ঈদুল আযহা, করোনায় কেড়ে নিল আনন্দ

 মাহবুবুর রহমান, ভিয়েনা, অষ্ট্রিয়াঃ আগামী ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার সৌদি আরব এবং ইউরোপসহ মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এবং ২১ জুলাই বুধবার বাংলাদেশ সহ এশিয়ার অধিকাংশ দেশে পবিত্র ঈদুল আযহা। করোনার দুর্যোগে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। মৃত্যুর মিছিলের মধ্য দিয়ে হাঁটছি আমরা। স্বজন হারানো ব্যাথায় কাতরাচ্ছে দুনিয়া। তারপরও অবিরাম চলেছি এই দুর্যোগ মোকাবেলায়। করোনা মহামারী হয়তো একদিন এই মানুষের কাছেই নতি স্বীকার করবে। ততোক্ষণে আমাদের অনেক কিছু হারাতে হবে। করোনার সঙ্গে সঙ্গী হয়েই আগামী দুঃসময় পাড় করবো আমরা প্রিয়জনকে কোনভাবেই কাছাকাছি থেকে জড়িয়ে ধরতে পারবনা । করোনা আমাদের এতটাই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। প্রিয় স্বজনের নিঃশ্বাসকেও আমরা আজ বিশ্বাস করতে পারছি না। তারপরও আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাক্স পরেই সবার মঙ্গল কামনা করবো। বিশ্বের সব মানুষের মুক্তির কথা বলবো।

মহান আল্লাহতালার উদ্দেশে পশু কোরবানি দেয়ার মহিমান্বিত দিন। আরবি শব্দ ঈদ-এর অর্থ আনন্দ উৎসব এবং আযহার অর্থ পশু জবাই করা। মুসলমানদের জন্য ঈদুল আযহা একই সঙ্গে পশু কোরবানি দেয়ার এবং উৎসব করার দিন। কোরবানির উদ্দেশ্য আল্লাহতা’লার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা। কোরবানি দেয়ার প্রথম নির্দেশ এসেছিল মুসলিম জাতির পিতা হজ্বরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে। তিনি আল্লাহকে বেশি ভালোবাসেন ও মান্য করেন, নাকি সন্তান গুরুত্ব তাঁর কাছে বেশি- সেটা পরীক্ষা করাই ছিল উদ্দেশ্য। এজন্য তাঁকে আদরের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহতা’লার উদ্দেশে কোরবানি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী ইবরাহিম (আ.) প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, ইসমাইল (আ.)-ও সানন্দে সম্মত হয়েছিলেন। দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন আল্লাহ। পুত্রের গলদেশে ছুরি চালানো শুরু করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ইবরাহিম (আ.)-কে এই সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলা হয়েছিল, তিনি যেন ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি দেন। সে অনুযায়ী পশুই কোরবানি দিয়েছিলেন হজ্বরত ইবরাহিম (আ.)। সেই থেকে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করে আসছেন। বিধানটি চূড়ান্ত হয়েছে শেষ রাসূল হজ্বরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে।

দিনটি উপলক্ষে পশু কোরবানিই অবশ্য একমাত্র করণীয় নয়। তার আগে পবিত্র হজ্ব কে মুসলমানদের জন্য ফরজ বা অবশ্যপালনীয় করা হয়েছে। হজ্ব পালিত হয় হিজরি সালের শেষ মাস জিলহজ্ব মাসে। এ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা গিয়ে পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমায় সমবেত হন। ৮ জিলহজ্ব থেকে তিন দিন ধরে তারা মিনা, মুযদালিফা ও আরাফাতের ময়দানসহ নির্ধারিত স্থানগুলোতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বলতে থাকেন, লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। তারপর আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবায় গিয়ে চারদিকে সাতবার ঘুরে তাওয়াফ করতে হয়। সাঈ করার জন্য যেতে হয় সাফা ও মারওয়া নামের দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে, যেখানে শিশু ইসমাইল (আ.)-কে পানি খাওয়ানোর জন্য মা হাজেরা ছুটোছুটি করেছিলেন এবং যেখানে আল্লাহর কুদরতে তৈরি হয়েছিল জমজম কূপ। সাতবার সাঈ করার তথা সাফা ও মারওয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করার পাশাপাশি আবে জমজম বা জমজমের পানিও পান করেন হজ্বকারীরা। সবশেষে আসে কোরবানির পালা, উদযাপিত হয় ঈদুল আযহা। পবিত্র এ দিনটিতে পশু কোরবানি দেয়ার আগে দু রাকাত ওয়াজিব সালাত তথা নামায আদায় করতে হয়।

এবছর হজ্ব পালিত হবে সোমবার। সৌদি আরব এবং ইউরোপসহ মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে  মঙ্গলবার উদযাপিত হবে ঈদুল আযহা । বলা দরকার, ঈদুল আযহা কেবলই পশু কোরবানি  দেয়ার এবং উৎসব করার দিন নয়। দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহতা’লার প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আনুগত্য তৈরি করা এবং স্বার্থচিন্তার উচ্ছেদ করে আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহতা’লার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা। সুতরাং কেবলই পশু কোরবানি দেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরিবর্তে মুসলমানদের উচিত নিজেকে আল্লাহতা’লার কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করার এবং তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। একই কারণে পশু কেনা উচিত সৎপথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। পশুর গোশ্ত যত বেশি সম্ভব আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে। এভাবে সব মিলিয়েই কোরবানি তথা আত্মত্যাগ করার শিক্ষা দেয় পবিত্র ঈদুল আযহা।

আমরা আশা করতে চাই, বাংলাদেশের মুসলমানরাও দিনটির মূল শিক্ষাগুলো অনুধাবন করবেন এবং চেষ্টা করবেন যাতে প্রতিবেশি ও স্বজনসহ অন্যরাও উৎসবে শরিক হতে পারেন।যদিও এ বছর মহামারী করোনার জন্য এ উৎসব সম্ভব হবেনা, তবুও মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা করি এই ঈদুল আযহার উছিলায় আগামী পৃথিবী যেন করোনা নামের সকল অশুভ ছায়াকে ম্লান করে দিয়ে নির্মল আনন্দে ভরিয়ে দেন,আমিন । পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দৈনিক ইউরো সমাচারের সকল পাঠক, লেখক, সহকর্মী সংবাদদাতা, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীর প্রতি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক ।

মাহবুবুর রহমান, এডিটর ইন চিফ /ইবিটাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »