বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: পুলিশ সুপার

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ৩১ আগস্ট বেলা ১১ টার সময় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) এর আয়োজনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিশু তরুণ এবং অভিভাবকদের করণীয় শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার  পুলিশ সুপার  মোঃ জাহিদুল ইসলাম। তিনি   বলেন, ‘বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক অন্যায় একে প্রতিহত করুন, এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ একটি মারাত্মক সমস্যা৷ ইউনিসেফের শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিবেদনে অনুসারে বাংলাদেশের ৬৪% নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে৷ বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে ছেলেদের বিবাহের বয়স নুন্যতম একুশ এবং মেয়েদের বয়স আঠারো হওয়া বাধ্যতামূলক৷ অশিক্ষা, দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারনে এ আইনের তোয়াক্কা না করে বাল্য বিবাহ হয়ে আসছে৷ বাল্য বিবাহের প্রধান কুফলঃ নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারনে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন৷ অন্যদিকে প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক৷ নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানষিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়৷ অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে৷ এছাড়া এতে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷ বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের উপায়ঃ বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনটি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচার/প্রচারনা করা প্রয়োজন৷ রেডিও, টেলিভিশনে ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করা যেতে পারে৷ গ্রাম পর্যায়ে বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশ এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বিবাহ বন্ধসহ মামলা রজ্জু করা যেতে পারে৷’
তিনি আরোও বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এ আইনে ২২টি ধারা আছে। তন্মধ্যে ১৯ ধারা বিশেষ শর্ত–সম্পর্কিত। বাল্যবিবাহ হলেই এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যতীত কোন অবস্তুায়ই নিকাহ রেজিষ্টার যেন বিবাহ নিবন্ধন না করেন, সেরূপ আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে৷ প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যেতে পারে৷ নবম ও দশম শ্রেনীর পাঠ্য বইতে এ বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হলে এর সুফল পাওয়া যাবে৷ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বেসরকারী সংস্থাগুলোও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে৷ সরকারের দিন বদলের অঙ্গীকার রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হবে৷ ২০২১ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩.৮ থেকে কমিয়ে ১.৫ করা হবে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা না গেলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না৷ বাল্য বিবাহ সংকুচিত করে দেয় কন্যা শিশুর পৃথিবী৷ আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে কন্যা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে৷ দেশে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে৷ তাই বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ এখন থেকেই৷’
পরিশেষে পুলিশ সুপার  বলেন, প্রতিটি থানাসহ পুলিশ সুপারের কার্যালয় নারী ও শিশু হেল্পডেক্স, উইমেন সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত নারী ও শিশু বান্ধব কর্মকর্তাগন নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করে চলেছেন। ইতোমধ্যে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী’র মধ্যকার মনোমালিন্যের অবসান ঘটিয়ে অসংখ্য ভাঙ্গা সংসার জোড়া লাগানো হয়েছে। অবুঝ শিশু ফিরে পেয়েছে তাদের বাবা মাকে। আমার নিজ উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গায় কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই গর্বিত পিতা-মাতার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ পুরস্কার। “কন্যা সন্তান বোঝা নয়, আশীর্বাদ কন্যা সন্তান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা সন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করে। কন্যা সন্তান জন্ম হলে ফোন করুন
উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথে।”  যা অদ্যবদি পর্যন্ত চলমান রয়েছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠির অর্ধেক নারী। এই বিপুল সংখ্যাক নারী পিছিয়ে থাকলে সামগ্রীক উন্নয়ন অসম্ভব। তিনি চুয়াডাঙ্গা সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু নির্যতান প্রতিরোধ এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরনে সহযোগিতা কামনা করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার  মোঃ সাজিদ হোসেন, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) এর সদসবৃন্দ, সাংবাদিকগন, শিশুকিশোর ও অভিভাবকবৃন্দ।
সাকিব হাসান/ইবিটাইমস /এম আর

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »