গত ১০ দিনে চলে গেলেন অন্তঃসত্ত্বা তিন চিকিৎসক
বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে জানা গেল গত ১০ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা তিন চিকিৎসক। মারা যাওয়া তিন জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন দুইজন এবং আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গ নিয়ে।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার (৩১ জুলাই) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. আলিজা আয়েশা। তিনি ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর আগে মৃত্যুবরণ করেন ডা. জারিন তাসনীম রিমি।
গত ২২ জুলাই করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের নবম ব্যাচের ছাত্রী ডা. জারিন তাসনীম রিমি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ডা. জারিন তাসনীম রিমি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ৪২ বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। তিন দিনের জ্বর নিয়ে ভর্তি হাসপাতালে হন তিনি। পরের দিন সকালে তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দুপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
গত ২০ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪২তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ডা. হালিমা আকন্দ। ডা. হালিমা আকন্দের ব্যাচমেট ডা. আনিস বিন আবদুর রাজ্জাক মেডিভয়েসকে জানান, ডা. হালিমা আকন্দ ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ ২০১৬ সালে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন৷ এরপর ২০২১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনী বিভাগে রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন৷
পারিবারিক সূত্র জানায়, ৪২তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা পরীক্ষাও অংশ নিয়েছিলেন ডা. হালিমা আকন্দ। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এর আগে অন্তঃসত্ত্বা ডা. হালিমা আকন্দের গর্ভজাত শিশু প্রিমেচিউরিটির জন্য NICU তে মারা যায়।
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য অনুযায়ী এই পর্যন্ত সারাদেশে ৩,০০০ হাজারের উপরে চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে এই পর্যন্ত প্রায় ১৮০ জনের মত চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। চিকিৎসকদের মৃত্যুতে চিকিৎসকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
এদিকে আজ ১ আগস্ট রবিবার বাংলাদেশে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১৪,৮৪৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২০ হাজার ৯১৬ জন। এ সময় ১৪ হাজার ৮৪৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারানো ২৩১ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩৯ জন এবং নারী ৯২ জন। আর তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪৯ জন এবং বাসায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ৬৪৯টি পরীক্ষাগারে ৪৯ হাজার ৫২৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৪৯ হাজার ৫২৯টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ৪৩২টি।
এ সময় সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৪ জন। এ নিয়ে দেশে সুস্থ হয়েছেন মোট ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৪২৩ জন রোগী।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ২৩ ভাগ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৪৭ ভাগ। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬৫ ভাগ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় ২০ হাজার ৯১৬ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১৪২ (৬৭ দশমিক ৬১ ভাগ) ও নারী ছয় হাজার ৭৭৪ জন (৩২ দশমিক ৩৯ ভাগ)।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস