অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারন গ্রীষ্মকালীন ছুটি থেকে ফেরতদের জন্য

আগামী সোমবার ১৬ আগস্ট থেকে স্লোভেনিয়া অস্ট্রিয়াসহ তার সকল সীমান্তে ৩-জি নিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক করেছে

ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়া বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে প্রবেশ করেছে। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন এই গ্রীষ্মে অস্ট্রিয়া থেকে প্রায় দশ লাখ মানুষ ছুটি কাটাতে দেশের বাহিরে গিয়েছেন। এর মধ্যে সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ক্রোয়েশিয়া এবং তুরস্ক থেকে ফেরত অধিকাংশ মানুষের শরীরেরই করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে।

অস্ট্রিয়া ইতিমধ্যেই গত মাসে স্পেন,নেদারল্যান্ডস ও সাইপ্রাস থেকে বিমানে আগতদের বিমানবন্দরের বাধ্যতামূলক করোনার পিসিআর পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। গত জুলাই মাসের শেষের দিকে অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছিলেন অবকাশ থেকে ফেরত প্রতি তিনজনের একজন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী স্লোভেনিয়া অস্ট্রিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সাথে তার সীমান্তে থ্রী-জি(3-G-Regel) নিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে।

আজ স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে আগামী সোমবার ১৬ আগস্ট থেকে তার দেশের সীমান্তে করোনার ৩-জি নিয়ম নিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক করার কথা জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, অস্ট্রিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া যেতে হলে স্লোভেনিয়ার উপর দিয়ে যেতে হয়। ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেব সহ বিভিন্ন দ্বীপ অস্ট্রিয়ানদের  অবকাশ যাপনের জন্য খুবই পছন্দনীয়।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার জনপ্রিয় ফ্রি মেট্রো পত্রিকা Heute জানিয়েছেন গত সপ্তাহে, অস্ট্রিয়ার বেশিরভাগ বিদেশী-সংক্রান্ত করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে শনাক্ত ক্রোয়েশিয়া থেকে এসেছে, কিন্তু এখন অন্যান্য দেশ থেকেও ফেরত মানুষের শরীরেও করোনা ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে গত ক্যালেন্ডার সপ্তাহ ২৯/৩০ এর মধ্যে ৮৩৪ জন ক্রোয়েশিয়া ফেরত মানুষের শরীরে করোনার ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০১ জনে উঠে এসেছে।

এই গ্রীষ্মে এই পর্যন্ত এরই মধ্যে, ক্রোয়েশিয়া ভ্রমণ সম্পর্কিত ৯৬১ টি মামলা করোনা সংকট দলের পরিসংখ্যানের মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।  আগের সপ্তাহে সংশোধিত সংখ্যার ক্ষেত্রে, এটি আরও ১০৫টি কেস বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু গত সপ্তাহ পর্যন্ত শুধুমাত্র ক্রোয়েশিয়া করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে নেতৃত্বে ছিল। তবে এই সপ্তাহ থেকে অন্যান্য ছুটির দেশগুলিও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে তুরস্ক থেকে ফেরতদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ দ্বিগুণের বেশী আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহের পূর্বের সপ্তাহে তুরস্ক ফেরত ৮৭ জন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এই সপ্তাহে আক্রান্ত শনাক্তের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ জনে। ফলে দুই সপ্তাহে তুরস্ক ফেরত ১৮৩ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

ইতালি থেকে ফেরতদের মধ্যেও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতালি ফেরত অবকাশকারীদের মধ্যে গত সপ্তাহের ৬৮ জন থেকে বেড়ে এই সপ্তাহে তা ১৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ক্যালেন্ডার সপ্তাহের ৩১ এ স্পেন থেকে ২১৯ জন সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন,গ্রীস থেকে ১৮০ জন, বসনিয়া থেকে ১২৮ জন, জার্মানি থেকে ৭৬ জন, ফ্রান্স থেকে ৬৮ জন এবং উত্তর মেসিডোনিয়া থেকে ফেরত ৭৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিদেশী সংযোগের ক্ষেত্রে মামলার অনুপাতে হ্রাস রেকর্ড করেছে।  যদিও এটি ক্যালেন্ডার সপ্তাহে ৪০ শতাংশ ছিল, এইবার এটি “মাত্র” ৩০,৭১ শতাংশ। সবচেয়ে বড় অংশ পশ্চিম বলকান রাজ্যগুলিতে (৪০,২৮ শতাংশ, আগের সপ্তাহে ৫৬ শতাংশ) খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, এরপরে বাকি ইইউ ৩৮,৯৬ শতাংশ নিয়ে।  ইউরোপের বাকি অংশগুলি ১৪.৬৬ শতাংশ। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৬,৮০ শতাংশ।

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,০০৫ জন। তবে আজ কেহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন নি। আজ রাজধানী ভিয়েনায় করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২৮৭ জন,OÖ রাজ্যে ১৭৬ জন,NÖ রাজ্যে ১৪১ জন,  Steiermark রাজ্যে ১০২ জন, Salzburg রাজ্যে ৯৩ জন,  Burgenland রাজ্যে ৮৯ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৫৬ জন, Kärnten রাজ্যে ৪২ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১৯ জন নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকাদান সম্পন্ন করা হয়েছে ২৯,৩২৬ ডোজ এবং এই পর্যন্ত মোট টিকাদান সম্পন্ন করা হয়েছে ১,০১,১৪,৪৪৩ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৪ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫,৫ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৬৬,৮৯০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৭৫৩ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৬,৪৮,৪২০ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭,৭১৭ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৪৮ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২০৫ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসৌলেশনে আছেন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »