জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করলো স্লোভেনিয়া

স্লোভেনিয়া থেকে,রাকিব হাসান রাফি: জনসন অ্যান্ড জনসন উদ্ভাবিত এক ডোজের করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করলো মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়া।

আজ বুধবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ানেজ পোকলুকারের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে স্লোভেনিয়ার প্রভাবশালী ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্যা স্লোভেনিয়ান টাইমস। টিকা গ্রহণের পর পনেরো দিনের মাথায় ২২ বছর বয়সী এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ানেজ পোকলুকার জানান, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সাময়িক সময়ের জন্য স্লোভেনিয়ায় জনসন অ্যান্ড জনসন উদ্ভাবিত এক ডোজের করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে টিকা গ্রহণের পর কোনো ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে ২২ বছর বয়সী এ তরুণীর মৃত্যু হয়েছে কি না সে বিষয়ে এখনও আমরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত নই। তাই সামগ্রিক বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, গ্রীষ্মের বিদায়ের সাথে সাথে স্লোভেনিয়াসহ আশেপাশের দেশগুলোতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ওয়ার্ল্ড ও মিটারস ডট ইনফো কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত চব্বিশ ঘণ্টায় স্লোভেনিয়ায় নতুন করে ১,৩৩৯ জন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে বর্তমান সময়ে আরটি-পিসিআর টেস্টে নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০% এরও বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার প্রভাবে দেশটিতে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আর্থিক লোকসান ও জনজীবনের স্থবিরতার কথা চিন্তা করে এ মুহূর্তে স্লোভেনিয়ার সরকার লকডাউনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইছে না। বরং সরকারের পক্ষ থেকে দেশটিতে বসবাসরত প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াও ধীরে ধীরে সর্বত্র গ্রিন পাস বাধ্যতামূলক করার পথে হাঁটছে। বিশেষত বার, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, পোস্ট অফিস ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে গ্রিন পাস কিংবা ৪৮ ঘণ্টা পূর্বের কোভিড নেগেটিভ সনদের প্রয়োজন হয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স অ্যাজেন্সি অনুমোদিত অন্যান্য ভ্যাকসিনের সাথে জনসন অ্যান্ড জনসনের উদ্ভাবিত করোনার টিকার পার্থক্য হচ্ছে এ টিকার এক ডোজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শতকরা ৬৬ ভাগ সুরক্ষা দেয়। অর্থাৎ এক ডোজের টিকা গ্রহণ করার সাথে সাথে গ্রিন পাসের জন্য আবেদন করা যায়। তাই স্লোভেনিয়ার সাধারণ জনগণের মাঝে দুই ডোজের ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিনের পরিবর্তে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে দেশটির সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ হাঙ্গেরি থেকে নতুন করে জনসন অ্যান্ড জনসন উদ্ভাবিত এক লক্ষ ডোজের করোনার টিকা আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল।

উল্লেখ্য যে, স্লোভেনিয়াতে এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ বিশ হাজার মানুষকে এ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দেশটিতে এ টিকা গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ পূর্বে জনসন অ্যান্ড জনসন উদ্ভাবিত এক ডোজের টিকা নেওয়ার পর ২০ বছর বয়সী এক যুবক ব্রেইন হেমারেজ ও রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার শিকার হন। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এছাড়াও এ টিকা গ্রহণকারী আরও এক তরুণীর মাঝে শারীরিক জটিলতা দেখা যায় যদিও বর্তমানে তিনি সুস্থ্য আছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে জরুরিভিত্তিতে এ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তবে স্লোভেনিয়া মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে আঠারো বছরের অধিক বয়সী যে কোনো নাগরিক জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনা ভ্যাকসিন নিতে পারতেন। যদিও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এ ভ্যাকসিনকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় নি।

এর আগে গত মার্চ মাসে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কায় স্লোভেনিয়ার সরকার অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করে। অ্যাস্ট্রোজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন উভয় ভ্যাকসিন ভাইরাল ভেক্টর ফর্মুলায় তৈরি। স্লোভেনিয়া সরকারের ভ্যাকসিন কার্যক্রম প্রকল্পের প্রধান উপদেষ্টা বোয়ানা বিওভিচ বলেছেন, জনসন অ্যান্ড জনসন উদ্ভাবিত এক ডোজের করোনা ভ্যাকসিনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে আমাদের আরও এক সপ্তাহ গবেষণার প্রয়োজন। এরপর হয়তো বা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো আদৌতে আমাদের এ ভ্যাকসিনের প্রয়োগ পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা উচিত কি না। তবে বর্তমানে আমরা ফাইজার ও বায়োএনটেক এবং মডার্না উদ্ভাবিত এমআরএনএ ভ্যাকসিনের সাহায্যে পুরো টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চাই।

স্লোভেনিয়া/ইবিটাইমস/এম আর

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »