জার্মানিতে আকস্মিক বন্যায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু, নিখোঁজ এক হাজারেরও বেশি

ইউরোপ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থানরত সরকার প্রধান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল শতাব্দীর ভয়াবহ এই বন্যাকে দেশের জন্য একটি বড় জাতীয় ট্র্যাজেডী বলে বর্ণনা করেছেন।

জার্মানির বহুল জনপ্রিয় পত্রিকা WELT সর্বশেষ তথ্যে জানিয়েছেন এই ঝড় ও বন্যায় এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৮১ জন নিহত, ১০০০ এরও বেশি নিখোঁজ এবং কয়েক বিলিয়ন ইউরোর আর্থিক লোকসান হয়েছে। পত্রিকাটি সর্বশেষ খবরে জানিয়েছেন জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পশ্চিম জার্মানির বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় এলাকায় উদ্ধার কাজে কয়েকশত সেনা সদস্যকে নিয়োজিত করেছেন।স্থানীয় প্রশাসন আরও জানান,এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছেন, জার্মানির কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বলেছে দেশের পশ্চিমে ব্যাপক ঝড় ও বন্যায় এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৯ জন মারা গেছেন এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর অহরওয়িলারের আশেপাশে অঞ্চলে কমপক্ষে ১৯ জন মারা গেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট এবং উত্তর রাইন- ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যগুলির সাথে পশ্চিম ইউরোপের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হয়।

পশ্চিম জার্মানির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম আরও জানান, আরও উত্তরের নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া(NRW) রাজ্যের ইউস্কিরচেন জেলাতে আরও ১৫ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিম জার্মানির সাবেক রাজধানী বন এর দক্ষিণে শুল্ড পৌরসভায় আরও চারজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং এই এলাকার অনেক বাড়িঘর বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে। এই এলাকার অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

জরুরী উদ্ধারকারী কর্মীরা বিপন্ন ভবনগুলিতে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অব্যাহত রেসকিউ অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে। NRW রাজ্যের অ্যাল্টেনা এবং ওয়ারডোহল শহরে ডিউটি ​​লাইনে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দুইজন দমকলকর্মী নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন। সমস্ত উপদ্রুত অঞ্চলে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গাতে মানুষদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তাই শতাব্দীর এই আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন জার্মানি কর্তৃপক্ষ।

জার্মানির বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানিয়েছেন, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ এই অঞ্চলগুলির পুরো অংশ, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। জার্মানি সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারগুলি বাড়িঘরের ছাদে আশ্রয় নেয়া মানুষদের উদ্ধার করতে দেখা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থানরত জার্মানির সরকার প্রধান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল এই ঝড় ও আকস্মিক বন্যাকে একটি মানবিক “বিপর্যয়” বলে উল্লেখ করেছেন। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির জন্য সবচেয়ে বড় একটি “ট্র্যাজেডী” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তার সরকার “সবচেয়ে শক্ত পরিস্থিতিতে নিজের জীবন থেকে সমস্ত কিছু করবে, জীবন বাঁচাবে, বিপদ রোধ করবে এবং দুর্ভোগ লাঘব করবে”। তিনি তার সফর সংক্ষিপ্ত করে আজই বার্লিনে ফিরছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জার্মানির এই শতাব্দীর ভয়াবহ ঝড় ও বন্যার ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

“রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেটের রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মালু ড্রায়ার এএফপি কে বলেছেন,” আমরা কখনও এ জাতীয় বিপর্যয় দেখিনি, এটি সত্যই ধ্বংসাত্মক। ” ‘আমরা এর আগে কিছুই দেখিনি’: পশ্চিমাঞ্চলের একটি জার্মান শহর কীভাবে বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জার্মানির শহর মায়েনের বাসিন্দারা হতবাক ও অসহায় হয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিল কারন শতাব্দীর এই ঝড়,ভারী বর্ষণের সৃষ্ট বন্যার পানির স্রোতে তাদের বাড়িঘর নিমজ্জিত করেছে এবং মানুষ সহ অনেক বাড়িঘর পানির সাথে ভেসে গেছে।

পশ্চিম জার্মানির আইফেল আগ্নেয়গিরির অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশী আঘাত হানে। এই অঞ্চলে এই পর্যন্ত ৪২ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রাইন নদীর একটি ছোট শাখা নদীর পানি ফুলে ফুসে উঠে তার দুইকূলের বাসিন্দাদের রাতের অন্ধকারে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »