রক্রিয়াধীন। মেডিকেল এ্যাসিট্যান্ট নির্মান শেষ হওয়ার পরে এখান থেকে প্রতিবছর প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মেডিকেল এ্যাসিটেন্টরা বেরিয়ে এসে স্বাস্থ্য বিভাগের এই খাতের প্রবল জনবল সংকট কমিয়ে আনতে পারবে।
ঝালকাঠি জেলার ৪টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুত সংযোগের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। এখন জেলার সকলের ঘরেই বিদ্যুৎ রয়েছে। জেলা পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির ১ লক্ষ ৩২ হাজার এবং শহর ভিত্তিক ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় আরো ২১ হাজার গ্রাহক সহ জেলার ১ লক্ষ ৫৩ হাজার পরিবারই বিদ্যুৎ পেয়েছে। এজন্য পল্লি বিদ্যুৎ ৩ হাজার ৬১৪ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মান করা হয়েছে। ৩৩ কেভির ৬ টি উপকেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। পল্লি বিদ্যুৎ এই খাতে ৬১৭ কোটি ৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ঢাপড় নামক স্থানে জেলা পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির মূল ভবন নির্মান করা হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মান প্রকল্প খাতে জেলার ৪টি উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মান করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসক খাস জমি উদ্ধারের পরপরই সেখানে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলে এই প্রকল্প শেখ হাসিনার একটি যুগন্তকারী পদক্ষেপ। ভূমিহীন অসহায় পরিবারের পূর্নবাসনে আশ্রয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি যেসকল পরিবারের জমি আছে কিন্তু ঘর বাড়ি জরাজীর্ন তাদেরকেও গৃহ নির্মান করে দেওয়া হয়েছে। জেলায় এই খাতে এখন পর্যন্ত ৫৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে সরকার। এদের মধ্যে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ৪টি উপজেলায় ৯৪৬টি পরিবারকে ১৮ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯৪৬ টি পরিবারকে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। যাদের জায়গা আছে কিন্তু ঘর জরাজীর্ন এমন জেলায় ২৬৯৭টি পরিবারকে ২৯ কোটি ৬৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মান করে দেওয়া হয়েছে। ত্রান এবং পূর্নবাসন মন্ত্রনালয়ের আওতায় জেলায় ৭ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪২৪টি পরিবারকে উন্নত মানের ঘর করে দেওয়া হয়েছে।
জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের আওতায় ১০ বছরে আউশ আমন ও বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনে সরকার ১০ বছরে ১০ কোটি টাকার প্রনোদনা সহায়তা দিয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে জেলায় ৩২১৪০ টি দরিদ্র পরিবারকে বছরে ৫ মাস ভর্তুকি দিয়ে ১০ কেজি চাল বিক্রী করছে খাদ্য বিভাগ। সরকারকে এজন্য প্রতি বছর খাদ্যবান্ধব কর্মচূচিতে এই জেলায় ১৮ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
জেলায় দৃশ্যমান নয় কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে গরিব ও অস্বচ্ছল বিভিন্ন শ্রেনির মানুষকে সামজিক বেষ্টুনি দিয়ে আত্মসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর। প্রধানমন্ত্রীর প্রবর্তিত ভাতার আওতায় এদেরকে বেড়া দিয়ে অবস্থানকে ধরে রাখা হচ্ছে। জেলায় বয়স্কভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামীর পরিত্যাক্ত ভাতা, ও প্রতিবন্ধি ভাতা এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠির মধ্যে বেদে, হিজড়াসহ ৬২৪১১টি পরিবারকে বার্ষিক ভাতার আওতায় ১০ বছরে ৩৪৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ভাতা দিয়েছে সরকার। জেলা সমাজসেবার তথ্য বিবরনীতে এই চিত্র ফুটে উঠেছে।
২০১৮ সালে ঝালকাঠি জেলা মাছ চাষে উবৃত্ত জেলা হিসাবে উন্নীত হয়েছে। ঝালকাঠি জেলার আয়তনের মধ্যে ২৫৪১২১ কিলোমিটার জুড়ে নদী খাল পুকুর ও প্রাবনভূমি রয়েছে। এখানে মৎস বিভাগ পরিকল্পিত মাছ চাষ করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। জেলায় ১৫০২৮ হেক্টরে প্লাবন ভূমি, ১১২৩ হেক্টরে পুকুর, ৬০ হেক্টরে বিল রয়েছে। এই জলাশয়গুলিতেই মাছের চাষ বৃদ্ধি করায় ২০২০ সালে জেলার বার্ষিক চাহিদা পূরন করে উবৃত্ত ২২১ মেট্রিকটন মাছের উৎপাদন হয়েছে।
দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাত ঝালকাঠিকে আরো নান্দনিক করার জন্য ঝালকাঠি পৌরসভা ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর সংলগ্ন সুগন্ধা নদীর পাড় ঘেষে ৪ কিলোমিটার দূরে রাস্তা ও বনায়ন ও শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বাসন্ডা নদীর সংলগ্ন কিস্তাকাঠী আবাসন প্রকল্প থেকে নেছারাবাদ পর্যন্ত পশ্চিম তীর ঘেষে অনুরূপ সড়ক ও বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঝালকাঠি পৌরসভা। পৌরবাসীর বিনোদনের জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার।
দক্ষিন অঞ্চলের এই জেলা নদী খাল বিল জুড়ে থাকায় একসময়ের যাতায়াতের নৌপথ প্রাধান্য পেলেও উন্নয়নের জোয়ারে নৌপথ সংকুচিত হয়েছে। উন্নত দেশের ভিসন ২০৪১ এর পথে ঝালকাঠি জেলা এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিনত হবে দক্ষিন অঞ্চল জোন। সেই দিকগুলি মাথায় রেখে সাজিয়ে গুছিয়ে ঝালকাঠি জেলায় নির্মান করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের মেগা প্রকল্প। জেলা পর্যায় প্রতিমাসেই সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে উন্নয়নের পর্যালোচনা ভিত্তিক মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা হচ্ছে। এই সভাগুলিতে উন্নয়নকাজের মান প্রতিবন্ধকতা এবং তরিৎ উন্নয়ন বাস্তবায়নে সমস্যার বিষয় আলোচিত এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রয়োজনবোধে সংসদ সদস্যদেরও এই সকল সভায় থাকেন বলে জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী জানান। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে এলাকার সংসদ সদস্যরা। ঝালকাঠির-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জননেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু বলেছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঝালকাঠি জেলায় এখন উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং আরোকিছু চাহিদা ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সার্বক্ষনিক সকল বিভাগের সাথে সমন্বয় করছি। এই সকল উন্নয়ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঝালকাঠির আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন জানান বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং তারই ধারাবহিকতায় তার নির্বাচনী এলাকায়ও উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে।
বাধন রায়/ইবিটাইমস