যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এর পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের অভিযোগের ঈন্গিত রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রতি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (Central Intelligence Agency) যা সংক্ষেপে সিআইএ(CIA) নামেও পরিচিত, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন একটি বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। গতকাল সিআইএ- এর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থানীয় রেডিওর সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, এই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে যে প্রায় ২০০ শত কর্মকর্তা মাইগ্রেন সমস্যা এবং মাথা ঘুরা রোগের বিভিন্ন রহস্যজনক সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, তারমধ্যে প্রায় শতাধিক যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এর সদস্য এবং তাদের পরিবারের লোকজন রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স তাদের অনলাইন প্রকাশনায় যুক্তরাষ্ট্রের রেডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানান। সিআইএ প্রধান বার্নস, যিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের নেতৃত্বে প্রথম ক্যারিয়ারের একজন চৌকষ কূটনীতিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি জাতীয় পাবলিক রেডিওর সাথে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন যে, সিনড্রোমের কারণ এবং এর শনাক্ত করার জন্য তিনি তাঁর এজেন্সিটির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন ও অনুমোদন দিয়েছেন।
সিআইএ প্রধান রেডিওতে সাক্ষাৎকারে আরও নিশ্চিত করেছেন যে,তিনি এই ঘটনা তদন্তে একজন সিনিয়র সিআইএ এজেন্টকে দায়িত্ব দিয়েছেন যিনি একবার ওসামা বিন লাদেনকে খোঁজার দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি আরও যোগ করে বলেন, এই ঘটনার দ্রুত রহস্য উদঘাটনের জন্য মেডিকেল টিমের আকারকে তিনগুণ বাড়িয়েছেন। বার্নস আরও বলেন, এজেন্সিটি আট সপ্তাহ থেকে দু’সপ্তাহ কমিয়ে এই সময়টি করেছে যে সিআইএভুক্ত মানুষদের ওয়াল্টার রিড জাতীয় সামরিক মেডিকেল সেন্টারে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
মার্চ মাসে সিআইএর পরিচালক হওয়ার পর বার্নস তার প্রথম সাক্ষাৎকারে এনপিআরকে বলেছিলেন, “এটি একটি গভীর বাধ্যবাধকতা যে কোনও নেতার কথা আপনার লোকদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আমি ভাবি এবং এটিই আমি করতে দৃঢ়তার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
বর্তমানের এই ডিভাইনস, বমি বমি ভাব, মাইগ্রেন এবং মেমরি ল্যাপসের মতো লক্ষণগুলির সাথে হাভানা সিনড্রোমটির নামকরণ করা হয়েছে কারণ এটি সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে কিউবার মার্কিন দূতাবাসে অবস্থিত মার্কিন কর্মকর্তাদের এই রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত করেছিল।
বার্নস উল্লেখ করেছেন যে ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি প্যানেলে দেখা গেছে যে একটি গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হল “পরিচালিত শক্তি” বীম সিনড্রোমের কারণ হয়েছিল। সেখানে একটি “খুব দৃঢ় সম্ভাবনা” রয়েছে যে ইচ্ছাকৃতভাবে সিনড্রোম হয়েছিল এবং রাশিয়াও এর জন্য দায়ী হতে পারে বলেও উল্লেখ করে তিনি আরও যোগ করেন যে, তিনি আরও তদন্তের জন্য স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণে আটকে আছেন। তবে মস্কো সিআইএ এর এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এই ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যম ও বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রহস্যময় ‘হাভানা সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়েছেন। জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সাত মাসে কমপক্ষে ২০ জন কর্মকর্তার এই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, হাভানা সিনড্রোম-এ ব্রেন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে কেন এই লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তা কেউ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। ভিয়েনার ঘটনা প্রথম প্রকাশিত হয় গত শুক্রবার নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করে। তারা জানায় যে, বিষয়টি নিয়ে জোরালো তদন্ত চলছে। মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাইক্রোওয়েভ তেজষ্ক্রিয়তা থেকে এটা ঘটে থাকতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স অস্ট্রিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি উল্লেখ করে জানিয়েছে, এই ঘটনার মূল উদঘাটনের জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের সংগে যৌথভাবে কাজ করছে তারা।
এই ঘটনা প্রথম দেখা গিয়েছিলো ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কিউবার হাভানাতে। সেসময় হাভানায় কর্মরত মার্কিন ও কানাডিয়ান কূটনীতিকরা এই শারীরিক সমস্যার কথা জানান। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে মাথা ঘুরা, ভারসাম্যহীনতা, কানে কম শোনা, উদ্বেগ দেখা দেওয়া। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র দাবী করে, ‘সনিক অ্যাটাক’ বা শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টির মাধ্যমে হামলা চালিয়েছিলো কিউবা। তবে সেই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে কিউবা।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস