ইতিমধ্যেই বিশ্ব অলিম্পিকের প্রায় ৭০ জন ক্রীড়াবিদ করোনা শনাক্ত
স্পোর্টস ডেস্কঃ করোনার ডামা-ঢোলের মধ্যেই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে আজ থেকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে শুরু হচ্ছে জাকজমকহীন এবারের এই বিশ্ব অলিম্পিক প্রতিযোগিতা। বর্তমানে করোনাভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত সমগ্র জাপান। আর রাজধানী টোকিও ক্রমশ করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে। জাপানের রাজধানী টোকিওতে ইতিমধ্যেই করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আজ জাপানে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৫,০০০ হাজার। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি রাজধানী টোকিওতেই। করোনায় আক্রান্ত বিদেশী ক্রীড়াবিদদের বিশেষ ব্যবস্থায় যার যার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
অবশ্য আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে অলিম্পিকের পর্দা উঠার দুই দিন আগেই বুধবার সফটবল দিয়ে শুরু হয়ে গেছে প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব। এই গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকের ৩২তম আসর হওয়ার কথা ছিল গত বছর। করোনার কারণে তা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই প্রাণঘাতী ভাইরাসের থাবা এতটুকুও দুর্বল হয়নি, তারপরও হচ্ছেই অলিম্পিক।
টোকিও থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বিশ্ব অলিম্পিকে অংশ গ্রহণ করতে আসা প্রায় ৭০ জন ক্রীড়াবিদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বিশ্ব অলিম্পিকে অংশ গ্রহণ করতে স্বাগতিক জাপান সহ বিশ্বের ২০৬ টি দেশের প্রায় ১১,০০০ হাজার প্রতিযোগী বর্তমানে টোকিওতে অবস্থান করছেন। আজ ২৩ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ৫০টি ডিসিপ্লিনে ৩৩টি ক্রীড়ায় লড়াইটা হবে ৩৩৯টি পদকের জন্য। নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিযোগিতার ৪২টি স্থান ও স্টেডিয়াম।
পাঁচ বৎসর পূর্বে গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকের ৩১ তম আসরের আয়োজক ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো অলিম্পিকের অবকাঠামো ও স্টেডিয়াম নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছিল। তবে মহামারি একপাশ সরিয়ে রাখলে বলা চলে, টোকিও একেবারে প্রস্তুত। তাদের স্টেডিয়াম, গেমস ভিলেজ ও অবকাঠামো
সত্যিই দেখার মত। করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বগতির কারণে গেমস শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে দর্শক ছাড়াই অলিম্পিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ টোকিওতে চলছে জরুরি অবস্থা। মার্চেই আয়োজকরা এক ঘোষণায় জানায়, জাপানে বিদেশি কোনও দর্শক থাকবে না। দেশের দর্শকদের নিয়েই অলিম্পিক আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তাও হচ্ছে না। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতা করতে হবে অ্যাথলেটদের।
অলিম্পিক এর আগে আর কখনও স্থগিত হয়নি। কিন্তু দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় তা বাতিল হয়েছিল। ১৯১৬ সালের গেমস হওয়ার কথা ছিল জার্মানির বার্লিনে, কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইতালি ও ব্রিটেনে নির্ধারিত শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসও বাতিল হয়। এবারের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য বিশ্ব অলিম্পিকের চিরাচরিত অনেক নিয়ম বাতিল করা হয়েছে।
টোকিওর এই বিশ্ব অলিম্পিকে বাতিলের মধ্যে অন্যতম হল,হাতে মশাল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ। প্রচলিত প্রথা ভেঙে এবারের অলিম্পিকে প্রথমবার বিজয়ী অ্যাথলেটকে কোনও কর্মকর্তা মেডেল পরিয়ে দেবেন না। অ্যাথলেটরা নিজেরাই নিজেদের মেডেল পরবেন। মাঠে উপস্থিত প্রত্যেককে ক্রীড়াবিদরা মাস্ক পরে থাকতে হবে। কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না কিংবা হাতও মেলাতে পারবেন না। এমনকি অ্যাথলেটদের কাছাকাছি আসা ঠেকাতে গেমস ভিলেজে বানানো হয়েছে অ্যান্টি সেক্স বেড। যেখানে দুজন অ্যাথলেট শুলেই ভেঙে যাবে খাট।
এবারের ৩২ তম গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকের মাসকটের নাম মিরাইতোয়া। জাপানি শব্দ মিরাইতোয়া মিরাই ও তোয়া শব্দের সমন্বয়ে নামকরণ হয়েছে। মিরাই অর্থ ভবিষ্যৎ ও তোয়া মানে চিরস্থায়ী। পুরো শব্দের মানে চিরস্থায়ী ভবিষ্যৎ। ইতিপূর্বে জাপানের রাজধানী টোকিওতে ১৯৬৪ সালে আরও একবার গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
পরের তিনটি গ্রীষ্মকালীন আসর হবে ফ্রান্সের প্যারিস ২০২৪ সালে,যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস ২০২৮ সালে এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে ২০৩২ সালে।
এবারের গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকে বেসবল ও সফটবল ১৩ বছর পর ফিরেছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে কারাতে, সার্ফিং, স্পোর্ট ক্লাইম্বিং ও স্কেটবোর্ডিং। নতুন ইভেন্টও যুক্ত হয়েছে- থ্রি অন থ্রি বাস্কেটবল ও দুই খেলোয়াড়ের ম্যাডিসন সাইক্লিং। অবশ্য বিজয়ীদের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কোনও প্রাইজমানি রাখেন নি। তবে অনেক দেশের ফেডারেশন তাদের পদকজয়ীদের আর্থিক পুরস্কার দিয়ে থাকে।
নীল, হলুদ, কালো, সবুজ ও লাল রঙয়ের তিনটি রিং অলিম্পিকের প্রতীক, যার নকশা করেছেন এই প্রতিযোগিতার জনক পিয়েরে দে কুবের্তো। যে রঙগুলো বাছাই করা হয়েছে তা বিশ্বের প্রত্যেক দেশের পতাকার কোনও একটি রঙয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে। একেকটি রঙ দুই মেরুর মহাদেশ ছাড়া পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে।
অস্ট্রিয়া থেকে এই বৎসর মোট ৭৫ জন ক্রীড়াবিদ টোকিওর এই গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে বর্তমানে টোকিওর অলিম্পিক পল্লিতে অবস্থান করছেন। অস্ট্রিয়ার প্রতিযোগীরা একাধিক ইভেন্টে পদকের জন্য প্রতিদ্বন্ধীতা করবেন।
বাংলাদেশ টোকিওর এই গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকে ইতিহাসে দশমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, গত শনিবার জাপানে পৌঁছেছেন তীরন্দাজ রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী ও শ্যুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি। তাদের সঙ্গে আছেন আর্চারির টিম লিডার কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল, রোমান ও দিয়ার প্রশিক্ষক মার্টিন ফ্রেডেরিক ও শ্যুটিংয়ের প্রশিক্ষক গোলাম শফিউদ্দিন খান। ধাপে ধাপে টোকিও পৌঁছাবেন সুইমিংয়ের আরিফুল ইসলাম, জুনাইনা আহমেদ ও্ অ্যাথলেটিকসের আব্দুল্লাহ হেল কাফি। সব মিলিয়ে অলিম্পিকের ৩২তম আসরে অংশগ্রহণ করছে ৬ বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ। ২৩ জুলাই টোকিও অলিম্পিকের মঞ্চে প্রথম নামবেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। আব্দুল্লাহ হেল বাকি ২৫ জুলাই মেন’স ১০ মিটার এয়ার রাইফেল প্রতিযোগিতায় নামবেন।
উল্লেখ্য যে,১৯৮৪ সাল থেকে এই পর্যন্ত নয়টি গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিক গেমসে অংশ নিলেও বাংলাদেশ এখনও কোনও পদকও পায়নি।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস /এম আর